মেয়ে হতে চেয়ে বাবার বিরুদ্ধে আদালতে ছেলে
-ও আর একটি প্রেমের গল্প। যুবকটির দাবি, তিনি পুরুষের কাঠামোয় বন্দি এক মহিলা। কৈশোর থেকেই পরিবারের দেওয়া নাম বিধান বরুয়া নয়, নিজেকে স্বাতী বলে ভাবতেই ভালবাসেন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুরোপুরি মহিলা হয়ে ওঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বাবা-মা। শেষ অবধি পরিবারের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছেন ২১ বছরের বিধান।
গুয়াহাটির ছেলে বিধান। ছোট থেকেই প্রকৃতিগত ভাবে নিজেকে মেয়ে বলেই মনে করেন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় জানতে পারেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন সম্ভব। বাবা-মায়ের কাছে সেই ইচ্ছার কথা তখনই প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সামাজিক লজ্জার আতঙ্কে বিধানের প্রস্তাব উড়িয়ে দেন তাঁরা। জোর করার ফলে, জোটে মারধর। এর পর থেকেই তিল তিল করে টাকা জমানো শুরু। স্কুলের টিফিনের টাকা, কলেজের হাতখরচা, ছোটখাটো কাজ করে পাওয়া টাকা মিলিয়ে তাঁর ভাঁড়ারে লক্ষাধিক টাকা জমা হয়েছে এখন।
লিঙ্গ পরিবর্তনের প্রভাব নিতে পারবেন কি?
২ মার্চ মনোবিদের কাছে পরীক্ষায় বসেছিলেন বিধান। ফল ইতিবাচক হওয়ার পরে আর অপেক্ষা করেননি। এর মধ্যে কলেজে পড়াশোনা চালানোর ফাঁকেই বিমানবাহিনীর এক ফ্লাইট লেফটেন্যান্টের প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। ফলে মহিলা হয়ে ওঠার আগ্রহ আরও বেড়েছে। মুম্বইয়ের সইফি হাসপাতালে যোগাযোগ করে ১৭ এপ্রিল বিধানের অস্ত্রোপচারের দিন ধার্য হয়। বাড়িতে অশান্তি বাড়তে থাকায় ৩১ মার্চ বিধান বাড়ি থেকে পালিয়ে পাড়ি দেন মুম্বই। তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। বাবা সুপ্তিরঞ্জন বরুয়া ছেলের হদিস জানতে পেরে অস্ত্রোপচার আটকে দিয়েছেন। ক্ষিপ্ত ছেলে এখন বাবার বিরুদ্ধেই বম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।
বিধানের দাবি, বাবা তাঁকে ও তাঁর প্রেমিককে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। এমনকী আলফাকে দিয়ে অপহরণ করানোর হুমকিও দিয়েছেন সুপ্তিবাবু, এমনই দাবি বিধানের। অভিযোগ, হাসপাতালে যে চিকিৎসকের অস্ত্রোপচার করার কথা ছিল, তাঁকেও শাসানো হয়েছে। বিধান বলেন, “ছোট থেকে আমি পরিবারের সকলের কাছে লজ্জার পাত্র। মেয়েলি স্বভাবের জন্য সকলের কাছে গালাগালি খেতে হয়েছে। মার খেয়েছি। শেষ অবধি আমায় ভালবাসে এমন কাউকে পেয়েছি। আর ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাব না।”
হাসপাতালের তরফে চিকিৎসক কল্পেশ গাজিওয়ালা জানান, এটি জীবন বদলে দেওয়ার মতো অস্ত্রোপচার। আদালতের রায় না পেলে তাঁরা বিধানের অস্ত্রোপচার করবেন না। বিধানের আইনজীবী এজাজ আব্বাস নকভি, বম্বে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মোহিত শাহ্র বেঞ্চে জানিয়েছেন, বিধান সাবালক। স্বেচ্ছায় লিঙ্গ পরিবর্তন করতে চাইছেন তিনি। কিন্তু বিধানের বাবা তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। সন্তানের মৌলিক অধিকারের উপরে হস্তক্ষেপ করছেন। প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। প্রধান বিচারপতি মোহিত শাহ্ এবং বিচারপতি এন এম মজুমদার এই মামলাটি বিচারপতি এস এফ ভাজিফদার ও এ আর যোশির এজলাসে পাঠিয়েছেন। ৩০ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
বিধানের বাবা, রেলকর্মী সুপ্তিবাবু সাংবাদিকদের জানান, তিনি ছেলেকে বলেছিলেন, স্নাতক হওয়ার পরে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে। তাঁর দাবি, “বিধান বাড়িতে অশান্তি করে। আমাকেও সমাজের কাছে জবাব দিতে হয়। আমিও আদালতে উপযুক্ত জবাব নিয়ে হাজির হব।” মুম্বইয়ে যে মনোবিদ বিধানকে পরীক্ষা করেছেন, সেই ডঃ ইউসুফ মাচিসওয়ালা বলেন, “বিধানের ‘জেন্ডার ডিসফোরিয়া’ রয়েছে। বাবা-মার উচিত সমস্যাটি মননশীল ভাবে বোঝা। বিধানকে জোর করে পুরুষ করে রাখলে সে আত্মহত্যা করতে পারে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.