ছত্তীসঢ়ের জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেনন অপহরণ-কাণ্ডে সকলের নজর এখন টারমেটলার গভীর জঙ্গলে। শনিবার রাত পর্যন্ত সেখানে দুই মধ্যস্থতাকারী বি ডি শর্মা এবং জি হরগোপালের সঙ্গে মাওবাদী নেতৃত্বের আলোচনা চলছে বলে জানা গিয়েছে। তবে রাতে মাওবাদীদের তরফে কোনও বার্তা আসেনি। রাজ্য সরকারের তরফেও এ দিন নতুন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
এর মধ্যেই শনিবার মধ্য রাত থেকে ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডে ৪৮ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছে মাওবাদীদের দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটি। ‘অপারেশন গ্রিন হান্ট’ বন্ধ এবং স্থানীয় মানুষদের গ্রেফতার করে হেনস্থার প্রতিবাদে মাওবাদীদের এই বন্ধ বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি এ দিন দোরনাপাল এবং দন্তেওয়াড়ার বুচেলি থেকে মাওবাদীদের বেশ কিছু লিফলেট উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গত শনিবার মাঝিপাড়া গ্রাম থেকে মাওবাদীরা অপহরণ করে সুকমার জেলাশাসক মেননকে। এ দিন সকালে মাওবাদীদের তরফে প্রস্তাবিত দুই মধ্যস্থতাকারী রায়পুর থেকে হেলিকপ্টারে সুকমা পৌঁছন। সেখান থেকে গাড়িতে করে চিন্তলনাড়। সেখানে বি ডি শর্মা বলেন, “দু’দফায় সরকারি মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যা কথা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই মাওবাদীদের সঙ্গে কথা হবে।” |
এর পরেই ছবিটা দ্রুত পাল্টে যায়। মধ্যস্থতাকারীদের ভার নিয়ে নেয় মাওবাদীরা। চিন্তলনাড় থেকে দু’টি মোটরবাইকে বি ডি শর্মা এবং হরগোপালকে নিয়ে মাওবাদীরা টারমেটলার দিকে রওনা হয়। পিছু নেয় সংবাদমাধ্যম। কিন্তু মাওবাদীরা সাফ জানিয়ে দেয় সংবাদমাধ্যম যেতে পারবে টারমেটলা পর্যন্তই। তার বেশি এক পা-ও নয়। চিন্তলনাড়ে মাওবাদীরা সাংবাদিকদের ব্যাগ ও শরীরী তল্লাশি নেয়। তাঁদের মোটরবাইকগুলিও পরীক্ষা করে দেখা হয়। এখন চিন্তলনাড় এবং টারমেটলা এলাকায় মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে টারমেটলার জঙ্গলের রাস্তায় জায়গায় জায়গায় জল জমে রয়েছে। সেই কারণে মাওবাদীদের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা সেরে বি ডি শর্মা এবং জি হরগোপালের ফিরে আসতে সময় লাগবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
টারমেটলাকে কেন কার্যত মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল বলা হয়, শনিবার আরও এক বার তার প্রমাণ মিলেছে। টারমেটলা পৌঁছনোর পরে দুই মধ্যস্থতাকারীকে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে বেশ কিছুটা পথ হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এলাকাটি বন্ধুর হওয়ায় ধুতি-জামা পরা বি ডি শর্মা হাঁটতে থাকেন লাঠির সাহায্যে। জামা-প্যান্ট পরা হরগোপালের হাতে ছিল মোটা ফাইল। তাঁদের পাহারায় ছিল সশস্ত্র মাওবাদীরা। অদূরে গাছের তলায় তলায় দাঁড়িয়েছিল মাওবাদীদের আরও বেশ কয়েকটি দল। বিভিন্ন সূত্রের খবর, শনিবার ওই দুই মধ্যস্থতাকারীর নিরাপত্তার জন্য মাওবাদীরা তিনটি স্তরে সশস্ত্র সদস্যদের পাহারায় রেখেছিল। অবশ্য শুধু এই দু’জনের জন্যই নয়, মনে করা হচ্ছে বিজয় মারকামের মতো মাওবাদীদের দণ্ডকারণ্য ডিভিশনাল কমিটির প্রথম সারির নেতারা আলোচনায় সামিল হতে পারেন বলেও এই বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা। কিছুটা পথ হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরে ওই দু’জনকে ফের দু’টি মোটরবাইকে তোলা হয়। এর পরে দুই মধ্যস্থতাকারী মিলিয়ে যান গভীর জঙ্গলে। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে এই টারমেটলাতেই মাওবাদী হামলায় সিআরপিএফ এবং ছত্তীসগঢ় পুলিশের ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
শনিবার রাতে রায়পুর থেকে সরকারি মধ্যস্থতাকারী নির্মলা বুচ ফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, “আমরাও অপেক্ষা করছি ও দিকের খবরের জন্য।” তবে টারমেটলায় যে আলোচনায় হোক না কেন, মাওবাদীদের দাবি মেনে সরকার কত জনকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি দেবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ ছত্তীসগঢ়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নানকিরাম কাঁওয়ার বলেন, ‘‘যে সব বন্দিকে মাওবাদীরা ছাড়তে বলেছে, তাদের মধ্যে অনেকেই সাজাপ্রাপ্ত। কাজেই তাদের মুক্তির ব্যাপারটি শুধু সরকারের উপর নির্ভর করছে না।” মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহও প্রায়ই একই সুরে কথা বলেছেন। ফলে চটজলদি কোনও সমাধানসূত্র মিলবে বলে মনে করছে না কোনও মহলই।
এর মধ্যেই সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, ঝিনা হিকাকা মুক্ত হওয়ার পর ওড়িশায় শুরু হয়েছে মাওবাদী দমন অভিযান। শুক্রবার রাতে কন্ধমলের জঙ্গলে মাওবাদীদের সঙ্গে পুলিশের গুলির লড়াই হয়। লড়াইয়ে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে মাওবাদীদের ফেলে যাওয়া একটি জেনারেটর উদ্ধার করেছে পুলিশ। |