রাজ্যসভায় রেখার মনোনয়নের পর থেকেই বাতাসে ঘুরছিল ‘সিলসিলা’র স্মৃতি। রাজ্যসভার অলিন্দে জয়া বচ্চন-রেখা মুখোমুখি হবেন কি না, ভেবেই আম-ভারতীয় টগবগ করে ফুটছিলেন! সেই আবহে আজ বিস্ফোরণ ঘটালেন অমিতাভ বচ্চন!
মুম্বইয়ের এক অনুষ্ঠানে অমিতাভ সোজাসুজি বলে দিলেন, রেখার সঙ্গে আবার অভিনয় করতে তাঁর কোনও অসুবিধাই নেই! “গল্পটা যদি ভাল হয়, আমাদের যদি পছন্দ হয়, একসঙ্গে কাজ করব না কেন?”
অথচ কে না জানে, অমিতাভ যত সহজ কণ্ঠে এ দিন কথাগুলো বললেন, আদপেই তত সহজ ছিল না বাস্তব পরিস্থিতি। একসঙ্গে ওঁদের শেষ ছবি যশ চোপড়ার ‘সিলসিলা’। ১৯৮১ সালের কথা। তার পর জীবন গিয়েছে চলে তিরিশ বছরের পার! দেখাও হয়েছে মাঝেমধ্যে! কথাবার্তা কিন্তু হয়নি বললেই চলে। ‘সিলসিলা’-পরবর্তী দু’দশকে অমিতাভ-জয়া আর রেখা একে অন্যকে এড়িয়েই চলেছেন। এমনকী ‘কুলি’-র শু্যটিং করতে গিয়ে অমিতাভের অসুস্থতার সময়েও জয়ার কাছে রেখা অমিতাভের কুশল জানতে চেয়েছেন বলে শোনা যায়নি। ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র হাত ধরে বলিউডে অমিতাভের পুনরুত্থানের পরে তাঁর সঙ্গে নতুন করে জুড়ি বেঁধেছেন পুরনো নায়িকাদের অনেকেই। অমিতাভ-জয়া (কভি খুশি কভি গম), অমিতাভ-হেমা (বাগবান, বীর-জারা), অমিতাভ-শর্মিলা (বিরুধ)...। রেখাও তো পর্দা কাঁপিয়েছেন কখনও আইটেম নম্বরে (পরিণীতা), আবার কখনও হৃতিকের মা হয়ে (কোই মিল গয়া)! |
কিন্তু অমিতাভ-রেখা একসঙ্গে? প্রশ্নই ওঠেনি। অমিতাভ অভিনীত ছবির প্রিমিয়ারে গিয়ে রেখা অভিষেক বচ্চনের কথা বলেছেন, কিন্তু অমিতাভের সঙ্গে নয়। বলিউডের বিভিন্ন পুরস্কার-রজনীতে উপস্থিত থেকেছেন ওঁরা। কিন্তু মুখোমুখি হতে চাননি। অমিতাভ মঞ্চে উঠলে টিভি ক্যামেরা অনিবার্য ভাবে রেখার দিকে তাকিয়েছে, রেখা মঞ্চে উঠলে অমিতাভের দিকে। কিন্তু ওঁরা শীতল দূরত্ব বজায় রেখেই গিয়েছেন।
শীতল দূরত্বই কিন্তু। তার বেশি কিছু নয়। পরস্পরের প্রতি অসৌজন্য বা অশ্রদ্ধা প্রকাশ পায়, এমন কোনও কাজ করেননি। এর মধ্যে অভিষেক-ঐশ্বর্যা একত্রে অভিনয় করেছেন ‘উমরাও জান’ ছবিতে। ছবি দেখে অমিতাভ স্পষ্ট বলেছিলেন, আগের ছবিটা অনেক ভাল ছিল। রাজ্যসভায় রেখার মনোনয়ন নিয়ে এত রকম গুঞ্জনের মধ্যে অমিতাভ কোনও টুইট বা ব্লগ লেখেন কি না, হাঁ করে তাকিয়ে ছিল সংবাদমাধ্যম। নিরাশ করেছেন অমিতাভ।
এ দিনের অনুষ্ঠানে তাই সাংবাদিকরা তৈরি হয়েই ছিলেন। সচিন-রেখার মনোনয়ন নিয়ে অবধারিত প্রশ্ন ছুটে এল। পিটিআই জানাচ্ছে, অমিতাভ প্রথমে সরাসরি নাম না করেও রেখার মনোনয়নকে অভিনন্দনই জানান। বলেন, “যাঁরা মনোনীত হয়েছেন, তাঁরা তার যোগ্য বলেই হয়েছেন। এটা খুবই সম্মানের ব্যাপার।” প্রতি বছরই যে রাষ্ট্রপতি শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে নানা ব্যক্তিত্বকে রাজ্যসভার সাম্মানিক সদস্য হিসেবে মনোনীত করেন, সেটা মনে করিয়ে দিয়ে তাঁর মন্তব্য, “নার্গিসজিও তো রাজ্যসভায় মনোনীত হয়েছিলেন!” রেখাকে পরোক্ষ ভাবে নার্গিসের সঙ্গে তুলনা করে অমিতাভ কি তাঁর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধাই জানালেন না? এই জল্পনাতেই তখন মুখর সাংবাদিকরা। ঠিক তার পরেই এক প্রশ্নের উত্তরে অমিতাভ জানিয়ে দিলেন, রেখার সঙ্গে ফের অভিনয় করতে আপত্তি নেই তাঁর! উপযুক্ত চিত্রনাট্য পেলে তিনি ভাবতেই পারেন একসঙ্গে কাজ করার কথা!
এ কি শুধুই কথার কথা? ইন্ডাস্ট্রির অনেকের মতে, “অমিতাভ মুখে যা-ই বলুন, বাস্তবে এমনটা আর সম্ভব নয়!” কিন্তু অ-সম্ভবও তো সম্ভব হয় কখনও কখনও! ‘দো আনজানে’, ‘মুকাদ্দর কা সিকন্দর’, ‘মিস্টার নটবরলাল’, ‘সুহাগ’ ইত্যাদি পেরিয়ে যে কিংবদন্তি রসায়ন ‘সিলসিলা’য় এসে নিজেদের উপরে দাঁড়ি টেনে দিয়েছিল, সেটা আবার পর্দায় ফিরে আসুক এমন কে না চায়? |