যে চিকমাগালুর ১৯৭৮ সালে ইন্দিরা গাঁধীকে জিতিয়েছিল, সেখান থেকেই আরও এক বার কর্নাটকে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে কংগ্রেস। আজ টুমকুরে দলীয় কর্মিসভায় নিজেই কথাটা বুঝিয়ে দিলেন সনিয়া গাঁধী।
এক মাস আগে চিকমাগালুর লোকসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছে কংগ্রেস। ওই কেন্দ্রে সাংসদ ছিলেন সদানন্দ গৌড়া। তিনি বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে শূন্য আসনে উপ-নির্বাচন হয়। ফলে এই জয় রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রীর ছেড়ে যাওয়া আসনে বিজেপি পরাস্ত হওয়ায় তারা এই মুহূর্তে যথেষ্ট উজ্জীবিতও। আজ টুমকুরের সভায় সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে সনিয়া বলেন, “বিজেপি-র শাসনে মানুষ যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে চিকমাগালুরের উপ-নির্বাচনে।” তার পরে তিনি ইন্দিরা গাঁধীর প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন। সনিয়ার কথায়, “১৯৭৮ সালে চিকমাগালুর থেকে ইন্দিরা গাঁধীর জয় কংগ্রেসের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছিল। আমি আত্মবিশ্বাসী যে সাম্প্রতিক এই জয়ও কর্নাটকে কংগ্রেসের পুনরুজ্জীবনের বার্তা দিচ্ছে।” |
এক বছর বাদে কর্নাটকে ভোট। তার আগে দু’দিনের সফরে গিয়ে কার্যত এখন থেকেই ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন সনিয়া। বিজেপি শাসনে থাকা দক্ষিণের এক মাত্র রাজ্যে এ বার যে পাল্টা আঘাত হানতে মরিয়া কংগ্রেস, সেটা তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীদের। এক দিকে কর্নাটকে লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়কে বার্তা দিতে টুমকুরের সিদ্ধাগঙ্গা মঠে গেলেন, অন্য দিকে দলীয় কর্মিসভার মঞ্চ থেকে জানিয়ে দিলেন, “বিধানসভা ভোটের আর ঠিক এক বছর বাকি। তাই সময় নষ্ট করার সময় আর নেই।”
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, কর্নাটকের রাজনীতির জন্য সনিয়ার এই সফর গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই। সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসের রাজনীতির জন্যও এর তাৎপর্য রয়েছে। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে যে ক’টি রাজ্যে কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কিছুটা হলেও রয়েছে, তার মধ্যে
রয়েছে কর্নাটকও। তাই সেখানে এখন থেকেই জোর দিতে চাইছেন সনিয়া।
শুধু সনিয়া নন, উত্তরপ্রদেশে বিপর্যয়ের গ্লানি পিছনে ফেলে এখন পুনরায় সক্রিয় রাহুল গাঁধীও। গত কাল এবং আজ মহারাষ্ট্র সফরের পর আগামিকাল তিনি উত্তরপ্রদেশে কর্মিসভা করবেন। উত্তরপ্রদেশের ভোটের পর সেখানে এটাই হবে তাঁর প্রথম সফর।
তবে দলের কর্মিসভার পাশাপাশি সনিয়ার সিদ্ধাগঙ্গা মঠে যাওয়ার পিছনেও পুরোদস্তুর রাজনীতি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কর্নাটকের মূলত দু’টি জাতি রয়েছে। ভোক্কালিগা ও লিঙ্গায়েত। সিদ্ধাগঙ্গা মঠ তথা শিবকুমার স্বামীর আশ্রম রাজ্যে লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের অন্যতম পীঠস্থান। এই লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের মধ্যেই এত দিন বিজেপি-র মজবুত জনভিত্তি ছিল। কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, অতীতে কংগ্রেসেরও লিঙ্গায়তে জনভিত্তি মজবুত ছিল। কিন্তু লিঙ্গায়েত নেতা বীরেন্দ্র পাটিলকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানোর পর থেকে তা দুর্বল হতে শুরু করে। এ বার লিঙ্গায়েত নেতা ইয়েদুরাপ্পাকে সরিয়ে সেই একই ‘ভুল’ করেছে বিজেপি। লিঙ্গায়েতরা বিজেপি-র উপরে চটেছেন। তাই এটা তাঁদের বার্তা দেওয়ার সেরা সময় বলে মনে করছে কংগ্রেস।
কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, উপর্যুপরি দুর্নীতি ও অভ্যন্তরীণ কলহে কর্নাটকে বিজেপি দীর্ণ। কিন্তু একই সমস্যা রয়েছে কংগ্রেসের মধ্যেও। বস্তুত, সে রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এটাও অন্যতম কারণ। আজ কর্মিসভায় বিষয়টি দলীয় নেতাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে সনিয়া বলেন, “মনে রাখতে হবে, বিধানসভা ভোটের লড়াই দিল্লিতে হয় না। ঐক্যবদ্ধ ভাবে সেই লড়াই রাজ্যে লড়তে হবে।” উদাহরণ? সেই চিকমাগালুর। সেই উপ-নির্বাচনকে তুলে ধরে সনিয়া বুঝিয়ে দেন, ওই ঐক্যবদ্ধ লড়াইটাই চালিয়ে যেতে হবে। তা হলেই বিজেপিকে হারানো সম্ভব। |