দল ও প্রশাসনের মধ্যে ‘সমন্বয়’ রাখতে প্রতি শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তৃণমূলের বাছাই নেতা -মন্ত্রীরা। যাঁদের ওই কাজের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছ, তাঁদের অধিকাংশই দলের তরুণ মুখ। শনিবার মহাকরণে যুব উৎসবের পরিকল্পনার জন্য দলের বেশ কয়েক জন নেতা -মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০ মে নতুন সরকারের বর্ষপূতির পর প্রতি শনিবার ওই বৈঠক করতে চান মমতা। দলীয় কোনও পদক্ষেপে যাতে সরকারকে ‘বিড়ম্বনা’য় পড়তে না -হয়, সে জন্য কর্মীদের কাছে সরকারি নীতি স্পষ্ট করতে চান তিনি। এবং প্রয়োজনে কোনও সভা বা অনুষ্ঠানে দলীয় বক্তব্য কী হবে, তারও রূপরেখা ঠিক করে দেওয়া হতে পারে ওই বৈঠক থেকে। দলনেত্রীর সঙ্গে সাপ্তাহিক বৈঠকের পরে নেতারা সেই ‘বার্তা’ পৌঁছে দেবেন কর্মীদের কাছে।
সাপ্তাহিক ওই বৈঠকে কারা থাকবেন, তা -ও স্থির করে দিয়েছেন মমতা। এ দিনের বৈঠকে যাঁরা হাজির ছিলেন, অর্থাৎ রেলমন্ত্রী তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, সাংসদ তথা দলের সভাপতি সুব্রত বক্সী, সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, ডেরেক ও -ব্রায়েন, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, আবাসন ও যুব কল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, তৃণমূল যুবা -র নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের সঙ্গে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছেন মমতা।
২০ মে -র পর থেকে নিয়মিত বৈঠক হবে বলে আপাতত ঠিক হলেও এ দিনই মন্ত্রী -নেতাদের নিয়ে মমতা একপ্রস্ত আলোচনা সারেন। ফেসবুক -ট্যুইটারের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বা দৃশ্য -শ্রাব্য মাধ্যমে সরকারের সমালোচনার মোকাবিলা কী ভাবে হবে বা ‘সমালোচক’ সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে কী ভাবে পাল্টা পদক্ষেপ করা হবে, তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। এ দিনই কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসার প্রতিবাদে মিছিলে হাঁটেন ‘মমতা -পন্থী’ বিশিষ্টজনেদের একাংশ। কিন্তু তা জনমানসে কার্যত ‘সাড়া’ ফেলতে পারেনি বলে নেতারা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। যার নিরিখে মমতা চাইছেন সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এখন থেকে দলেরই যুব -ছাত্রদের বেশি করে সামিল করতে। তাই, এ দিন দলীয় ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, মমতা সরকারের বর্ষপূর্তিতে কলকাতায় দু’টি মিছিলের পুরোভাগে থাকবে তৃণমূলের যুব সম্প্রদায়।
সম্প্রতি ভাঙড় কলেজে অধ্যাপিকা নিগ্রহে দলের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, বা ‘শিক্ষকরা সিপিএম করতে পারবেন না’ বলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার ‘ফরমানে’ রাজ্যকে ‘অস্বস্তি’তে পড়তে হয়েছে। তারও আগে রায়গঞ্জের কলেজ বা মাজদিয়া কলেজে অধ্যক্ষ নিগ্রহেও তৃণমূলের নাম জড়ানোয় দলের ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ণ হয়েছিল। প্রশাসনিক ভাবে দলের ভাবমূর্তি ফেরাতে সচেষ্ট হতে হয় মুখ্যমন্ত্রী থেকে দলের একাধিক মন্ত্রীকে। কিছু দিন আগে রঙ্গচিত্র -কাণ্ডে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে নিগ্রহ ও গ্রেফতারের পিছনে স্থানীয় তৃণমূলের ‘সক্রিয় ভূমিকা’ ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। মুখ্যমন্ত্রীর ‘অজ্ঞাতে’ই ওই ঘটনা ঘটেছিল বলে প্রশাসনিক মহল থেকে দাবি করা হয়েছিল। এই ধরনের ঘটনায় যাতে আর সরকারকে ‘অযথা বিতর্কে’ পড়তে না -হয়, যাতে প্রশাসন ও তৃণমূলের মধ্যে নীতিগত সমন্বয় বজায় থাকে, তাই প্রতি শনিবার দলের নেতাদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বসতে চাইছেন বলে দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন। |