কোটি টাকার ক্যামেরা, দুর্নীতি জাতীয় গ্রন্থাগারে
কোটি টাকা মূল্যের বিদেশি ক্যামেরা কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠল আলিপুর জাতীয় গ্রন্থাগারে।
জাতীয় গ্রন্থাগারে এত দামি ক্যামেরা অতীতে কখনও কেনা হয়নি। কয়েক’শ বছরের পুরনো নথি, বই এবং সংবাদপত্র মাইক্রোফিল্ম করার জন্য জাতীয় গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ গত বছর একটি ‘হাইব্রিড মাইক্রোফিল্ম ক্যামেরা’ কেনে। কিন্তু দুর্নীতির ফলে ওই কোটি টাকা কার্যত জলে গিয়েছে বলে মনে করছে ভারত সরকারের অডিট শাখা। গত ১২ মার্চ প্রাথমিক অডিট রিপোর্টে এই দুর্নীতি ধরা পড়েছে। গোটা ঘটনাটি কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রককেও জানানো হয়েছে।
ক্যামেরা কেনা নিয়ে যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। অতীতেও তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল। দুর্নীতি খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যের তদন্তকারী কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে জাতীয় গ্রন্থাগারের অধিকর্তা স্বপন চক্রবর্তী বলেন, “আমি অধিকর্তা পদে যোগদানের আগেই ওই ক্যামেরা কেনার অর্ডার হয়। তার মুখ্য দায়িত্বে ছিলেন রিপ্রোগ্রাফি বিভাগের অশোক কুমার নাথ। তাঁর কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে।” কেউ দুর্নীতি করে থাকলে তাঁকে শাস্তি পেতেই হবে জানিয়ে অধিকর্তা বলেন, “প্রাথমিক অডিট রিপোর্টে দুর্নীতি ধরা পড়েছে। চূড়ান্ত অডিট রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।” তবে স্বপনবাবুর দাবি, “ক্যামেরাটি একেবারে অচল নয়। তা দিয়ে কিছু কাজও হচ্ছে।”
আলিপুর জাতীয় গ্রন্থাগারে অতীতের দুর্মূল্য পুঁথি নথি রয়েছে। যতই যত্নে রাখা হোক, কালের নিয়মেই তা নষ্ট হতে বসেছে। এই অবস্থায় সমস্ত পুঁথি গুরুত্বপূর্ণ নথিকে মাইক্রোফিল্ম করার সিদ্ধান্ত নেয় গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ। ক্যামেরা কেনার জন্য তৎকালীন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী অম্বিকা সোনি ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হন। ২০১০ সালের অক্টোবর দিল্লির শাস্ত্রী ভবন থেকে ক্যামেরা কেনার জন্য জাতীয় গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই মতোই গত বছর মার্চ মাসে ৯৫ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৮০ টাকা দিয়ে ক্যামেরাটি কেনা হয়।
কিন্তু ক্যামেরাটি কেনার পর তা ব্যবহার না -করে ফেলে রাখায় কর্মীদের একাংশের সন্দেহ হয়। ন্যাশনাল লাইব্রেরি স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য শৈবাল চক্রবর্তী ক্যামেরার কেনার ব্যাপারে তথ্যে অধিকার আইনের আওতায় আরটিআই করে জানতে পারেন, রঙিন ক্যামেরার দাম দিয়ে সাদা -কালো ক্যামেরা কেনা হয়েছে। ক্যামেরার বহু যন্ত্রাংশও নেই ! গ্রন্থাগারের কর্মীরা অধিকর্তার কাছে অভিযোগ জানান। এরপরেই গ্রন্থাগার ক্যাম্পাসের একটি বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে ক্যামেরাটি স্থানান্তরিত করা হয়। কাজেও খরচ হয় ৪০ হাজার টাকা ! কর্মীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হওয়ায় গত ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে ওই ক্যামেরায় কিছু সাদা -কালো মাইক্রোফিল্ম করা হয়েছে। কিন্তু তার মান যথেষ্ট ‘উন্নত’ নয় বলেই অভিযোগ।
গত মার্চ মাসে অডিট করতে গিয়ে অডিট বিভাগের কর্মীরা দেখতে পান, কেনা থেকে শুরু করে প্রতি পদে ওই ক্যামেরা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। রঙিন ক্যামেরার দাম দিয়ে সাদা কালো ক্যামেরা কেনা হয়েছে। দামের ফারাক ১৬ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা। এত দামি ক্যামেরা কেনা হলে সাধারণত ১০ % টাকা কেটে রাখা হয় ‘গ্যারান্টি -মানি’ হিসাবে। অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের লক্ষ ২২ হাজার টাকা কেটে রাখা কথা। কিন্তু তা করা হয়নি। পুরো দামই দেওয়া হয়। অথচ ক্যামেরার যে সব অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ থাকার কথা, তা নেই ! এই পরিস্থিতিতে একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে মাইক্রোফিল্ম তৈরি করানো হচ্ছে। অডিট রিপোর্টে সে কথাও বলা হয়েছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.