পেট্রোলের দাম এখনই লিটার-পিছু ৮ থেকে ৯ টাকা বাড়াতে চায় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম যে জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তাতে এই পরিমাণ মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া কোষাগারের বিপুল ক্ষতি সামাল দেওয়া অসম্ভব।
একটা সময় আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল-পিছু ১২০ ডলারে গিয়ে পৌঁছেছিল। তার পর তা নেমে আসে ১০৯ ডলারে। অশোধিত তেলের দাম কমায় গত নভেম্বরে দেশের বাজারেও পেট্রোলের দাম লিটারে ১ টাকা ৬৫ পয়সা কমানো হয়েছিল। তার পরেও দু’বার দাম সামান্য কমেছে। কিন্তু অশোধিত তেলের দাম এখন ফের ঊর্ধ্বমুখী। ব্যারেল-পিছু ১১৬ ডলারে গিয়ে পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে পড়েছে টাকার দাম। ফলে তেল আমদানির খরচ আরও বেড়েছে। ফলে সব মিলিয়ে পেট্রোলের দাম লিটারে ৮-৯ টাকা না বাড়ালে চলবে না বলেই তেল সংস্থাগুলির যুক্তি। পাশাপাশি, ডিজেলের দাম সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করারও দাবি তুলেছে তেল সংস্থাগুলি। সেই দাবি মানা হলে এখনই ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়বে।
পেট্রোলের দাম সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত হলেও দাম বাড়ানোর আগে সরকারের কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত নেয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি। কিন্তু এক ধাক্কায় এতটা দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সায় দেওয়া যে সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়, তা কবুল করছেন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের কর্তারা। সে ক্ষেত্রে তাঁদের প্রস্তাব, এখন পেট্রোলে লিটার-পিছু যে ১৪ টাকা ৭৮ পয়সা কেন্দ্রীয় কর বসানো হয়, তার মধ্যে ৬ টাকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক। তা হলে সাধারণ মানুষের উপর ধাক্কা কম লাগবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির আর্থিক দূরবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও। কমিটির মতে, কম দামে পেট্রো-পণ্য বিক্রি করার ফলে ২০১১-১২ সালে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার মোট ১ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি (আন্ডার-রিকভারি) হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে যা দেড় লক্ষ কোটি টাকায় গিয়ে পৌঁছবে। ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম ও হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম এই তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল মিলে ব্যাঙ্কের থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। সংসদীয় কমিটির মতে, এই পরিস্থিতি চলতে দেওয়াটা সংস্থাগুলির পক্ষে মোটেই ভাল নয়।
এই অবস্থায় কমিটির সুপারিশ, বড়লোকদের বাড়িতে ভর্তুকি দিয়ে রান্নার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হোক। তেল সংস্থাগুলির হিসেবে, রান্নার গ্যাসে সিলিন্ডার-পিছু ৫৫০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। ডিজেল-চালিত গাড়ির উপরে কর বসানোরও সুপারিশ করেছে স্থায়ী কমিটি। কারণ পেট্রোলের তুলনায় ডিজেলের দাম কম বলে অনেকেই ডিজেল চালিত গাড়ি কেনার দিকে ঝুঁকছেন। |