পেট্রোপণ্যের দাম ‘বাস্তবসম্মত’ করার পক্ষে ফের সওয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। যাকে তেলের দাম বৃদ্ধির ইঙ্গিত হিসেবেই মনে করছেন তেল সংস্থাগুলির কর্তারা। তাঁদের ধারণা, সংসদের বাজেট অধিবেশনের পরে পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ানো হতে পারে।
আজ পঞ্জাবের ভাটিন্ডায় যৌথ উদ্যোগে তৈরি একটি তৈল শোধনাগার উদ্বোধন করে মনমোহন বলেন, দেশে যে পরিমাণ অশোধিত তেল বা গ্যাস উৎপাদন হয়, তা মোট চাহিদার খুব সামান্য অংশ। প্রায় ৮০ শতাংশ অশোধিত তেলই আমদানি করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়ার ফলে আমদানির খরচও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে পেট্রোপণ্যের দাম বাস্তবসম্মত করা প্রয়োজন। তবে একই সঙ্গে গরিব মানুষদের কথা যে ভাবা দরকার, তা-ও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “অশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির আঁচ যাতে সাধারণ মানুষের উপর না পড়ে, তার জন্য সরকার ডিজেল, কেরোসিন ও রান্নার গ্যাসের উপর যথেষ্ট ভর্তুকি দিচ্ছে।” জ্বালানির দাম বাড়ানো হলে, গরিব মানুষকে তার আঁচ থেকে রক্ষা করতে হবে বলে জানান মনমোহন। সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, সেই জন্যই সরাসরি নগদ ভর্তুকি ব্যবস্থা দ্রুত চালু করার চেষ্টা চলছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, আজ হঠাৎ তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কেন সওয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী?
প্রশাসনিক মহলের অনেকেরই মতে, ভারতের অর্থনীতি সম্পর্কে মার্কিন মূল্যায়ন সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স এবং আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ) যে হতাশা প্রকাশ করেছে, তা কাটাতে সংস্কারের বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন ছিলই। এই সংস্থাগুলি পেট্রোপণ্যে ভর্তুকি কমানোর উপরে বেশি জোর দিয়েছে। তাই এই ক্ষেত্রটিই বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় বাধা সরকারের শরিক দল এবং বিরোধীদের আপত্তি। অতীতে তেল বা রান্নার গ্যাসের বাড়ানো মাত্রই রে রে করে উঠেছে তারা। যে জন্য ডিজেলের দাম নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’-ও নেওয়া যায়নি। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতিবাচক রিপোর্টকে হাতিয়ার করে কেন্দ্র তেলের দাম বাড়াতে চাইলেও দেশে রাজনৈতিক বিরোধিতায় তা কতটা করে উঠতে পারবে, সেই প্রশ্ন থাকছেই। সরকারি সূত্রের মতে, সেই বাধা কাটানোর চেষ্টা হিসেবেই গরিবদের রক্ষাকবচ দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তার পরেও তেলের দাম বাড়ানো যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে কংগ্রেসেরই একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শরিকদের আপত্তির কথা যেমন ভাবতে হবে, তেমনই বিরোধীরা কী অবস্থান নেবে, সে কথাও মাথায় রাখা দরকার। কারণ সংসদ চলছে। অর্থ বিল-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল এই অধিবেশনে পাশ করাতে হবে। সেখানে বিরোধী ও শরিকরা বেঁকে বসলে মুশকিল। কাজেই যা করার বাজেট অধিবেশনের পরে করতে হবে। কিন্তু তখন আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এসে পড়বে। ফলে তখনও শরিকদের কতটা চটানো যাবে, সে প্রশ্নও থাকছে। |