|
|
|
|
ঝাড়গ্রাম পুরসভা |
অর্থ-সঙ্কটে বাম-নালিশ বঞ্চনার, খারিজ মন্ত্রীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
আর্থিক অনটন মোকাবিলায় বাম-নিয়ন্ত্রিত ঝাড়গ্রামের পুর-কর্তৃপক্ষ আস্ত একটা বাসস্ট্যান্ডের জমিই বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। ঝাড়গ্রাম পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, অর্থের অভাবে পুর-পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে চেয়েও টাকা মিলছে না। তাই ওই ১৭২ কাঠা জমি বিক্রি করেই অর্থ-সংস্থানের পরিকল্পনা হয়েছে।
পুর-শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বলরামডিহির যে মাঠটি পুরসভা বিক্রি করতে চায় সেটি ‘পুর-ময়দান’ নামেই পরিচিত। এখন সেখানে অস্থায়ী ভাবে বাসস্ট্যান্ড করা হয়েছে। ২০০৪ সালে একটি সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সাড়ে ৩১ লক্ষ টাকা দামে নিলামে ওই জমি কিনেছিল পুরসভা। ওই জমি বিক্রির সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন পুরসভার ৪ বিরোধী কাউন্সিলর। জমিটি বিক্রির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গত সোমবার পুরভবনে বোর্ড অফ কাউন্সিলরস্-এর বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে বিরোধী ৪ কাউন্সিলর (তৃণমূলের ৩ এবং কংগ্রেসের ১) জমি বিক্রির ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানান। পুরপ্রধান সিপিএমের প্রদীপ সরকারের অবশ্য বক্তব্য, “টাকা না পেলে কী করব। |
|
অস্থায়ী এই বাসস্ট্যান্ডের জমিই বেচতে চায় পুরসভা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
অভাবের সংসারে মানুষ ঘটি-বাটি বেচেন। আমাদের অবস্থাও এখন সেই রকম।” বিরোধীদের আপত্তিতে ওই জমি বিক্রির বিষয়টি আপাতত স্থগিত রাখা হলেও পুরপ্রধানের বক্তব্য, “সরকার টাকা না দিলে অর্থের সংস্থানের জন্য নিজস্ব সম্পদই বিক্রি করা হবে।” সে জন্য বিক্রয়যোগ্য অন্যান্য সম্পদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলেও পুরসভা সূত্রের খবর।
১৯৮২ সাল থেকে টানা তিন দশক বামেদের দখলেই রয়েছে ঝাড়গ্রাম পুরসভা। জনসংখ্যার নিরিখে ‘ডি’ ক্যাটাগরির এই পুরসভার ভাঁড়ারে সম্প্রতি টান পড়েছে বলে পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি। পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, পুরকর বাবদ বার্ষিক ৫২ লক্ষ টাকা আয় হয়। ট্রেড লাইসেন্স ও অন্যান্য কর-বাবদ বছরে পাওয়া যায় আরও ১৪ লক্ষ টাকা। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, পুর-পরিষেবা দিতেই প্রতি মাসে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা খরচ হয়। বার্ষিক সেই খরচ দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকায়। অস্থায়ী সাফাই-কর্মীদের বেতন দিতে বছরে ৬০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় এত দিন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ অনুদানে ঘাটতি পুষিয়ে যেত। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাম-নিয়ন্ত্রিত ঝাড়গ্রাম পুরসভার সমস্যা বেড়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে না বলে অভিযোগ পুর-কর্তৃপক্ষের।
যদিও কোনও রকম বৈষম্যের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর বক্তব্য, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ব্যয়েরই খেসারত দিতে হচ্ছে ঝাড়গ্রাম পুরসভাকে। তাঁর কথায়, “আগের আমলে বামেদের অনেক পুরসভাই দলের লোকদের প্রচুর সংখ্যায় অস্থায়ী কর্মী হিসাবে নিয়োগ করেছে। স্থায়ী কর্মীদের বেতন রাজ্য সরকারই দেয়। কিন্তু অগুনতি অস্থায়ী কর্মীর মাইনে পুরসভাকেই জোগাতে হয়। সেটা করতে গিয়েই আয়ের বেশিটাই খরচ করে ফেলছে পুরসভা। নিজেদের তৈরি সঙ্কট ঢাকতে সরকারের বিরুদ্ধে অন্যায় অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” পুরমন্ত্রীর দাবি, “বাম-তৃণমূল নির্বিশেষে রাজ্যের ১২৭টি পুরসভার জন্যই রাজ্য একই নীতি নিয়ে প্রকল্প-ভিত্তিক অর্থ বরাদ্দ করে। ঝাড়গ্রামের ক্ষেত্রেও সম্প্রতি ওঁদের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। কিছু প্রকল্প অনুমোদনও করা হয়েছে।”
বস্তুত, গত ৩০ মার্চ পুরপ্রধান সিপিএমের প্রদীপ সরকার, উপ-পুরপ্রধান সিপিআইয়ের প্রদীপ মৈত্রের সঙ্গেই বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের আনন্দমোহন পণ্ডা-সহ ৫ প্রতিনিধি মহাকরণে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেখা করে অর্থ-সঙ্কটের বিষয়ে জানান। কিছু প্রকল্প-প্রস্তাবও জমা দেন। বর্তমান সঙ্কটের জন্য পুর-কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করে বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের আনন্দমোহনবাবু বলেন, “পুরসভা অনেক দিন ধরেই ধারকর্জে চলছে। বিরোধীদের অন্ধকারে রেখে ওরা এত দিন চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারিতা-স্বজনপোষণ করে গিয়েছেন।” তাঁর অভিযোগ, “এত দিন বিরোধীদের গুরুত্ব দেওয়াই হত না। তা সত্ত্বেও উন্নয়ন চাই বলেই আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করে এসেছি। কিন্তু পুরবাসীর সম্পদ ওই পুর-ময়দানের জমি বেচার আমরা ঘোরতর বিরোধী।” আনন্দবাবুর বক্তব্য, “ওরা না পারলে ক্ষমতা ছেড়ে দিক, আমরা উন্নয়ন করে দেখিয়ে দেব।” আর এক বিরোধী পুরপিতা তৃণমূলের প্রশান্ত রায় বলেন, “আমরা লিখিত ভাবে পুরপ্রধানকে জানিয়ে দিয়েছি, জমি বিক্রির সিদ্ধান্তটি জনস্বার্থ-বিরোধী। পুর-সম্পদ বিক্রি করতে গেলে জনশুনানি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি জানিয়েছি আমরা।”
আতান্তরে পড়ে পুরপ্রধান অবশ্য বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরসভার বকেয়া প্রাপ্য নিয়েও সরব হয়েছেন। তিনি জানান, ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের কাছ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা হোল্ডিং-ট্যাক্স অনাদায়ী রয়েছে। গত দু’বছর যাবত পুরসভার অতিথিশালা ‘বনানী’ দখল করে সিআরপি ক্যাম্প চালানো হলেও ভবনটির ভাড়া বাবদ আজ পর্যন্ত কানাকড়ি পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ করেছেন পুরপ্রধান। শহর ও সংলগ্ন এলাকার যৌথ বাহিনীর ক্যাম্পগুলিতে পুর-পরিষেবা বাবদও ৪০ লক্ষ টাকা বকেয়া বলে দাবি পুরপ্রধানের। সম্পদ বিক্রির বদলে বকেয়া আদায়ে উদ্যোগী হওয়া আশু জরুরি বলে মনে করছে বিরোধীরাও। |
|
|
|
|
|