একদিকে সেচের অভাব। অন্য দিকে চাষের খরচ বেড়ে চললেও মিলছে না ফসলের দাম। ওই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার চাষিরা বোরো ধান ও গম চাষে উৎসাহ হারাচ্ছে। গত বছর জেলায় ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান এবং ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। এ বার বোরো ধান চাষ হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে। গম চাষের এলাকাও কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর। জেলার উপকৃষি অধিকর্তা লক্ষ্মীকান্ত মান্ডি বলেন, “সেচের সমস্যা ও সারের দাম বৃদ্ধির কারণে বোরো ও গম চাষের এলাকা কমেছে।” কৃষি কর্তাদের কয়েজন জানান, ওই সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উৎপাদিত ফসলের দাম না পাওয়া। বালুরঘাটের ভাটপাড়া অঞ্চলের ডাঙি এলাকার চাষি হৃদয় বর্মন, উপেন রায়, ভবেশ মালিরা প্রতি বছর বোরো ধান চাষ করতেন। এ বছর তাঁদের জমি ফাঁকা পড়ে আছে। ওই চাষিরা জানান, বিদ্যুতের মাশুল, সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষের খরচ বেড়েছে। কিন্তু ধানের দাম মিলছে না। গম চাষেও লাভ হচ্ছে না। তাই তাঁদের কেউ এ বার বোরো ধান অথবা গম চাষ করেনি। ছবি তপন ও গঙ্গারামপুর এলাকায়। সেখানেও চাষিদের অনেকে বোরো ধান চাষ না করে জমি ফাঁকা ফেলে রেখেছে। গম চাষেও তাঁদের কেউ আগ্রহ দেখায়নি। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় এ বছর সাড়ে ৭ লক্ষ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদন হয়েছে। প্রশাসনের তরফে সহায়ক মূল্যে চাষিদের কাছে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু সেটাও শেষ করা সম্ভব হয়নি। এখনও পর্যন্ত সরকারি শিবির করে চালকলের মাধ্যমে চেকে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। যদিও খাদ্য নিয়ামক ভাস্কর হালদার জানান, ধান কেনার প্রক্রিয়া জারি আছে। জেলার কৃষক সংগঠনগুলির নেতৃত্বের অভিযোগ, চাষিদের ঘরে প্রচুর আমন ধান পড়ে আছে। ওই ধান কবে বিক্রির সুযোগ মিলবে সেটা নিশ্চিত নয়। সারা ভারত কৃষক সভার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সম্পাদক রঘুনাথ রায় বলেন, “ধান কে কিনবে! চাষিরা ঘরের ধান বিক্রির সুযোগ পাবে তার কোনও গ্যারান্টি নেই। এর পরে বোরো চাষে যাওয়ার সাহস থাকে!” কৃষক নেতৃত্বের অভিযোগ, আগে কুটনিরা ধান কিনে ব্যবসা করতেন। তাঁরা ‘পারি’ ধান কেনায় বেশি আগ্রহ দেখায়। বোরো ধানের ওই প্রজাতির চাষে খরচ বেড়েছে। তার উপরে রয়েছে সার ও সেচের খরচ। চাষিরা তাই বোরো চাষে উৎসাহ দেখাচ্ছে না। সংযুক্ত কৃষক সভার জেলা সম্পাদক ক্ষিতীশ সরকার বলেন, “চাষিরা বোরোর পাশাপাশি গম চাষেও ঝুঁকেছিলেন। কিন্তু ভাল দাম না মেলায় এ বার সেটাও কমেছে।” তবে চাষের এলাকা কমে গেলেও খাদ্য সংকটের আশংকা করছেন না কৃষি কর্তাদের কেউ। উপকৃষি অধিকর্তা বলেন, “বোরো চাষ কমলেও আমন চাষ কমবে না। নিজেদের তাগিদে চাষিরা ফসল আবাদ করবেন। তাই খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা নেই।” |