|
|
|
|
আনাড়ায় রেলের কারখানায় কাজ শুরু |
প্রশাসন-এলাকাবাসী বৈঠকে জট কাটল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আদ্রা |
প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পরে আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা জানালেন এলাকার বাসিন্দা ও ঠিকা শ্রমিকেরা। সোমবার ওই বৈঠকের পরে আনাড়ায় রেলের কারখানা তৈরি নিয়ে অচলাবস্থা কেটে গিয়েছে বলে দাবি করেছে প্রশাসন ও রেল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার থেকে আনাড়ার কারখানায় নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
সোমবার আদ্রার ডিআরএম অমিতকুমার হালদার বলেন, “বৈঠকে গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে মীমাংসায় পৌঁছনো গিয়েছে। এটা কারখানার কাজের পরিবেশ তৈরির পক্ষে খুবই সহায়ক হবে। কারখানার নির্মাণকাজ ফের শুরু হয়েছে।” রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক প্রণব বিশ্বাস বলেন, “বৈঠকের পরেই সমস্যা মিটে গিয়েছিল। গ্রামবাসীদের বোঝানোর পরে তাঁরা কাজ শুরু করার ব্যাপারে রাজি হয়েছেন। আপাতত আর কোনও সমস্যা নেই।”
এলাকার বাসিন্দাদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া, বর্তমানে কর্মরত শ্রমিকদের সরকার নির্ধারিত হারে মজুরি এবং কারখানার নির্মাণকাজে ব্যবহৃত গাড়িগুলির বকেয়া বিলের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত শুক্রবার থেকে আনাড়ায় নির্মীয়মাণ রেলের কামরার মধ্যবর্তী পুনর্বাসন কারখানার কাজ সম্প্রতি বন্ধ করে দেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ও ঠিকা শ্রমিকেরা। ঘটনা হল, আন্দোলনে দলীয় ঝান্ডা ব্যবহার না করলেও নেতৃত্বে ছিলেন এলাকার তৃণমূলের কিছু কর্মী-সমর্থক।
শুক্রবার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেই রেলের তরফে বিষয়টি জানানো হয় পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনকে। ডিআরএম বলেন, “জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা ওঁদের সাহায্য চেয়েছিলাম।” সোমবার পাড়া ব্লক অফিসে জেলাশাসকের নির্দেশেই স্থানীয় বাসিন্দা, রেলের প্রতিনিধি এবং নির্মাণকাজের বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থাকে নিয়ে বৈঠকে বসেন পাড়ার বিডিও তমোঘ্ন কর। বৈঠক শেষে বিডিও বলেন, “ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। সমস্যাগুলি নিয়ে সহমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”
২০১০ সালের অক্টোবর মাসে দক্ষিণ পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের আনাড়ায় এসে রেলের কামরার মধ্যবর্তী পুনর্বাসন কারখানার শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী, বর্তমানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দরপত্র ডাকার কাজ শেষ হওয়ার পরে সম্প্রতি ওই কারখানার নির্মাণ শুরু করেছে বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা। তবে কাজ একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। তার মধ্যেই স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় মানুষের দাবি ছিল, বেশির ভাগ শ্রমিকই নিয়োগ করতে হবে নির্মীয়মাণ কারখানার পাশের গ্রামগুলি থেকে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্ভব হলে প্রয়োজনের পুরোটাই স্থানীয়দের মধ্যে থেকে নেওয়া হবে বলে এ দিনের বৈঠকে প্রশাসন ও রেলের আধিকারিকেরা আশ্বাস দেন। আদ্রার ডিআরএম বলেন, “ওই কারখানার নির্মাণকাজ একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। কাজের মাত্রা বাড়লে আরও বেশি সংখ্যক লোক যুক্ত হতে পারবেন। দক্ষতা অনুযায়ী স্থানীয় বাসিন্দাদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।”
স্থানীয় রানিপুর গ্রামের বাসিন্দা তথা এলাকার শ্রমিকদের নিয়ে গড়ে ওঠা কমিটির নেতা মাধব রায় বলেন, “বর্তমানে যে শ্রমিকেরা কারখানায় নির্মাণ কাজে যুক্ত, তাঁদের বেশিরভাগই কারখানার পাশের এলাকার বাসিন্দা নন। আমাদের গ্রামের পাশে কারখানা হচ্ছে। ফলে এই এলাকা থেকেই বেশিরভাগ শ্রমিক নিয়োগের দাবি জানিয়েছি। প্রশাসন আমাদের দাবির বেশিরভাগ মেনে নিয়ে উপস্থিত ঠিকাদার সংস্থাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে। তাই কাজ শুরু করার বিষয়ে আমাদের আর আপত্তি নেই।” ওই এলাকারই বাসিন্দা লোকমান আনসারির কথায়, “এখানকার মানুষ উন্নয়নের বিরোধী নন। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল, এলাকায় কারখানা হচ্ছে। তাই স্থানীয় বাসিন্দাদেরই নিয়োগ করতে হবে। প্রশাসন আমাদের দাবির যৌক্তিকতা মেনে নিয়েছে।” |
|
|
|
|
|