মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহল সফরের মধ্যেই মঙ্গলবার শালবনিতে তিনটি হাতিকে নিয়ে হিমসিম খেল বন দফতর! মেদিনীপুর থেকে লালগড়ে মুখ্যমন্ত্রীর যাত্রাপথে ওই তিন রেসিডেন্সিয়াল হাতি এসে পড়লে বিপত্তি হতে পারে, এই আশঙ্কায় দিনভর তিনটি হাতিকে পূর্ত দফতরের এক অফিস-চত্বরের মধ্যেই ‘আটকে’ রাখা হল। অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে এলাকায় মাইক-প্রচার করে জানানো হল, ‘হাতি দেখতে ভিড় করবেন না। যে কোনও সময়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে’। শেষমেশ কলকাতা থেকে শালবনিতে ছুটে আসতে হল রাজ্যের অন্যতম প্রধান মুখ্য-বনপাল অতনু রাহাকেও। সন্ধ্যায় তিনটি হাতিকেই অবশ্য অফিস-চত্বর থেকে বার করে জঙ্গলে পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন বনকর্মীরা। |
শালবনি থানার আড়াবাড়ি রেঞ্জ এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই তিনটি রেসিডেন্সিয়াল হাতি রয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে আচমকাই ওই তিনটি হাতি জঙ্গলপথ ধরে শালবনি সদরে চলে আসে। শালবনি থানার উল্টোদিকেই রয়েছে পূর্ত দফতরের একটি অফিস। আশপাশে বেশ কিছুটা ফাঁকা জায়গা। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। ওই ঘেরা জায়গায় ঢোকার মূল-ফটকে শিকল ঝোলানো ছিল। একটি হাতি শুঁড় দিয়ে ওই শিকল খুলে অফিস চত্বরে ঢুকে পড়ে। তার পিছু নেয় অন্য দু’টি হাতি। আর এর পরেই এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। ঘুম থেকে উঠেই এলাকার উৎসাহী মানুষ ভিড় করতে থাকেন। খবর পেয়ে পৌঁছন বন দফতরের আধিকারিকেরাও। আসে পুলিশ। মাইক-প্রচার শুরু করে বন দফতর। উৎসাহী মানুষকে এলাকা থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। জানানো হয়, হাতি বেরিয়ে এলেই অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটতে পারে। মেদিনীপুরের ডিএফও আশিস সামন্ত বলেন, “সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতেই মাইক-প্রচার করা হয়েছে।” কিন্তু, সকালে আর হাতি তাড়ানোর ঝুঁকি নেয়নি বন দফতর। দফতরের একটি সূত্রের খবর, ঝুঁকি এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত। শালবনি সদর এলাকা জনবহুল। দোকান-বাজার রয়েছে। আশপাশে বসতবাড়ি রয়েছে। সব রকমের প্রস্তুতি না-নিয়ে হাতি তাড়ানো হলে প্রাণহানিও ঘটতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরের মধ্যে অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে না ঘটে, সে দিকে নজর রাখা হয়েছিল। |
বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “হাতির মতিগতি আন্দাজ করা সহজ নয়। হাতি তিনটি বেরিয়ে যদি সড়কে চলে আসত, তা হলে সমস্যা আরও বাড়ত। ব্যস্ত সময়ে যানজটের সৃষ্টি হত। বিশেষত, এই এলাকা হয়েই চলে গিয়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ভাদুতলা থেকে শালবনি সদরের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। মুখ্যমন্ত্রী ভাদুতলা-পিরাকাটা হয়েই এ দিন সড়কপথে লালগড় পৌঁছন।” তাড়ানো হলে অফিস চত্বর থেকে বেরিয়ে জঙ্গলপথ ধরে তিনটি হাতি পিরাকাটা ও তার আশপাশ এলাকায় চলে আসতে পারত বলেও আশঙ্কা ছিল।
এই তিনটি হাতি দীর্ঘ দিন ধরেই আড়াবাড়ি রেঞ্জ এলাকায় রয়েছে। মাঝেমধ্যেই খাবারের খোঁজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এর মধ্যে একটি হস্তিনী, একটি মাঝারি বয়সের হাতি ও একটি দাঁতাল। ক’মাস আগে কেশপুর ও তার আশপাশ এলাকায় গিয়েও তাণ্ডব চালিয়েছে। হাতির হানায় ৩ গ্রামবাসীর মৃত্যুও হয়। কখনও খেতে, আবার কখনও বাঁশ ঝোপে, কখনও বা কারও বাড়িতে হানা দেওয়ার চেষ্টা করে। মঙ্গলবার ভোরে সে ভাবেই জঙ্গল ছেড়ে শালবনি সদরে এসে হাজির হয়। শুরুতে স্থানীয় গ্রামবাসীরাই হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেন। হাতি লক্ষ করে ইট-পাটকেলও ছোড়েন। এতে তিনটি হাতি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। যে অফিস চত্বরের মধ্যে হাতি তিনটি ঢুকে পড়ে, সেই অফিসের কর্মচারী গৌতম চক্রবর্তী বলেন, “এমন ঘটনা এই প্রথম।” আরেক কর্মচারী সুশীল বেসরা বলছিলেন, “হাতি থাকায় এ দিন অফিসে ঢুকতে পারলাম না।”
|