সম্পাদকীয় ১...
অশান্ত ডুয়ার্স
ত্তরবঙ্গের তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল পুনরায় অগ্নিগর্ভ। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ডাকা বন্ধ ও তাহার বিরোধিতায় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের জনজীবন সচল রাখার প্রতিযোগিতা দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছৃঙ্খলতার জন্ম দেয়। দ্বন্দ্বের উপলক্ষ প্রস্তাবিত ‘গোর্খা আঞ্চলিক প্রশাসন’-এর (জিটিএ) ভিতর ডুয়ার্স ও তরাইয়ের ৩৯৮টি মৌজার অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গ। মোর্চা নেতৃত্ব এ সংক্রান্ত দাবি মানা না হইলে অচলাবস্থা সৃষ্টির আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়াছে। পাল্টা হুমকি পরিষদ নেতৃত্বের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাসীন হইয়াই ‘পাহাড়ের সমস্যা’ দ্রুত মীমাংসার তাড়নায় মোর্চা নেতৃত্বের দাবি শিরোধার্য করিয়া মৌজাগুলি চিহ্নিত করার জন্য কমিটি গড়িয়া দেয়। সেটাই পাহাড় বনাম সমতলের নব পর্যায়ের বিরোধের শুরু। অতঃপর যত সময় গড়াইয়াছে, পারস্পরিক বিরূপতা তত সংহত হইয়াছে, অনাস্থা ও বিদ্বেষ তত সঞ্চিত হইয়াছে।
ইহার অনেকখানি দায় বর্তমান রাজ্য সরকারের উপর বর্তায়। ইতিপূর্বে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতৃত্ব ক্রমশ পার্বত্য দার্জিলিঙের রাজনীতিতে পায়ের তলার জমি হারাইতেছিল। পাহাড়বাসীকে ‘স্বতন্ত্র রাজ্য’ পাওয়াইয়া দেওয়ার সম্ভাবনা বামফ্রন্টের জমানায় দূরপরাহত হইয়া পড়ায় মোর্চার জনসমর্থন হ্রাস পায়, গোর্খা লিগ, জিএনএলএফ সহ অন্যান্য সংগঠনের গণভিত্তি মজবুত হইতে থাকে। কিন্তু ‘৯০ দিনের মধ্যে একশো শতাংশ’ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনের জাদু-প্রদর্শনী এবং জঙ্গলমহল কিংবা পাহাড়ের সমস্যা মিটাইয়া ফেলার অতিরঞ্জিত দাবিকে দলীয় সমর্থকদের তথা রাজ্যবাসীর সামনে তুলিয়া ধরার হঠকারিতাই পরিস্থিতি জটিল করিয়া তোলে। মোর্চা নেতৃত্ব ডুয়ার্স ও তরাইয়ের গোর্খা-অধ্যুষিত মৌজাগুলিকে গোর্খা প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত করার দাবির প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সহানুভূতি আঁচ করিয়া জিটিএ চুক্তিতে শরিক হইয়া পড়ে। এখন ওই মৌজাগুলির অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নই পার্বত্য দার্জিলিঙ ও ডুয়ার্সের পরিকীর্ণ অশান্তির কারণ হইয়া উঠিবে। গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের প্রথম পর্বে রাজ্য প্রশাসন বনাম জি এন এল এফ সংঘর্ষ ছিল অশান্তির প্রচলিত রূপ। এখন ‘নিরপেক্ষ প্রশাসন’-এর নজরদারিতে গোর্খা বনাম অ-গোর্খা আদিবাসী ও বাঙালির জাতিবৈরই হইবে ডুয়ার্সের অশান্তির চেহারা। স্বায়ত্তশাসনের এলাকা সম্প্রসারিত করার প্রশ্নে এক বার সম্মত হইয়া গেলে সেই প্রসারণের সীমানা বাঁধিয়া দেওয়া অসম্ভব। ইহা প্যান্ডোরার বাক্সের পুরানো গল্প।
তেলেঙ্গানার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ইউ পি এ সরকার তাহা মর্মে-মর্মে টের পাইতেছে। স্বতন্ত্র রাজ্যের আন্দোলনের দাবির প্রতি সহমর্মিতা দেখাইতে গিয়া সেখানে সনিয়া গাঁধীর কংগ্রেস এবং মনমোহন সিংহের সরকার গভীর সঙ্কটে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম যদি আগ বাড়াইয়া পৃথক রাজ্যের দাবিতে সম্মতির কথা না বলিতেন, তবে হয়তো তেলেঙ্গানাপন্থীদের আন্দোলন এত দুর্বার হইত না। জনজাতীয় আত্মশাসন অত্যন্ত স্পর্শকাতর রাজনৈতিক বিষয়, সম্যক অনুধাবন না করিয়া যে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত বা প্রতিশ্রুতি হঠকারিতার শামিল। এক জনজাতীয় গোষ্ঠীকে খুশি করিতে গিয়া অন্য গোষ্ঠীকে বিপন্ন করার আশঙ্কা সম্পর্কে সতর্ক থাকাও জরুরি। পশ্চিমবঙ্গের চলতি রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিজেদের সাফল্যের তালিকা স্ফীত করার অত্যুৎসাহে চটপট ‘পাহাড়ের সমস্যা’ সমাধান করিতে চাহিয়াছেন। পরিণামে সমস্যা জটিলতর হইয়াছে। এখন রাজ্য সরকার এই নূতন উপদ্রবের মোকাবিলার পথ পাইতেছে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.