এক দিকে পরপর দুর্নীতির অভিযোগ, অন্য দিকে শরিকি সমস্যা এবং তার জেরে সংস্কার কর্মসূচিতে স্থবিরতা। সব মিলিয়ে মনমোহন সিংহ সরকারের ভাবমূর্তিতে যে দাগ লেগেছে, তাতে ‘কামরাজ পরিকল্পনা’র মতো একটা বড়সড় ঝাঁকুনি শুধু মাত্র সময়ের দাবি বলে মনে করছিলেন কংগ্রেসের অনেকেই। কিন্তু সে কাজ কী ভাবে হবে, তা নিয়ে যখন নানা জল্পনা চলছে, তখন আসরে নামলেন দশ জনপথের আস্থাভাজন জনা চারেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। যাঁরা মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করে দলের কাজ করার জন্য সনিয়া গাঁধীকে চিঠি দিয়ে চাপে ফেলে দিলেন অন্যদের।
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, এই মন্ত্রীরা হলেন, সলমন খুরশিদ, জয়রাম রমেশ, ভায়ালার রবি ও গুলাম নবি আজাদ। যদিও কংগ্রেস সভানেত্রীকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে তিন জনই অস্বীকার করেছেন। সলমন খুরশিদ অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
|
কামরাজ পরিকল্পনা |
১৯৬৩ সালে কংগ্রেসের সঙ্কটের মুহূর্তে দলকে চাঙ্গা করার
পথ বাতলেছিলেন কামরাজ নাদার। সেই পরিকল্পনা
অনুসারে লালবাহাদুর শাস্ত্রী, মোরারজি দেশাই, বিজু
পট্টনায়কের মতো বর্ষীয়ান ৬ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও ৬ মুখ্যমন্ত্রী
পদত্যাগ করে সংগঠনের কাজে নেমেছিলেন। |
|
|
স্বাভাবিক ভাবেই সরকার ও কংগ্রেস সংগঠনে রদবদলের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা আজ তুঙ্গে উঠেছে। কংগ্রেসের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “সরকারের যা পরিস্থিতি, তাতে বড় ধরনের রদবদলের ভাবনা হাইকম্যান্ডের অনেক দিন ধরেই রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তৎপরতা শুরু হলেই দলের কিছু নেতা-মন্ত্রী গোটা পরিস্থিতি গুলিয়ে দিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।” তাঁর বক্তব্য, এ বার গাঁধী পরিবারেরই আস্থাভাজন কিছু নেতা-মন্ত্রী নিজে থেকে সংগঠনের কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় চাপে পড়েছেন বাকিরা। কংগ্রেসের একাংশ বলছে, এর আগে কোনও রদবদলেই চার শীর্ষ মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, এ কে অ্যান্টনি, পি চিদম্বরম এবং এস এম কৃষ্ণের মন্ত্রক বদল হয়নি। এখনও যে হবে এমন নয়, কিন্তু সম্ভাবনার দরজাটা খুলে গেল।
১৯৬৩ সালে ‘কামরাজ পরিকল্পনায়’ অনেকটা এ রকমই হয়েছিল। সেই পরিস্থিতির সঙ্গে আজকের ঘটনার তুলনা টানতে শুরু করেছেন অনেকে। সনিয়া-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এই নেতাদের মতে, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের ভাবমূর্তির যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তাতে বড় ধরনের ঝাঁকুনি দেওয়ার সঠিক সময় এটাই।
তবে আজ রদবদলের বিষয়টি যে ভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে, তার সময় নিয়ে কংগ্রেসেই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের বক্তব্য, এই রদবদল জরুরি ঠিকই, কিন্তু তা হওয়ার কথা ছিল সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশন শেষ হওয়ার পর। ২২ মে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের তিন বছর পূর্তি হবে। তখন এই রদবদল হবে বলে মনে করা হচ্ছিল। সে দিক থেকে কিছুটা আগে থেকেই তার হাওয়া উঠল।
তবে এর পরেও শেষ প্রশ্ন রয়ে গেল। এত কিছুর পরেও সনিয়া গাঁধী কি পারবেন মধ্যমেয়াদে বড় ঝাঁকুনি দিতে? তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারা মনে করছেন, রদবদল কতটা কার্যকরী হবে, তা সময় বলবে। কিন্তু সনিয়া যে এ বার তা করতে চাইছেন, সেই বার্তা ইতিমধ্যেই দিয়েছেন। এখন সময়ের অপেক্ষা। |