টানা গরম থেকে রেহাই দিয়েও মঙ্গলবার সন্ধের কালবৈশাখী যথেচ্ছ লন্ডভন্ড করে গেল শহর ও শহরতলিকে।
ইডেন গার্ডেন্সে ভেঙে পড়ল নজরদারির বিশেষ ‘বক্স’। আইপিএলের খেলা পরিত্যক্ত তো হলই, মাঠে আহত হলেন ১২ জন। মোহনবাগান তাঁবুর একাংশে গাছ পড়ে নষ্ট হয়ে গেল প্রচুর পুরনো ছবি। গাছ পড়ে বন্ধ হল কলকাতা ও বিধাননগরের বিভিন্ন রাস্তা। বন্ধ হল যান চলাচল। শিয়ালদহ মেন শাখার কৃষ্ণনগর-নৈহাটি লাইনে ওভারহেড তার ছিঁড়ে থমকে গেল ট্রেন।
আকাশ কালো হয়ে আসে সন্ধে থেকেই। মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। সওয়া আটটা নাগাদ ওঠে ঝড়। আসে বৃষ্টি। অধিকাংশ কলকাতাবাসী তখন বহুকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি উপভোগ করতে ব্যস্ত। আবার একই সময়ে কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং ডেকান চার্জার্সের খেলা দেখতে ইডেনেও হাজির অনেকে। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে দর্শকরা যে যার মতো দৌড়লেন। তখনই ঘটল ঘটনাটা। ঘড়িতে ৮টা ২০। |
মাঠে-গ্যালারিতে নজরদারির জন্য ইডেনের ‘জে’ ব্লকের উপরে তৈরি হয়েছিল একটি অস্থায়ী ‘ভেনু অপারেটিং সেন্টার’। সাধারণত পুলিশ, পূর্ত দফতর, দমকল কিংবা আইপিএল-কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরাই সেখানে বসেন। এ দিন বৃষ্টির মধ্যে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন কয়েক জন দর্শকও। কাচ-প্লাইউড দিয়ে তৈরি ওই বক্সটির একাংশ ঝড়বৃষ্টিতে প্রথমে হেলে যায়। তার পর একেবারে ভেঙেই পড়ে ওই অংশটি। জখম হন ১২ জন। তাঁদের মধ্যে সীতারাম রায়চৌধুরী নামে এক পুলিশ অফিসার এবং তিন দর্শককে নিয়ে যেতে হয় হাসপাতালে। চার জনই ছিলেন বক্সের ভিতরে। ঘণ্টাদু’য়েক পর্যবেক্ষণে রাখার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁদের চিকিৎসার খরচ দিয়েছে সিএবি। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা হয় ইডেনেরই মেডিক্যাল সেন্টারে।
ওই ‘জে’ ব্লকেই বসেছিলেন কুঁদঘাটের মনোজ দত্ত। তিনি বলেন, “প্রথমে কিছু খেয়ালই করিনি। নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত ছিলাম। বৃষ্টি কমতে দেখি, ওই কাঠামোটি ভেঙে পড়ে রয়েছে।” প্রথমে আবার শোনা গিয়েছিল, ওই কাঠামোর নীচে অনেকে চাপা পড়েছেন। বাস্তবে পরিস্থিতি ততটা ভয়াবহ হয়নি। মনোজবাবু বলেন, “ভেঙে পড়া কাঠামোর মধ্য থেকে পুলিশ দেখলাম কয়েক জনকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে বসেছিলাম তার খুব কাছেই ছিল কাঠামোটি।”
হাসপাতালে যে তিন দর্শককে নিয়ে যেতে হয়েছিল, পুরুলিয়ার সেই সৌরভ চৌধুরী, বাঁকুড়ার শুভ্রজিৎ মুকুটি, ইটাহারের বিশ্বজিৎ বসু মজুমদারেরা আক্ষরিক অর্থেই খেলা-পাগল। কেকেআরের খেলা দেখতে হোটেল ভাড়া করে তাঁরা থাকছিলেন কলকাতায়। সৌরভ-শুভ্রজিতের আত্মীয়রা থাকেন হাওড়ায়। হাসপাতাল থেকে সেখানেই গিয়েছেন তাঁরা। বিশ্বজিৎ আপাতত ফিরেছেন হোটেলে। ঝড়ের সময়ে পোদ্দার কোর্টের কাছে জানলার কাচ ভেঙে মাথায় পড়ে আহত হয়েছেন আশিস গুহ নামে এক পথচারী। তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। |