|
|
|
|
অশান্তিতে ভোগান্তি গরিবদেরই |
আবদুল কাদের |
জিটিএ কী তা ভালও ভাবে জানি না। তবে জিটিএ জাতীয় কিছু একটা নিয়ে যে বন্ধ হচ্ছে সেটা শুনেছি। আসলে দোকান করে ও সব নিয়ে মাথা ঘামানোর ফুরসত পাইনি। বন্ধের জন্য রবিবার দোকান খুলতে পারিনি। সোমবারও যে বনধ রয়েছে তা জানা ছিল। কিন্তু ৫ ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, মা-সহ রোজ দুই বেলা বাড়িতে আট জনের খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। বানারহাট মোড়ের ছোট গুমটি ঘরের পানের দোকান করে একার হাতে সংসার চালাই। পরপর দুই দিন দোকান বন্ধ থাকলে দু’বেলা খাওয়া জুটবে না। তাই সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ দোকানের সামনে দাঁড়াই। চারদিকের উত্তেজনাময় পরিস্থিতি দেখে আর দোকান খোলার সাহস পাইনি। ওই সময় বিভিন্ন জায়গায় বন্ধ সমর্থক আর বিরোধীরা জমা হয়ে ছিল। চুপচাপ দোকানের কাছে দাঁড়িয়ে থাকি। ভেবেছিলাম কিছুক্ষণ পরেই হয়ত সব মিটে যাবে। তখন হয়ত দোকান খুলতে পারব। হঠাৎ শুনি রেললাইনের ধারে বিবদমান দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। পটকা ফাটার শব্দ শুনি। কয়েক জন খবর দেয় পুলিশ নাকি গুলি চালাচ্ছে। তখন সকাল ১১টা হবে। সত্যি বা মিথ্যা আর খোঁজ নিয়ে দেখিনি। আতঙ্কে দৌড়তে শুরু করি। কিছুটা দৌড়ানোর পরেই বাজার এলাকায় কিছু লোক আমাকে ঘিরে ফেলল। তারা সমর্থক না বিরোধী বুঝিনি। কারও কারও হাতে পতাকা ছিল। আমাকে ধরেই ওরা মারধর করতে শুরু করল। খুকরি বার করে একজন দুই হাতে কোপ বসিয়ে দিল। পরপর চারটে কোপ। রক্তে জামা ভিজে গেল। অসহ্য যন্ত্রণায় জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। স্থানীয় লোকজই অ্যাম্বুল্যান্সে করে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে এসেছে বলে শুনি। কখনও কোনও দলের মিছিলে যাইনি। সংক্রিয় ভাবে কোনও দলও করি না। জিটিএ তো বুঝিই না। তবু আমাকেই কেন এই ভাবে কোপানো হল বুঝতেই পারলাম না। দুই হাতের আঙুলগুলি ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে। আর পান বানাতে পারব কি না কে জানে! বছর সাতেক আগে লটারি বিক্রি করে সংসার চালাতাম। অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে পান দোকান করেছিলাম। শুনলাম বানারহাট মোড়ের আমার দোকানটাও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বছর দু’য়েক আগে গোলমালে আমাদের মত ছোট ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এবারও তাই হল। শান্তিতে দোকান চালিয়ে যাতে খেতে পারে, তাই তো শুধু সরকারের কাছে চেয়েছিলাম।
|
(প্রতিবেদক বানারহাটের একটি পানের দোকানের মালিক) |
|
|
|
|
|