দফায় দফায় তাণ্ডব তরাই-ডুয়ার্সে
রেল ও সড়ক অবরোধ, দোকানে আগুন থেকে বিপক্ষকে যথেচ্ছ ঢিল ছোঁড়া-সহ সোমবার তরাই ডুয়ার্স যৌথ মঞ্চের ডাকা অনির্দিষ্টকালের বন্ধকে ঘিরে সোমবার তাণ্ডবের সাক্ষী রইলেন তরাই ও ডুয়ার্সের বাসিন্দারা। এদিন সকাল থেকে মঞ্চের সমর্থকেরা দফায় দফায় রেল ও ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। বানারহাট ও ওদলাবাড়িতে জোর করে দোকান খোলানোর চেষ্টা হলে প্রতিরোধ করেন জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির সদস্য-সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। তার জেরে দু’পক্ষে সংঘর্ষ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বানারহাটে মঞ্চের সমর্থকেরা ১১টি দোকানে আগুন লাগিয়ে দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশকে শূন্যে গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে হয়। বিকেলে বানারহাটে তিন প্ল্যাটুন এসএসবি জওয়ান নামানো হয়। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শূন্যে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিশ পক্ষপাত করেনি।”
মেটেলি থেকে চালসা যাওয়ার পথে সমর্থকদের আটকাল পুলিশ। ছবি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে জখমের সংখ্যা শতাধিক। তার মধ্যে বানারহাটে জখম হয়েছেন ৬ জন। সেখানকার জখম এক ব্যবসায়ীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং একজনকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তবে এই অশান্তির পরিবেশের মধ্যেও এদিন ডুয়ার্স ও তরাইয়ে অধিকাংশ চা বাগান খোলা ছিল। জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল তরাইয়ে। ডুয়ার্সেও জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি প্রভাবিত এলাকাগুলিতে জনজীবন স্বাভাবিক ছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। মঞ্চের তরফে এদিনের বনধ সফল বলে দাবি করা হয়েছে। পাল্টা দাবি করেছে জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি। পরিস্থিতি আয়ত্বে রাখতে পুলিশ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে এবং এলাকায় চরম অশান্তির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ তুলে ব্যবসায়ী, বাসিন্দারা দুপুরে বানারহাট থানায় বিক্ষোভ দেখান। সন্ধ্যায় মোমবাতি নিয়ে থানা পর্যন্ত পদযাত্রা করেন। নাগরাকাটায় সভা করতে না-দেওয়ার প্রতিবাদে মঞ্চের তরফে তরাই ও ডুয়ার্সে অনির্দিষ্টকালের বনধ ডাকা হয়েছে। বন্ধ সফল করতে এদিন মঞ্চের সমর্থকেরা রাস্তায় বার হতেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। শিলিগুড়ির পঞ্চনই, শালবাড়ি, বাগডোগার পানিঘাটা মোড়, পানিঘাটা, শালুগাড়া ও সেবকে বন্ধ সমর্থকরা রাস্তা অবরোধ করে। সকাল থেকে প্রায় ১২ টা পর্যন্ত ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। দার্জিলিংয়ে যাওয়ার রাস্তা দিনভর অবরোধ করে রাখা হয়। নকশালবাড়িতে একটি বাসে ভাঙচুর করে বন্ধ সমর্থকরা। পরে পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করে পানিঘাটা মোড় থেকে বনধ সমর্থকদের সরিয়ে দেয়।
জয়গাঁওয়ে বিমল গুরুঙ্গ। ছবিটি তুলেছেন নারায়ণ দে।
ডুয়ার্সে সাত সকালে ডুয়ার্সের বাগরাকোটে মোর্চা সমর্থকরা ৩১নম্বর জাতীয় সড়কের মিনা মোড়ে অবরোধ করেন। খবর পেয়ে মালবাজারের এসডিপিও অরিন্দম সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী গিয়ে জাতীয় সড়ককে অবরোধ মুক্ত করেন। তবে কালচিনিতে দিনভর অবরুদ্ধ ছিল জাতীয় সড়ক। ওদলাবাড়িতে মঞ্চের সমর্থকেরা দোকানপাট বন্ধ রাখার হুমকি দিলে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। দু’পক্ষের মধ্যে জাতীয় সড়কের উপরেই যথেচ্ছ ঢিল ছোঁড়াছুড়ি হয়। মঞ্চের সমর্থকেরা দুটি ছোট গাড়িতেও ভাঙচুর চালান। খবর পেয়ে ওদলাবাড়িতে নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করা হলে পরিস্থিতি আয়ত্বে আসে। মেটেলি থেকে একটি মঞ্চের সমর্থকদের একটি মিছিল চালসায় ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ সেটি আটকে দেয়। তবে ডুয়ার্সে এদিন সবচেয়ে বড় গোলমালের ঘটনা ঘটে বানারহাটে। সকাল আটটা নাগাদ একটি ষ্টেশনারি দোকানে বন্ধ সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ জানাতেই বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু দোকান খুলতে শুরু করেন। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বনধ সমর্থনকারীরা চামূর্চি মোড় থেকে পাল্টা মিছিল বার করলে বানারহাটের ব্যবসায়ী, শিক্ষক থেকে সাধারণ মানুষ রাস্তায় জড়ো হয়ে পাল্টা মিছিল করতে থাকেন।
বানারহাটে জ্বলছে দোকান। ছবি: রাজকুমার মোদক।
দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঠেকাতে বানারহাটের বুক চিরে যাওয়া রেলওয়ে লেবেল ক্রসিংয়ের উপর জনা কুড়ি পুলিশ কর্মী দাঁড়িয়ে পড়েন। এক ঘণ্টা ধরে ওই পরিস্থিতি চলার পর দুই পক্ষের লোকজন একে অপরকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়তে থাকেন। দুই পক্ষের সংঘর্ষে মোট ছয় জন জখম হয়। সে সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানোর পাশাপাশি শূন্যে রাবার গুলি ছোঁড়ে। সে সময়ে বনধ সমর্থনকারীরা পিছু হটে। ফেরার সময়ে তাঁরা চামূর্চি মোড়ে ১১ টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে বলে অভিযোগ। ধূপগুড়ি, মালবাজার দমকল কেন্দ্র ও বিন্নাগুড়ি সেনা ছাউনি থেকে
জখম যুবক।
ছবি: রাজকুমার মোদক।
দমকলের ইঞ্জিন পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ডুয়ার্স-তরাই নাগরিক মঞ্চ সংগঠনের কার্যকারী সভাপতি ল্যারি বসু বলেন, “দোকান পোড়ানো ও হামলার ঘটনা কিছুতে মানা যায় না।
বানারহাটের ঘটনায় মঙ্গলবার কালা দিবস পালন করা হবে।” অগ্নিসংযোগের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছে বানারহাট ব্যবসায়ী সমিতি। সংগঠনের সম্পাদক বিজয় বড়ুয়ার বক্তব্য, ১১ টা দোকানের মালিককে রাজ্য সরকার যাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া দরকার। প্রশাসনের ব্যর্থতার জন্য বানারহাট এদিন অগ্নিগর্ভ হয় বলে মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা নয়ন দত্তও। তিনি বলেন, “পুলিশ প্রশাসনের ভুমিকা সঠিক হলে আজ এ অবস্থা এড়ানো যেত।” প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্য এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হল বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা সজল রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় পুলিশ মোতায়েন হলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না। আদর্শ
বানারহাটের রেডব্যাঙ্ক চা বাগানের কাছে জ্বলছে ট্রাক। ছবি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক।
বিদ্যামন্দিরের শিক্ষক অশোক কুমার ঝা, বানারহাট বয়েজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকল্যাণ ভট্টাচার্যও এদিন রাস্তায় নামেন। তাঁদের বক্তব্য, “এখানকার মানুষ কী ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছেন তা সরকারকে বুঝতে হবে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে বলে সাধারণ মানুষ পথে নেমেছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.