সরকার গড়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি পূরণে ‘ব্যর্থতা’র অভিযোগে যখন সরব হয়েছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাংশ, সেই সময় সরকারের ‘পাশে’ দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। রাজ্য সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির কাছাকাছি এসে সেই সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীরই অভিযোগ, ‘গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক’ পরিস্থিতি তৈরি করছে রাজ্য প্রশাসন এবং প্রধান শাসক দল তৃণমূল!
রবিবার নদিয়ার কালীগঞ্জে একটি মাদ্রাসা ‘দখলের’ জন্য জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের রাজ্য সম্পাদক সিদ্দিকুল্লাকে ঘেরাও করে রাখা হয়। তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছিল বলেও সিদ্দিকুল্লার অভিযোগ। তৃণমূলের দুই প্রথম সারির নেতা তথা মন্ত্রী মুকুল রায় এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকেই যোগাযোগ করেন সিদ্দিকুল্লা। পরে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ গিয়ে ওই মাদ্রাসার ‘কর্তৃত্ব’ নিজেদের হাতে নেওয়ার কথা বলেন বলে পরিচালন কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুল্লার অভিযোগ। যদিও তাঁর দাবি, দেওবন্দের নিয়ম মোতাবেক কমিটির বৈঠক না-ডেকে এ ভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কাউকে পদচ্যুত করা যায় না। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই সোমবার সিদ্দিকুল্লা (ওই মাদ্রাসার সভাপতি ছিলেন ১৪ বছর) বলেছেন, “সিপিএমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমরা পরিবর্তন চেয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে বলেছিলাম, ভাল করে সরকার চালান। আমরা সহযোগিতা করব। এখন এরা (তৃণমূল) আগুন নিয়ে খেলছে! পুলিশ-প্রশাসন সেই দলের তল্পিবাহক হয়ে গিয়েছে! গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক পরিস্থিতি!” দলের নিচু তলায় তৃণমূল নেতৃত্বের ‘নিয়ন্ত্রণ’ নেই বলেও মন্তব্য তাঁর।
সিদ্দিকুল্লার এই অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করেননি মুকুলবাবু। স্থানীয় বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আগেই দাবি করেন, কালীগঞ্জের মাদ্রাসায় গোলমাল হয়নি। সিদ্দিকুল্লার পাল্টা বক্তব্য, কর্মী-সমর্থকদের ‘উচ্ছৃঙ্খলতার কাছে আত্মসমর্পণ’ করেছেন বিধায়ক! ৫০টি গ্রাম ওই মাদ্রাসার অধীনে থাকলেও শুধু রাউতাড়া গ্রামের কিছু তৃণমূল সমর্থকের বিক্ষোভের কাছে ‘নতিস্বীকার’ করা হয়েছে। প্রতিবাদে ২৬ এপ্রিল কলেজ স্কোয়ার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত মিছিল করে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে দাবিপত্র দিতে যাবে ওই মাদ্রাসা কমিটির প্রতিনিধিদল। সিদ্দিকুল্লার বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী ডাকলে একশো বার আলোচনায় যাব! কিন্তু ওঁকে কেউ বা কারা মনে হচ্ছে ভুল তথ্য দিচ্ছেন!” সংবিধান অনুযায়ী, সংখ্যালঘু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সরকার বা দল হস্তক্ষেপ করতে পারে না, এই তথ্য শাসক দল কী ভাবে অস্বীকার করছে প্রশ্ন সিদ্দিকুল্লার। তাঁর দাবি, “পরিবর্তনকে রক্ষা করতে দায়িত্বশীল হতে হবে। ওই বিধায়কের পদত্যাগ এবং শাস্তি চাই।” |