একেবারেই শান্তিজলের মতো করে রবিবার শেষ রাতে কোথাও কোথাও ছিটেফোঁটা। সোমবার সকালেও দু’চার ফোঁটা বৃষ্টি কোনও কোনও এলাকায়।
এটাকে সূচনা করেই যেন শেষ পর্যন্ত দানা বাঁধল নিম্নচাপ অক্ষরেখা। এবং একটা নয়, একেবারে দু’-দু’টো। বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে একটা। অন্যটি বায়ুমণ্ডলের খুবই নীচের স্তরে।
দহন-জ্বালা জুড়োতে এই যুগল আবির্ভাবের প্রয়োজনও দেখছে হাওয়া অফিস। কারণ আলাদা আলাদা ভাবে তেমন বৃষ্টি নামানোর শক্তি নেই ওদের। কাজ করতে হবে যৌথ ভাবে। দু’টি নিম্নচাপ অক্ষরেখা পরস্পরের সঙ্গে মিশে গেলে দক্ষিণবঙ্গ ভাল বৃষ্টি পাবে বলে আশা করছেন আবহবিদেরা। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে ওই দু’টি নিম্নচাপ অক্ষরেখার আশপাশের বায়ুপ্রবাহের উপরে।
সোমবার বিকেলে উপগ্রহ-চিত্রে দেখা যায়, বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের খুব নিচু স্তরে তৈরি হয়েছে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা। আবার বিহার থেকে মধ্য ভারত পর্যন্ত দ্বিতীয় একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “দু’টি নিম্নচাপ অক্ষরেখার কোনওটিরই নিজের থেকে ভারী বৃষ্টি নামানোর ক্ষমতা নেই। দু’টি নিম্নচাপ অক্ষরেখা যদি পরস্পরের সঙ্গে মিশে যায়, একমাত্র তা হলেই বৃষ্টি পাবে দক্ষিণবঙ্গ। কবে এবং কোথায় তারা পরস্পরের সঙ্গে মিশতে পারে, সেই সম্ভাব্য মিলনের উপরে নজর রাখছি আমরা।”
ওই দু’টি নিম্নচাপ অক্ষরেখার উপরে ভরসা রেখেই বুধবারের মধ্যে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। কিন্তু দু’টি অক্ষরেখা যদি শেষ পর্যন্ত পরস্পরের সঙ্গে মিশতে না-পারে, তা হলে কী হবে? আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, সে-ক্ষেত্রে স্থানীয় ভাবে বৃষ্টি হবে কোথাও কোথাও। যেমন হয়েছে রবিবার শেষ রাতে এবং সোমবার সকালে। কলকাতা ও শহরতলির কোনও কোনও এলাকা হাল্কা বৃষ্টি পেয়েছে।
বৃষ্টি তেমন না-হলেও ওই দুই নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাবে এ দিন তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি পেয়েছে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলি। অস্বস্তি কমেছে কলকাতাতেও। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস (রবিবার ছিল ৩৯.২, এ দিন ৩৭ ডিগ্রি) কমে গিয়েছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমেছে দুই ডিগ্রি করে (৪২ ডিগ্রি থেকে কমে হয়েছে ৪০ ডিগ্রি)। দুই নিম্নচাপ অক্ষরেখার জেরে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে আজ, মঙ্গলবার আরও জলীয় বাষ্প ঢুকবে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। তাঁদের আশা, বাড়তি জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির কারণে তাপমাত্রা আর তেমন বাড়তে পারবে না।
আবহবিদেরা বলছেন, কয়েক দিন ধরেই পূর্ব ভারতের আবহাওয়া কিছুটা খেয়ালি আচরণ করছে। কাশ্মীর দিয়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতে ঢোকা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আর বাংলাদেশের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্ত পূর্ব ভারতের বায়ুপ্রবাহের উপরে যথেষ্টই প্রভাব বিস্তার করেছিল। ঝাড়খণ্ডে তাপমাত্রা বাড়লেও সেখানে বিপরীতমুখী বাতাস থাকায় জলীয় বাষ্প ঢুকতে পারছিল না। তাই কালবৈশাখীর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল না। আবার বাংলাদেশের ঘূর্ণাবর্ত বঙ্গোপসাগর দিয়ে ঢোকা জলীয় বাষ্প সে-দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। তাই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল গোটা দক্ষিণবঙ্গে।
সোমবার তৈরি হওয়া দু ’টি নিম্নচাপ অক্ষরেখা পরস্পরের সঙ্গে কোথায় কী ভাবে মিশবে, গোটা পূর্ব ভারতের আগামী কয়েক দিনের আবহাওয়া নির্ভর করছে তার উপরেই। তারা ঝাড়খণ্ডের উপরে গিয়ে মিশলে কালবৈশাখীর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আর দু’টি নিম্নচাপ অক্ষরেখা যদি সমুদ্রের কাছাকাছি মেশে, সে-ক্ষেত্রে তৈরি হতে পারে জোরালো ঘূর্ণাবর্ত। ওই দুই নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাবে ইতিমধ্যেই প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকেছে দক্ষিণবঙ্গে। তা থেকে ঠিক কতটা বৃষ্টি হবে, তা বলতে না-পারলেও আবহবিদেরা এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, এর ফলে তাপপ্রবাহ এবং অস্বস্তিকর অবস্থার অবসান হবে অনেকটাই। |