নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
উত্তরপাড়ায় কারখানার ৩১৪ একর ‘উদ্বৃত্ত’ জমি বিক্রি বাবদ বাড়তি পাওনা প্রায় ২০০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সোমবার হিন্দুস্থান মোটরস কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিল রাজ্য সরকার। এ দিন মহাকরণে রাজ্যের ভূমিসচিব রামদাস মিনা এবং শিল্প পুনর্গঠন দফতরের সচিব সুব্রত গুপ্তের সঙ্গে হিন্দুস্থান মোটরস সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং জেনারেল ম্যানেজারের এ বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। এক সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, ওই বৈঠকেই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সরকারের নির্দেশের কথা হিন্দুস্থান মোটরসের কর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। হিন্দুস্থান মোটরসের কর্তারা এ ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য জানানোর জন্য সরকারের কাছে ১৫ দিন সময় চেয়েছেন।
বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় কারখানার পুনরুজ্জীবনের জন্য ৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প রিপোর্ট পেশ করেছিলেন হিন্দুস্থান মোটরস কর্তৃপক্ষ। সে-জন্য তাঁরা সরকারের কাছে উত্তরপাড়া কারখানার উদ্বৃত্ত জমি বিক্রি করার অনুমতি চান। কারখানার পুনরুজ্জীবনের স্বার্থে ২০০৬ সালে হিন্দুস্থান মোটরসকে কারখানার ‘উদ্বৃত্ত’ ৩১৪ একর জমি বিক্রির অনুমতি দেয় বামফ্রন্ট সরকার। সরকারের সেই সিদ্ধান্ত তৎকালীন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছিল।
পুনরুজ্জীবন প্রকল্পে শ্রমিকদের পাওনাগণ্ডা মেটানোর কথাও বলেছিলেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, ওই পুনরুজ্জীবন প্রকল্প রূপায়ণ নিয়ে নানা অভিযোগ আসায় ২০০৯ সালে রাজ্য সরকার সেই ব্যাপারে রাজ্যের শিল্প পুনর্গঠন সচিব সুব্রত গুপ্তের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তদন্ত কমিটি তার রিপোর্টে বলে, ৮৫ কোটি টাকার পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার ৩১৪ একর জমি বিক্রির অনুমতি দিলেও সেই জমি বিক্রি করে কত টাকা পাওয়া গিয়েছে, হিন্দুস্থান মোটরস কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারকে কখনও তা জানাননি। অথচ ওই জমি হিন্দুস্থান মোটরস কর্তৃপক্ষ যাদের বিক্রি করেছিল, সেই বেঙ্গল-শ্রীরাম হাইটেক সিটি প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থা তদন্ত কমিটিকে জানায় যে, তারা ওই জমি ২৮৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনেছে।
তদন্ত কমিটি বলে, পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ৮৫ কোটির থেকে ওই পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা বেশি। প্রশ্ন ওঠে, যে জমির বাজার দর আসলে ২৮৫ কোটি টাকা, পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের ৮৫ কোটি টাকার জন্য সেই জমি কারখানা কর্তৃপক্ষকে বিক্রি করার অনুমতি সরকার দিয়েছিল কী ভাবে?
তদন্ত কমিটি আরও বলে, ৮৫ কোটি টাকার পুনরুজ্জীবন প্রকল্পও ঠিক মতো রূপায়িত হয়নি। এর পর অর্থ দফতরের অভ্যন্তরীণ অডিট (ইন্টারনাল অডিট) শাখাকে দিয়ে ওই ব্যাপারে আরও তদন্ত করানোর নির্দেশ দেয় পূর্বতন সরকার। সেই তদন্তেও সুব্রত গুপ্ত কমিটির দেওয়া তথ্যেরই সমর্থন মেলে।
সোমবারের বৈঠকে রাজ্য সরকারের তরফে হিন্দুস্থান মোটরসের কর্তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের ৮৫ কোটি টাকা জোগাড়ের জন্য তাদের ৩১৪ একর জমি বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই জমি বিক্রি করে তাঁরা যখন প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা পেয়েছেন, তখন বাড়তি ২০০ কোটি টাকা তাঁরা সরকারকে ফেরত দিন। কারণ, কারখানার জমির মূল মালিক আদতে সরকার।
ওই জমি বিক্রি নিয়ে সরকারি স্তরে কোথাও কোনও অনিয়ম হয়েছিল কিনা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর সে ব্যাপারে ভিজিল্যান্স কমিশনকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। |