এ বার জঙ্গলমহলের মতো ‘প্যাকেজ’ চায় সিঙ্গুরও
জমি দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন যাঁরা
আশা ঘোষ নবকুমার ঘোষ চিত্তরঞ্জন ঘোষ শ্যামাপদ ঘোষ

২০০৬ সালের আগে পর্যন্ত উত্তর বাজেমিলিয়ার কমল খাড়া নিজের এক বিঘে পাঁচ কাঠা জমিতে চাষ করে দিব্য সংসার চালিয়ে নিতেন। কিন্তু সেই জমি চলে গিয়েছে টাটাদের প্রকল্প এলাকায়। এখন খেতমজুরি করেন। ঘরে বিবাহযোগ্য মেয়ে রয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, “কৃষিজমি বাঁচাও কমিটি করে আমরা আন্দোলন করলাম। আর এখন দল বেমালুম ভুলে গেল? এখন আর কোনও নেতাকে দেখতে পাই না। কী ভাবে মেয়ের বিয়ে দেব জানি না।”
বস্তুত, আন্দোলন-পর্বে সিঙ্গুরে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা ‘অনিচ্ছুক’ গ্রামবাসীদের সুবিধা-অসুবিধা দেখতেন। কারও চিকিৎসা বা পড়াশোনার প্রয়োজনে সাহায্য করতেন। কিন্তু এখন সে সব আর হয় না বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। যেমন, সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ির শ্যামাপদ ঘোষ বা বারোহাত কালীতলার বাসিন্দা গোপাল মালিকের ক্ষোভ, “গ্রামে তৃণমূল নেতাদের আনাগোনা কমে গিয়েছে। আমরা বাঁচি কী মরি, তাতে ওঁদের মনে হয় আর কিছু যায় আসে না। আবার হয়তো পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে ওঁদের দেখা মিলবে।”
গ্রামবাসীদের এই অভিযোগ নিয়ে কী বলছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা?
সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়ে যিনি ছিলেন পুরোভাগে, সেই বেচারাম মান্না এখন হরিপালের বিধায়ক। তাঁর দাবি, “আমি ওখানে যাই না, এ কথা ঠিক নয়। চাষিদের মতামত আমি সব সময়েই দলনেত্রীকে জানাই। গ্রামবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। ওখানকার লোকও আমার কাছে আসেন।” আর সিঙ্গুরে তৃণমূল বিধায়ক তথা কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য চাষিদের আর্থিক দুর্দশার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “চাষিদের তরফে প্রস্তাব এসেছে আর্থিক সহায়তার জন্য। তাঁরা দলের সঙ্গেও কথা বলতে চান। এই পরিস্থিতিতে আমরা চাষিদের প্রস্তাব দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানাব।”
আপাতত ঠিক কী চাইছেন সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’রা?
জমি যে এখনই ফেরত পাওয়া যাবে না তা তাঁরা বিলক্ষণ বূঝে গিয়েছেন। গ্রামবাসীরা চান, জঙ্গলমহলের তিনটি জেলার জন্য রাজ্য সরকার যেমন বিশেষ ‘প্যাকেজ’-এর ব্যবস্থা করেছে, অন্তত তেমন কিছু করা হোক। সিঙ্গুর কৃষিজমি আন্দোলনের নেতা মহাদেব দাস বলেন, “আইনের জটে চাষিদের জীবিকা আটকে গিয়েছে। তাঁদের জন্য সরকার বা দলের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।” বেড়াবেড়ি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন ঘোষ বা খাসেরভেড়ির নবকুমার ঘোষও বলছেন, “জঙ্গলমহলের মানুষের মতো আমরাও তো একটা বিশেষ পরিস্থিতির শিকার। তা হলে আমাদের জন্য কেন সরকার বা দল কিছু ব্যবস্থা করবে না?”
সিঙ্গুরের কৃষিজমি রক্ষা আন্দোলনের আর এক নেতা পূর্ণেন্দু বসু এখন শ্রমমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ওই এলাকায় মানুষের ক্ষোভ থাকলে আর্থিক সহায়তার প্রশ্নে সরকারের চিন্তাভাবনা করার সুযোগ রয়েছে। ওখানকার পরিস্থিতির উপরে আমাদের দলীয় নেতারা নজর রাখছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।”
কিন্তু আদৌ সরকার ‘সাহায্যে’র হাত বাড়াবে কি না, তা নিয়ে সিঙ্গুরের সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.