|
|
|
|
আলোচনায় রাজি সরকার |
মাওবাদীদের শর্ত মেনে অভিযান বন্ধ ছত্তীসগঢ়ে |
তাপস সিংহ • কলকাতা |
সুকমার জেলাশাসকের মুক্তির জন্য মাওবাদীদের একটি শর্ত আপাতত মেনে নিল ছত্তীসগঢ় সরকার। রবিবার সুকমার জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেননের মুক্তির জন্য ‘অপারেশন গ্রিন হান্ট’ বন্ধের দাবি জানিয়েছিল মাওবাদীরা। প্রকাশ্যে স্বীকার না করা হলেও প্রশাসন সূত্রে খবর, বস্তার এলাকায় মাওবাদী অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে। আট বন্দিকেও ছাড়ার দাবি জানিয়েছে মাওবাদীরা। সেই ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে অপহরণকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ছত্তীসগঢ় সরকার পাঁচ সদস্যের একটি দল গড়েছে। সোমবার নিজের বাসভবনে সর্বদল বৈঠকও করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ। বৈঠকের পর তিনি বলেন, “সরকার আলোচনা করতে রাজি। মাওবাদীরা মধ্যস্থতাকারীর নাম জানাক।” সোমবার বেশি রাতে সংবাদমাধ্যমের একটি সূত্রে দাবি করা হয়, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য তিন জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে মাওবাদীদের তরফে। এঁরা হলেন প্রশান্ত ভূষণ, বি ডি শর্মা ও মণীশ কুঞ্জম।
যে আট জেলবন্দিকে মুক্তির দাবি জানিয়েছে মাওবাদীরা, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অসিতকুমার সেন। তিনি ‘ওয়ার্ল্ড টু উইন’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ইউএপিএ ধারায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। গত দু’বছর ধরে জেলেই রয়েছেন অসিতবাবু।
মেননকে মুক্ত করতে জোর তল্লাশিও চালাচ্ছেন পুলিশ এবং গোয়েন্দারা। পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার চালকহীন ছোট নজরদারি-বিমানের সাহায্যে মেননের সন্ধান চালায় সিআরপিএফ। বিমানের তোলা ছবি থেকে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, সুকমা ও মালকানগিরির সীমানায় তুলসিডোংরির কাছে তুলসিপুর এলাকার গভীর জঙ্গলে রাখা হয়েছে মেননকে। সঙ্গে রয়েছেন ৩৫০ থেকে ৪০০ জন। পুলিশের ধারণা, তাঁদের মধ্যে ১৫০ জন মাওবাদী, বাকিরা গ্রামবাসী। পুলিশের সন্দেহ, জেলাশাসককে মুক্ত করতে অভিযান চালানো হলে ওই গ্রামবাসীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে মাওবাদীরা। তবে বিমানের ব্যবহার নিয়ে পুলিশের মধ্যেই মতবিরোধ রয়েছে। পুলিশের একাংশের মতে, খুব উঁচু থেকে ছবি তোলার জন্য এতে
সব সময় সঠিক ছবি পাওয়া যায় না। তা ছাড়া ওই বিমান ব্যবহারের কথা মাওবাদীরা জানতে পারলে জেলাশাসকের প্রাণসংশয় পর্যন্ত হতে পারে।
গত শনিবার কেরলাপালের মাঝিপাড়া গ্রাম থেকে মাওবাদীরা অপহরণ করে জেলা শাসককে। পুলিশ সূত্রে খবর, মেনন অপহরণে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামান্না। ছত্তীসগঢ়ের মতো একই সমস্যায় ওড়িশা সরকারও। সেখানেও ৩০ দিন ধরে মাওবাদীদের হাতে বন্দি রয়েছেন বিজেডি বিধায়ক ঝিনা হিকাকা। পুলিশের ধারণা, হিকাকার অপহরণের পিছনেও রামান্নার হাত থাকতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ রায়পুরে বলেন, “মেনন অপহরণ হওয়ার পর থেকেই রাজ্য কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকেও এই ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।” ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন রমন। উদ্বিগ্ন কেন্দ্রও। মাওবাদীদের কবল থেকে পণবন্দিদের মুক্ত করতে নির্দিষ্ট নীতি তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। এই ব্যাপারে পরামর্শ করার জন্য সমস্ত রাজ্যকে শীঘ্রই চিঠি লিখতে চলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
মেননকে ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী বিনায়ক সেন। সোমবার তিনি ফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, “জেলা শাসককে নিঃশর্ত মুক্তির আবেদন জানাচ্ছি। শুধু অস্ত্রের ব্যবহার করে মূল সমস্যার সমাধান হবে না। তার জন্য বিভিন্ন মত প্রকাশের অধিকারকে সম্মান করতে হবে।” |
|
|
|
|
|