|
|
|
|
সংসদের অধিবেশন আজ |
সংস্কারের লক্ষ্যে বিজেপিকে পাশে চাইছে কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
শুধু শরিক-সমর্থকদের তুষ্ট করে চলাই নয়, আর্থিক সংস্কারের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে এ বার কেন্দ্রে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-র সঙ্গেও সমঝোতা করে চলতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কাল থেকে সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে। তার আগে সমন্বয়ের এই বার্তা দিয়ে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনশল আজ বলেন, “অর্থবিল পাশ করানোর পরেই আর্থিক সংস্কারের বিষয়গুলি সংসদে পাশ করাতে সচেষ্ট হবে সরকার। সে দিক থেকে পেনশন ও বিমা বিলে সমর্থনের ব্যাপারে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি যে আশ্বাস দিয়েছেন, তা ইতিবাচক।” সংসদে শিক্ষা সংক্রান্ত ১৬টি বিলের বদ্ধ দশা কাটাতেও সরকার যে বিজেপি-র সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে, তা আজ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বল। তবে আলোচনার প্রক্রিয়া চললেও অন্য বিভিন্ন বিষয়ে সরকারকে যে সংসদে বিজেপির তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে, তা কংগ্রেস নেতৃত্ব ভালই জানেন।
প্রধানমন্ত্রী-সহ মন্ত্রিসভার শীর্ষ কংগ্রেস সদস্যদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের অধিকারের প্রশ্নে ইদানীং বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা যে ভাবে সরব হয়েছেন, তা একেবারেই তাঁদের নিজ নিজ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ হল কেন্দ্রের উপর চাপ সৃষ্টি করে আরও বেশি আদায় করে নেওয়ার রাজনীতি। এই চাপের মুখে সরকার কোনও কাজ করতে পারছে না। ফলে কংগ্রেসেরও কৌশল পরিবর্তন প্রয়োজন। বিশেষ করে সংস্কারের প্রশ্নে বিজেপি-র সঙ্গে সমঝোতা করে চলাই হবে বুদ্ধিমত্তা। কারণ আর্থিক সংস্কারের বিষয় নিয়ে কংগ্রেস-বিজেপি নীতির বিশেষ ফারাক নেই। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের কারণে বিজেপি-কে ধারাবাহিক ভাবে রাজনৈতিক আক্রমণ করতে হয়েছে কংগ্রেসকে। কিন্তু এখন কোনও ভোট নেই।
জোট বাধ্যবাধকতার জন্য সংস্কারের কাজ থমকে গিয়েছে বলে মন্তব্য করে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রকের উপদেষ্টা কৌশিক বসু যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন, তা সামাল দিতে মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। এ বছরই পেনশন, ব্যাঙ্কিং এবং বিমা আইন পাশ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আজ সেই প্রসঙ্গে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, “প্রণববাবু বর্ষীয়ান নেতা ও মন্ত্রী। তিনি যখন এ কথা বলেছেন, তখন নিশ্চয়ই ওই তিনটি বিল এ বার সংসদে পাশ হবে।” এই সূত্রেই বিজেপি-র সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি জানান পবন বনশল।
সরকারের শীর্ষ নেতারা তাঁদের সঙ্গে যে আলোচনা করছেন, তা আজ বিজেপি-ও স্বীকার করেছে। বরং এনডিএ-র বৈঠকের পর একধাপ এগিয়ে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী আজ বলেন, “বিজেপি-ও আর্থিক সংস্কারের পক্ষে। সরকারের শীর্ষ নেতারা যদি সংসদের দুই কক্ষের বিরোধী দলনেতাদের ডেকে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রুদ্ধদ্বার আলোচনা করেন, বিজেপি-র পরামর্শ শোনেন, বিজেপি সংস্কারের পথ আটকাবে না।” অরুণ জেটলির বক্তব্য, দেশের স্বার্থে আর্থিক সংস্কারের পক্ষপাতী বিজেপিও। তবে এও ঠিক যে পেনশন, বিমা বিলের ক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটির আলোচনায় বিজেপি যে সব সংশোধন প্রস্তাব দিয়েছে তাও সরকারকে মেনে নিতে হবে। জেটলির এই বক্তব্যের জবাবে, পবন বনশল বলেন, সংস্কারের বিলগুলি নিয়ে স্থায়ী কমিটির সব পরামর্শ অর্থ মন্ত্রক বিবেচনা করছে। কপিল সিব্বলের বক্তব্য, “শিক্ষা সংক্রান্ত বিলগুলি নিয়ে স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ৮০ থেকে ৯০%-ই সরকার মেনে নিয়েছে।”
এ বার সংসদে লোকপাল বিল পাশ করানোর জন্যও কেন্দ্রের ওপর চাপ রয়েছে। এ ব্যাপারে কিছু দিন আগেই সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আজ তাঁর সচিবালয়ের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী বলেন, “বিরোধীদের আনা ১৪৯টি সংশোধন প্রস্তাব সরকার বিবেচনা করেছে। এর মধ্যে পাঁচ থেকে ছ’টি বিষয় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলি নিয়ে ঘরোয়া স্তরে আলোচনা করে সর্বসম্মতি গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।” তবে বিভিন্ন বিল পাশ করানোর ক্ষেত্রে বিজেপি-র সঙ্গে সমঝোতায় সচেষ্ট হলেও, কংগ্রেসের কাছে এ-ও পরিষ্কার যে বিভিন্ন বিষয়ে সংসদে তাদের আক্রমণের মুখে পড়তে হবে। বিজেপি-ও আজ জানিয়েছে, তারা মাওবাদী সমস্যা, আর্থিক সংকট, প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির মতো বিষয়ে সংসদে আলোচনা চাইবে। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিও দাবি করবেন। |
|
|
|
|
|