রাজনৈতিক দলাদলির ছবিটা ক্রমশ জোরদার হচ্ছে কলকাতা বিমানবন্দরে। গত শুক্রবার দলাদলির কারণে ভেস্তে গিয়েছিল বিমানবন্দরের কর্মী সমবায় নির্বাচন। সোমবারে দু’দলের বিরোধে কর্মীদের একাংশ প্রায় চার ঘণ্টা কাজ বন্ধ রাখলেন। এর জন্য কলকাতা থেকে বিমান ওঠা-নামায় সমস্যা দেখা না দিলেও বেশ কিছু পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। বিমানবন্দরের অফিসারদের আশঙ্কা, রাজনৈতিক দলাদলি এ ভাবে বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যায় পড়তে পারেন যাত্রীরা।
সোমবারের গণ্ডগোলের জন্য অভিযোগের আঙুল উঠেছে প্রধানত তৃণমূল সমর্থিত কর্মী ইউনিয়নের দিকে। অভিযোগ, তাঁরা বাইরে থেকে সমর্থকদের এনে প্রশাসনিক ভবনের গেট আটকান । সেখানেই সিপিএম ঘেঁষা ইউনিয়নের সমর্থকদের মিটিং করার কথা ছিল। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিল্ডিংয়ের কর্মীরা তাতে যোগ দিতে এলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। কর্মীদের মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “আমাদের দলের নীতি এটা নয়। কোনও গণ্ডগোল বরদাস্ত করব না।”
বিমানবন্দরের কর্মী শম্পা দত্ত বলেন, “সাড়ে এগারোটা নাগাদ প্রশাসনিক বিল্ডিংয়ে ঢুকতে গেলে কয়েক জন পুরুষ সহকর্মী হাত জোড় করে চলে যেতে বলেন। যেতে না চাইলে এক মহিলা কর্মী ধাক্কা মেরে বার করে দেন আমাকে।” অভিযোগ, কর্মীদের ধরে ধরে বাম ইউনিয়ন থেকে ইস্তফা দিতে হবে বলে তৃণমূলের তরফে হুমকি দেওয়া হয়। প্রতিবাদে কাজ বন্ধ করে দেন কিছু কর্মী। নিরাপত্তার দাবিতে বিমানবন্দরের দুই অফিসার গোপাল ভট্টাচার্য এবং মনোজ বেহরাকে অভ্যন্তরীণ বিল্ডিংয়ে ঘেরাও করে রাখেন তাঁরা। বিমানবন্দরের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ এবং দর্শনার্থীদের টিকিট কাউন্টার বন্ধ হয়ে যায়। বিমানবন্দর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ঘোষণা, পণ্য বিভাগে কর্মীসংখ্যা কমে যায়। তবে বিমান ওঠা-নামা ব্যাহত হয়নি। বাম-ঘেঁষা এয়ারপোর্ট অথরিটি এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, “আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত। ভয় পেয়ে কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বিকেলে বিমানবন্দরের অধিকর্তা আমাদের আশ্বস্ত করায় ফের কাজ শুরু হয়।”
বিমানবন্দর সূত্রে খবর, এই অবস্থার মধ্যেই বিকেল চারটেয় শাহরুখ খান ছোট বিমানে কলকাতায় নামেন। ব্যক্তিগত বিমান নামার পরেই ল্যান্ড ও পার্ক করার টাকা মেটাতে হয়। কিন্তু সেখানকার কর্মীরাও কাজ বন্ধ করে দেন। অন্য বিভাগের কর্মীদের দিয়ে শেষে কাজ করানো হয়। শাহরুখকে অবশ্য আটকে থাকতে হয়নি। চারটে দশের মধ্যেই বেরিয়ে যান তিনি।
অভিযোগের তির যাঁদের দিকে, সেই তৃণমূল সমর্থিত ইউনিয়নের নেতা প্রদীপ সিকদার বলেন, “শুক্রবারের সমবায় নির্বাচন ভেস্তে যাওয়ার পরে তা নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে আমাদের প্রচার চলছিল। সেই সময়ে ওরা বৈঠক করতে ঢুকছিল। আমরা মানা করেছিলাম।” প্রদীপবাবুর পাল্টা অভিযোগ, অন্যায় ভাবে এ দিন কাজ বন্ধ করে দীপঙ্করবাবুরা চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। কর্তৃপক্ষও তাঁদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এর ভিতরে উড়ান চলাচল স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি।” |