অন্যদের সঙ্গেই পরীক্ষা দিয়েছিল ওরা। পরীক্ষার হলে উত্তরপত্রও জমা দিয়েছিল নিয়ম মাফিক। কিন্তু বাকিদের সঙ্গে ওদের পার্থক্য একটাই। দেড় মাস আগে শেষ হয়ে যাওয়া পরীক্ষায় ফের বসতে হবে ওদের। কারণ, ওদের জমা দেওয়া খাতাগুলির হদিস নেই।
মডার্ন হাই স্কুল ফর গার্লস এবং ফ্র্যাঙ্ক অ্যান্টনি পাবলিক স্কুলের এ বারের আইসিএসই পরীক্ষার্থীদের আগামী ৩০ এপ্রিল ফের ভূগোল পরীক্ষায় বসতে হবে। সোমবার দুই স্কুলের তরফেই অভিভাবকদের ডেকে এ কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই পড়ুয়ারা একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু করে দিয়েছে। মানসিক ভাবে তারা আরও এক বার ওই পরীক্ষা দেওয়ার অবস্থায় নেই বলে অভিভাবকদের অনেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্যের ‘গাফিলতি’র মাসুল দিতে হচ্ছে এক দল কিশোর-কিশোরীকে।
আইসিএসই-র ভূগোল পরীক্ষা হয়েছে গত ৭ মার্চ। ২৮ মার্চ সব পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে। হঠাৎই এ দিন অভিভাবকদের ডেকে জানানো হয়, ভূগোলের খাতার খোঁজ মিলছে না। সেই কারণেই কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ওই দুই স্কুলের পরীক্ষার্থীদের আরও এক বার ভূগোল পরীক্ষায় বসানো হবে। তবে এর জন্য আইসিএসই-র ফলপ্রকাশে বিলম্ব হবে না বলে সংস্থার কর্ণধার জেরি অ্যারাথুন এ দিন জানিয়েছেন।
লিলুয়ার অগ্রসেন বালিকা শিক্ষা সদনে আইএসসি-র দ্বিতীয় ভাষা বাংলার খাতারও একই হাল। সেই খাতারও হদিস নেই। ২৬ এপ্রিলের মধ্যে খাতা পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট ছাত্রীদের ২৭ এপ্রিল আবার বাংলা পরীক্ষা দিতে হবে বলেও বোর্ড জানিয়েছে।
পরীক্ষার পরে খাতা হারিয়ে যাওয়া এবং আবার একই পরীক্ষা দিতে বাধ্য হলে অল্পবয়সী ছাত্রছাত্রীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিশু মনোবিদ হিরণ্ময় সাহা। তাঁর মতে, জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার জন্য ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এক ধরনের মানসিক প্রস্তুতি থাকে। এ ভাবে খাতা হারিয়ে গেলে এবং আবার পরীক্ষা দিতে হলে ভবিষ্যতে পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে মানসিক ভীতি কাজ করতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে এর জেরে এক ধরনের অবসাদও তৈরি হতে পারে।
অভিভাবকদের কারও কারও আশঙ্কা, অত্যন্ত অনিচ্ছা থেকে পরীক্ষায় বসতে হবে বলে তাঁদের ছেলেমেয়েদের ওই বিষয়ের ফল আশানুরূপ না-ও হতে পারে। মডার্ন হাই স্কুলের অধ্যক্ষা দেবী কর অবশ্য বলেন, “আমার স্কুলে মোট ১৬৬ জন আইসিএসই ছাত্রী আছে। ওদের পক্ষে এক দিকে ভালই হয়েছে। আগের পরীক্ষায় যদি কেউ খারাপ করে থাকে, তা হলে এ বার ভাল করতে পারবে।” তবে ফ্র্যাঙ্ক অ্যান্টনি পাবলিক স্কুলের অধ্যক্ষ ই এন মায়ার বলেন, “সন্দেহ নেই, এতে ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধা হবে। এমন হওয়া মোটেই বাঞ্ছনীয় ছিল না। কিন্তু উপায় নেই।” কিন্তু পরীক্ষা-কেন্দ্র থেকে কাউন্সিলে যাওয়ার বদলে খাতা বেপাত্তা হল কী করে? মডার্ন হাই স্কুলের অধ্যক্ষা জানান, কাউন্সিলের নির্দেশেই একটি ক্যুরিয়র সংস্থার মাধ্যমে খাতা পাঠানো হয়। কিন্তু গত সপ্তাহে কাউন্সিল থেকে জানানো হয়, ভূগোল খাতা পৌঁছয়নি।
খাতা যে মিলছে না, তা জানতে এত সময় লাগল কেন? কাউন্সিলের কর্ণধার জানান, পরীক্ষার দিন দশেক পরে মূল্যায়নের জন্য খাতা বিতরণের সময়ে দেখা যায়, ওই দু’টি স্কুল থেকে ভূগোলের খাতা পৌঁছয়নি। কাউন্সিল নিজেদের প্রক্রিয়া খুঁটিয়ে দেখে, তার পরে সংশ্লিষ্ট দু’টি স্কুলকে জানায়। কাউন্সিল সূত্রে খবর, ওই দুই স্কুল প্রথমে যে কনসাইনমেন্ট নম্বর জানায়, তা ঠিক ছিল না। ফলে কিছু সময় চলে যায়। পরে আবার স্কুল থেকে ঠিক তথ্য পেয়ে তল্লাশি চলে। যদিও শেষ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ক্যুরিয়র সংস্থা খাতার হদিস দিতে পারেনি। |