নোনাডাঙায় বস্তি উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলনে গোলমাল পাকানোর অভিযোগে গত ৮ এপ্রিল দেবলীনা চক্রবর্তী ও অভিজ্ঞান সরকারকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। সেই মামলায় তাঁদের জামিন তো হলই না। তার উপরে নন্দীগ্রামে মাওবাদীদের গোপন বৈঠক সংক্রান্ত এক মামলায় অভিযুক্ত করা হল দু’জনকেই।
বস্তি উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতারের পরেই দেবলীনা ও অভিজ্ঞানকে ‘মাওবাদী সংস্রব’-এর একাধিক মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের তিন দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়ার জন্য সরকার পক্ষ সোমবার হলদিয়া আদালতে আবেদন করেছিল। এসিজেএম সর্বাণী মল্লিক চট্টোপাধ্যায় দুই অভিযুক্তকেই দু’দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। নোনাডাঙার ঘটনায় এ দিন দেবলীনা এবং অভিজ্ঞানের জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে গেলেও আলিপুর আদালত ওই মামলাতেই অন্য চার অভিযুক্তকে জামিন দিয়েছে। ওই চার জন হলেন সিদ্ধার্থ গুপ্ত, বাবন বন্দ্যোপাধ্যায়, শৌমিক চক্রবর্তী ও দেবযানী ঘোষ। |
নন্দীগ্রামে গোপন মাওবাদী বৈঠক করার ঘটনায় অভিযুক্ত অভিজ্ঞান সরকার
ও দেবলীনা চক্রবর্তী
হলদিয়া আদালতে। সোমবারের নিজস্ব চিত্র। |
এ দিন আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এই মামলার ছয় অভিযুক্তের জামিনের আবেদনের শুনানি হয়। ওই মামলার কেস ডায়েরিও এ দিনই পেশ করা হয় ভারপ্রাপ্ত বিচারক সুপর্ণা রায়ের এজলাসে। হলদিয়া মহকুমা পুলিশ এ দিন হলদিয়া আদালতে জানায়, ২০১১ সালের ১৮ নভেম্বর নন্দীগ্রামের গাংড়ায় মাওবাদীদের এক গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দেবলীনা ও অভিজ্ঞান। সঞ্জয় দাস নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ওই বৈঠক চলছিল। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে হানা দিয়ে সঞ্জয় (শুভ) ও পরশুরাম (নারায়ণ) দাস নামে দু’জনকে ধরে ফেলে। বাকিরা পালায়। সঞ্জয় ও পরশুরাম আপাতত জামিনে মুক্ত আছেন। তদন্তে অভিজ্ঞান, দেবলীনা এবং মাওবাদী সংগঠনের কয়েক জনের নাম পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। ২০০৯-এর ২২ সেপ্টেম্বর নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান নিশিকান্ত মণ্ডলের হত্যাকাণ্ডেও তেলুগু দীপক ও মধুসূদন মণ্ডলের সঙ্গে অভিজ্ঞান-দেবলীনারা অভিযুক্ত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নোনাডাঙার ঘটনায় দেবলীনা ও অভিজ্ঞান ছাড়া বাকি আট অভিযুক্তই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। বস্তি উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলনে গোলমালের জেরে পুলিশ প্রথম দফায় তিন জন এবং দ্বিতীয় দফায় সাত জনকে গ্রেফতার করেছিল। দ্বিতীয় দফায় ধৃতদের মধ্যে ছিলেন দেবলীনা, অভিজ্ঞান, বিজ্ঞানী পার্থসারথি রায়। সরকারি কাজে বাধাদান এবং অন্য একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। এই মামলায় পার্থসারথিবাবু-সহ চার অভিযুক্ত আগেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। এ দিন আরও চার জন জামিন পাওয়ায় ওই মামলায় এখন জেলে থেকে গেলেন শুধু দেবলীনা আর অভিজ্ঞানই। এ দিন ছয় অভিযুক্তের আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, “ইতিমধ্যে পার্থসারথি রায়-সহ চার অভিযুক্ত জামিন পেয়েছেন। বাকি ছ’জনের আইনগত অবস্থান একই। কেস ডায়েরিতে তদন্তের কোনও অগ্রগতিও দেখাতে পারেনি পুলিশ। এই অবস্থায় তাঁদের জামিন দিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।” দেবলীনার আইনজীবী শুভাশিস রায় সহমত প্রকাশ করেন।
সরকার পক্ষের আইনজীবী তপন সাহা বলেন, দেবলীনা-অভিজ্ঞানের জামিনের ব্যাপারে তাঁদের আপত্তি রয়েছে। বাকি চার জনের ব্যাপারে তাঁদের কিছু বলার নেই। তার পরেই দেবলীনা, অভিজ্ঞান ছাড়া বাকিদের জামিন মঞ্জুর হয়। |