‘লিড’ পেয়েই নিশ্চিন্ত লিডার
‘পরিবর্তনের ভোটে’ও চারশো ভোটের ‘লিড’। এখন যে কোনও জিজ্ঞাসার জবাবে সেই লিডের কথাই তুলছেন পার্টির ‘লিডার’।
‘কথা তুলছেন’ না বলে বলা ভাল, যে কোনও ত্যাড়াবাঁকা প্রশ্নের মুখে পড়লে গত বিধানসভা নির্বাচনের ওই লিডকেই ‘ঢাল’ করছেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর চন্দনা দে। পাল্টা বলছেন, “সে বার পুরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডে আমাদের দল পিছিয়ে যায়। কিন্তু আমার ওয়ার্ড সাড়ে চারশো ভোটের লিড দিয়েছিল।”
সিমেন্ট কলোনি, নর্থ সারদা পল্লি, চণ্ডীস্থান, রামকৃষ্ণপল্লি, আজাদনগর, রাজানগর, প্রেমনগর, তামলা কলোনি, বিধানপল্লি, লিঙ্ক পার্ক, স্টিল পার্ক মূলত এই নিয়ে ১৩ নম্বর। কিন্তু উন্নয়নের ‘আলো’ সর্বত্র সমান ভাবে পড়েনি। কেন সিপিএম এই ওয়ার্ডে ‘লিড’ পেয়েছিল, তা কিছুটা বোঝা যায় বিধানপল্লির মতো কিছু পাড়ায় গেলে। যেখানে জীবন সাহার মতো তৃণমূল সমর্থকও স্বীকার করেন, “আগের দুই কাউন্সিলর জানতেনই না, বিধানপল্লি কোথায়। চন্দনাদেবী আসার পরে এখানে রাস্তা হয়েছে। রাস্তায় আলো লাগানো হয়েছে।” রামকৃষ্ণপল্লির নূতন দেবী, চণ্ডীস্থানের ভোলাকুমার সাহা বা স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক মনোজকুনার সিংহেরাও একমত যে, উন্নয়ন হয়েছে।
রামকৃষ্ণপল্লিরই বিনোদ সিংহ, অশোক পান্ডেরা আবার মনে করেন, “পরিকল্পিত কোনও উন্নয়নই হয়নি। যা হয়েছে তা নিতান্ত দায়সারা।” কাজ না হওয়ার বেশ কিছু ‘প্রমাণ’ও দিয়েছেন অনেকে। যেমন, ক্ষুদিরামপল্লি ও গোঁসাইডাঙার মাঝে নর্দমা তৈরির কাজ অসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। যাতায়াতের রাস্তা করতে স্থানীয় বাসিন্দারাই বাঁশ দিয়ে নর্দমার উপরে মাচা তৈরি করেছেন। চলছে ঝুঁকির যাতায়াত। লিঙ্ক রোডে ঢোকার রাস্তায় মোরাম পড়েছিল বহু আগে, তা উঠে গিয়েছে। নতুন করে আর রাস্তা সংস্কার হয়নি। বিভিন্ন সরকারি আবাস যোজনায় স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলেছেন ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের মহকুমা সভাপতি গোলাম রসুল মির। তাঁর অভিযোগ, “সিপিএমের লোকজন সব ভাগ করে নিয়েছে। প্রকৃত গরীবরা বঞ্চিতই রয়ে গিয়েছেন।” গ্রীষ্ম পড়তেই পানীয় জলের সঙ্কট তীব্র আকার নিয়েছে জানিয়ে তাঁর আক্ষেপ, “সমস্যা সুরাহার কোনও চেষ্টাই নেই পুরসভার।”
চন্দনাদেবী অবশ্য দাবি করেন, ওয়ার্ডের পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটাই ভাল। লিঙ্ক রোডে জলাধার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেটি সম্পূর্ণ হলেই পানীয় জলের সঙ্কট মিটে যাবে। তিনি বলেন, “সমস্যা নিশ্চয়ই আছে। তবে কাজও হয়েছে অনেক। নতুন বাঁধানো রাস্তা, পথে আলো, পাকা নিকাশি ব্যবস্থা, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পাকা বাড়ি হয়েছে।”
প্রায় একই রকম ফিরিস্তি দিয়েছেন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর অনুপ দাসও। বেনাচিতির জলখাবার গলিতে পার্টি অফিসে বসে ডিএসপি কর্মী অনুপবাবু দাবি করেন, ওয়ার্ডের প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকায় হয় পিচের নয়তো কংক্রিটের রাস্তা করা হয়েছে। ৬টি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র ও ৬টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য শৌচাগার-সহ পাকা বাড়ি গড়া হয়েছে। বিএসইউপি প্রকল্পে ৪৯০টি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। রাস্তায় সাড়ে তিনশো আলো লাগানো হয়েছে। গড়ে ৩৩টি বাড়ি পিছু ট্যাপ রয়েছে। বহু বাড়িতে জলের সংযোগও আছে। তাঁর কথায়, “এখনও কিছু সমস্যা আছে। লিঙ্ক পার্কে নির্মীয়মাণ জলাধারের কাজ শেষ হলে সেই অসুবিধাও দূর হয়ে যাবে।”
কিন্তু ওয়ার্ডের মানুষ অন্য সুরে কথা বলছেন। তাঁদের অভিযোগ, বিধবা ভাতা ও বার্ধক্য ভাতার ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ হয়েছে। প্রকৃত প্রাপেকেরা বঞ্চিত রয়ে গিয়েছেন। বিপিএলের চাল বিলির ক্ষেত্রেও অনিয়ম হয়েছে। এলাকার শ্যামল বাদ্যকর, বিধান বাউরিদের ক্ষোভ, বহু বছর আগে ওয়ার্ডের বেশ কিছু রাস্তায় মোরাম পড়েছিল। এখন মোরাম সরে ঝামা-বোল্ডার বেরিয়ে এসেছে। নঈমনগরে রাস্তার মোরাম উঠে গিয়েছে, পাশেই মজা নর্দমা। পুরসভা পাকা নর্দমা তৈরিতে উদ্যোগী হয়নি। ওয়ার্ডবাসী নিজের নিজের বাড়ির সামনে সামান্য অংশ বাঁধিয়ে নিয়েছেন। বাড়ির বর্জ্য নর্দমায় এসে জমছে। দিনের পর দিন জল জমে মশা ও মাছির উপদ্রব অব্যাহত। কিন্তু পুরসভা নর্দমা পরিষ্কার বা ‘স্প্রে’ করার ব্যবস্থা করে না বলে অভিযোগ এলাকার মহম্মদ গোলাম কাদির, সমীর কুমারদের।
তৃণমূলের ওয়ার্ড কমিটির সদস্য, নতুনপল্লির বাসিন্দা রামকৃষ্ণ রায়ের দাবি, “আমাদের সরকার আসার পরে বারবার পুরসভায় স্মারকলিপি দিয়েছি। তার পরে কিছু অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। আগে তো আমাদের কোনও কথা গ্রাহ্যই হত না।”
তাঁদের এই নতুন ‘ক্ষমতা’য় কতটা আস্থা রাখা যায়? অচিরেই বলবেন ভোটারেরা।
নজরে নগর
ওয়ার্ড ১৩ ওয়ার্ড ১৪

কাজ না করলে বিধানসভা ভোটে
ওয়ার্ডের মানুষ ‘লিড’ দিতেন?
চন্দনা দে,

জলের সমস্যা আছে,
জলাধার তৈরি হচ্ছে।
অনুপ দাস,

গরিব মানুষের জন্য আসা টাকা
সিপিএমই ভাগ করে নিয়েছে।
গোলাম রসুল মীর,

চার বছর ধরে এলাকায়
কোনও উন্নয়নই হয়নি।
রামকৃষ্ণ রায়,



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.