|
|
|
|
|
এর প্রতি ধাপে সাজানো চমক |
যেখানে এক দিন গড়ে তুলেছিলেন পুতুলের সংসার, তাকে আজ অবহেলা কেন? একগাদা
জিনিস না ঠেসে একটু হিসেব মতো সাজিয়ে নিন সিঁড়িটাকে। পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায় |
বাড়িতে প্রতিটি ঘর সাজাতেই আমরা যথেষ্ট সময় দিই। নিয়মিত তাদের সাজসজ্জা বদল করতেও মোটেও কার্পণ্য করি না। কিন্তু অনেকেই বুঝে উঠতে পারি না সিঁড়ির অংশটাকে নিয়ে আমরা কী করব। কোনও কোনও বাড়িতে সিঁড়ির ল্যান্ডিংই হয়ে ওঠে যাবতীয় পুরনো খবরের কাগজ বা ভাঙা শিশি-বোতলের ঠিকানা, আবার অনেকে সিঁড়ির ধাপ বরাবর বানিয়ে ফেলেন আস্ত একটা জুতোর সাম্রাজ্য। কোনও কোনও বাড়িতে আবার সিঁড়িতে এমন ভাবে টবের বাগান বানিয়ে ফেলা হয় যে সিঁড়ি ভাঙতে রীতিমত জিমন্যাস্টিক দেখানোর প্রয়োজন পড়ে। এ কথা সত্যি, সিঁড়ি বা তার ল্যান্ডিংয়ের মতো ছোট্ট জায়গাটুকুতে বিশাল কারুকাজ করা যায় না। কিন্তু ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন ভাবে সাজিয়ে লোকের তারিফ তো পাওয়া যায়।
বাড়ির সিঁড়ির নীচের অংশটিকে ফেলে না রেখে পুরনো জুতো বা বাড়তি কাগজ রাখার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। শু ক্যাবিনেট তো এখানে রাখাই যায়, কিন্তু যাঁরা সেটা রাখতে চান না, তাঁরা দেওয়াল বরাবর কয়েকটি তাক করে নিন। বাতিল হয়ে যাওয়া জিনিস সবার চোখের আড়ালে এখানে গুছিয়ে রাখা সহজ হবে। যাঁদের বাড়িতে ঘরের সংখ্যা কম, তাঁরা এখানেই বাচ্চাদের পড়ার ব্যবস্থা করতে পারেন, কারণ বাড়ির অন্যান্য জায়গার তুলনায় এই জায়গাটি অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি হয়। এই একই যুক্তিতে এখানে ছোটখাট একটা লাইব্রেরি তৈরি করাও বুদ্ধিমানের
কাজ হবে। সিঁড়ির লাগোয়া দেওয়ালে প্লাস্টিক পেন্ট করিয়ে নিন। কারণ অনেকেরই দেওয়াল ধরে ওঠার অভ্যেস থাকে বলে, দেওয়ালে বিশ্রি ছোপ ছোপ দাগ পড়ে যায়। লাইটিংয়ের সময় খেয়াল রাখবেন, সিঁড়ির অংশটি যেন কখনও আধো-অন্ধকারে না থাকে। এতে চলাফেরায় অসুবিধে হয়। অন্তত একটা উজ্জ্বল আলো এখানে লাগানো ভাল। ল্যান্ডিংয়ের অংশে শ্যান্ডেলিয়র লাগানো যেতে পারে। একটু অন্য রকম কিছু করতে চাইলে সিঁড়িতে স্টেপ লাইটেরও ব্যবস্থা রাখতে পারেন। সিঁড়ির দেওয়ালের অংশটা প্রায় ফাঁকাই পড়ে থাকে। আয়তাকার কোনও বড় পেন্টিং, যা বাড়ির অন্যত্র জায়গার অভাবে দেওয়ালে লাগাতে পারছেন না, ল্যান্ডিংয়ে অনায়াসে তাকে ঝুলিয়ে দিতে পারেন। এর সঙ্গে সিঁড়ি বরাবর দেওয়ালে একই মাপের বর্গাকার ফ্রেম-এ ছোট ছোট ছবি কোণাকুণি আটকে দিন। দেখতে ভাল লাগবে। ছবি সাজানোর ক্ষেত্রে কোনও থিমও ব্যবহার করতে পারেন। যেমন বাড়িতে বাচ্চা থাকলে তার বিভিন্ন বয়সের, এবং বিভিন্ন মুডের ছবি আটকাতে পারেন সিঁড়ির দেওয়াল জুড়ে। |
|
যাঁদের আদিবাসীদের হাতের কাজ সংগ্রহ করার নেশা আছে, তাঁরা বিভিন্ন আদিবাসী মুখোশ, জীবজন্তুর মাথা, ডোকরার কাজের ছোটখাট শৌখিন জিনিস ইত্যাদি সিঁড়ির ধাপ বরাবর সাজিয়ে রাখতে পারেন। আপনার সংগ্রহে এ সব কিছু না থাকলেও চিন্তার কোনও কারণ নেই। বড়সড় একটা আয়নাও ল্যান্ডিংয়ের চেহারা বদলে দিতে পারে। সুন্দর ফ্রেমে বাঁধানো আয়না দিয়ে সাজালে ল্যান্ডিংয়ের ছোট্ট জায়গাটিকেও বড় বলে মনে হবে। সিঁড়ির জন্য খরচ করতে অসুবিধে না থাকলে ব্যবহার করতে পারেন স্টেয়ার রানার। এক তলার হলের মাঝখান থেকে যে সমস্ত সিঁড়ি সোজা ওপরে উঠে গিয়েছে, সেখানকার পক্ষে রানার আদর্শ।
ল্যান্ডিংয়ের দেওয়ালে জানলা না থাকলে সেখানে একটা ক্যাবিনেট বানিয়ে বাড়ির পুরনো পেতলের বাসন, ফুলদানি বা চিনেমাটির পুরনো শৌখিন জিনিস সাজিয়ে রাখা যায়। আগেকার আমলে বাড়িতে সুন্দর দেখতে হ্যাট স্ট্যান্ড থাকত। যদি জোগাড় করা সম্ভব হয়, তা হলে ল্যান্ডিংয়ের এক কোণে ছাতা, টুপি সহ দাঁড় করিয়ে রাখা যেতে পারে। ল্যান্ডিংয়ের একটা কোণের দিকের দেওয়াল বেছে সেখানে কাঠ বা মার্বেল দিয়ে ছোট ছোট তিনকোণা তিন-তারটে তাক বানিয়ে নিন। এখানে সাজিয়ে দিতে পারেন পুতুলের সংসার, অনেকটা নিজেদের ছোটবেলায় সিঁড়ির কোণে গড়ে তোলা রাজত্বের কনসেপ্ট নিয়ে। ল্যান্ডিংয়ে বক্স জানলার ব্যবস্থা থাকলে ভাল হয়। বক্স-এ জুতো সহ নানা অপ্রয়োজনীয় জিনিস রাখা যায়। আবার জানলার সামনের চওড়া অংশটিতে টবও সাজানো যায়। পুরনো আমলের মিনের কাজ করা গয়নার বাক্স, কাশ্মীরি কাজ করা শৌখিন বাক্সও এখানে রাখা যেতে পারে।
সিঁড়ির রেলিং নিয়েও পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো যায়। অনেকে এখন প্রথাগত লোহার বা কাঠের রেলিংয়ের বদলে কাচের ঘেরাটোপে মুড়ছেন সিঁড়ির ধারটিকে। তবে, বাড়িতে শিশুরা থাকলে এই আইডিয়া বাতিল করাই ভাল। আগাগোড়া সেগুন কাঠের কাজ করা ব্যানিস্টার লাগানো সম্ভব না হলে ফাইবারের হালকা ব্যানিস্টারও দেখতে মন্দ লাগে না।
সিঁড়িতে গাছ রাখার আইডিয়া খুবই ভাল। কিন্তু একগাদা টব ঠেসে চলাফেরায় অসুবিধে সৃষ্টি করার কোনও মানেই হয় না। ল্যান্ডিংয়ের এক কোণে একটি বা দুই কোণে দু’টির বেশি টব রাখবেন না। ল্যান্ডিং যদি ছোট হয়, তা হলে ছোট ইন্ডোর প্লান্ট বা বনসাই এই জায়গার পক্ষে উপযুক্ত। বিরাট বড়, প্রচুর ডালপালা যুক্ত গাছ এখানে কখনও রাখবেন না। কারণ এতে চলাফেরার অসুবিধে হতে পারে। সিঁড়ি যদি পর্যাপ্ত চওড়া হয়, তা হলেই এক মাত্র সিঁড়িতে টব রাখার কথা ভাবতে পারেন। সিঁড়ির টবে জল দেওয়ার সময় ভীষণ সতর্ক থাকবেন। একটু এ দিক-ও দিক হলেই দুর্ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা। বরং ল্যান্ডিংয়ের লাগোয়া কোনও টেরেস বা খোলা বারান্দা থাকলে সেই অংশে বাগান তৈরি করতে পারেন। কিছু মোড়া বা বেতের চেয়ার পেতে নিলেই তৈরি বৈকালিক চায়ের আসর। |
|
|
|
|
|