|
|
|
|
|
নায়ক & অ্যাসোসিয়েটস |
অফিস টাইম হলেই ছেলেদের মেজাজ রঙিন। একে একে বেরোয় কেয়ারি করা টাই, কাফলিংকস,
বুকপকেটের আদুরে রুমাল, গ্যাজেট। অ্যাকসেসরিরা মিলে ‘হিরো’ বানিয়ে ছাড়ে। চিরশ্রী মজুমদার |
অফিসবাবুদের মনে পড়ে? স্বাধীনতার ঠিক পর পরই, বাংলা গল্প, উপন্যাসে, সাদা কালো ছায়াছবিতে তাঁদের খুব দেখা যেত। কী শীত, কী গ্রীষ্ম, ধুতির ওপরে একটি ঢাউস কালো কোট, হাতে একটি ক্যাম্বিসের ব্যাগ বা সুটকেস, পায়ে চকচকে পাম্প শু। এর বাইরে বাহার বলতে বড়জোর, রিডিং গ্লাস। ছাতা একটা থাকত বটে, তবে সেটাকে শৌখিন বলতে গেলে বাড়াবাড়ি নয়, মিথ্যাভাষণ হয়ে যায়। তাই দিয়ে রোদ, বৃষ্টি আটকানো যায়। এ ছাড়া কাকদের দূর থেকেই ঘাবড়ে দেওয়া যায়। সেই হেড অফিসের বড়বাবুদের যুগে অফিস যাওয়া ছিল বিকট শাস্তি। ফুলবাবুটি চাকরি পেলেন মানেই তাঁর সাজগোজের শখটি গঙ্গায় গিয়ে ঝাঁপ দিল। এ বার রোজ ‘স্যাড’ সেজে দশটা-পাঁচটা করো। কিন্তু গত পঞ্চাশ-ষাট বছরেই, অফিসের সাজে অন্তত গোটা তিন-চার যুগ পালটে গেছে। মাথার ঘটাং ঘটাং পাখা এখন সাইবেরিয়ার এসি, ফাইলের বোঝা এখন ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, পামটপ, অফিস হল কর্পোরেট। সেখানে যেতে হলে কেতা নইলে চলে না। শুধু ইস্তিরি মারা শার্ট ফিটেড ট্রাউজার্সে গুঁজে পরলেই মান থাকে না। কয়েকটা স্পেশ্যাল অ্যাকসেসরিও দরকার। তাদের কেমন করে ব্যবহার করতে হবে, সেই ফর্মুলাটাও জানা চাই।
তাকে ভিড়ের মধ্যে খুব একটা খুঁজে পাবেন না। কারণ, নেকটাই এখনও ফর্মাল পোশাকের অ্যাকসেসরিদের রাজা। তার ইতিহাসও বেশ পুরনো। কেউ বলেন ওটি এসেছে চিনা জাপানিদের গলায় জড়ানো রুমালের টুকরো থেকে। কারও বক্তব্য টাই জন্মেছিল আঠেরো শতকের আমেরিকায়। তবে ঠিক এখনকার টাইয়ের মতো জিনিসটি নাকি প্রথম বার ইউরোপেই দেখা যায়। ক্রোয়েশিয়ায় একটি গলবস্ত্র ধরনের আকর্ষক পোশাকের প্রচলন ছিল। সৌন্দর্যপ্রেমী ফরাসিরা সেটির দেখাদেখি, গলায় টাই বাঁধতে শুরু করলেন। তখনকার দিনে টাই ছিল বংশমর্যাদা পরিচায়ক। তার পর পশ্চিমের বিভিন্ন স্কুল ইউনিফর্মে টাই বাধ্যতামূলক হয়ে গেল। যাই হোক, ইদানীং কালের টাইদের মোটেও ইউনিফর্মমার্কা রাগী রাগী দেখতে হয় না। চারকোল, ছাই রং, আকাশি ইত্যাদি ‘ক্লাসিক’ মেজাজের টাই প্রতিদিনের ফর্মাল পোশাকের সঙ্গে মানায়। তবে সিল্কের রঙিন প্রিন্টেড টাই, কিংবা আধুনিক যুগের স্কিনি অর্থাৎ সরু নেকটাই (ব্যাস খুব বেশি হলে ইঞ্চি খানেক) সত্যিই অঙ্গভূষণ। আর একটি বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ। টাই বাঁধবার কায়দা। এক একটা নট এক এক রকম অর্থ বহন করে। উইন্ডসর নট হল স্কুল, অফিস, মিটিং ইত্যাদির উপযুক্ত, প্র্যাট নট একটু সেমিফর্মাল। তবে আটলান্টিক নট ইত্যাদি অফিসে চোখে লাগবে, ওটা একটু রকস্টার টাইপের ফ্যাশন হয়ে যায়। আর শার্টের কলারের বদলে গলায় তো কক্ষনও টাই বাঁধবেন না, কারণ ওটা গ্যাংস্টারদের একচেটিয়া! তবে টাইয়ের নটের কথা এ ভাবে বলে বোঝানো শক্ত, আঁকতে পারলে ভাল হত। কিন্তু ওটা আমার বিশেষ আসে না। তার থেকে উইকিপিডিয়ায় খুঁজুন। এঁকে লিখে খুব চমৎকার বুঝিয়ে দিয়েছে।
তার থেকে বরং টাই-বারের কথা বলি। সেটা আসলে ক্লিপের মতো দেখতে। স্কিনি টাইগুলোকে এক জায়গায় স্থির রাখে। বেসামাল এলোমেলো হতে দেয় না। পকেট বুঝে স্টেনলেস স্টিল, রুপো বা সোনা হিরের টাইবারও কিনে রাখতে পারেন। পেন, গাছের পাতা, ড্রাগন, রেলগাড়ি প্রত্যেকটা নকশাই কিন্তু মারাত্মক। আর ডিনার সুট থাকলে, একটা মখমলি বো-টাই কিনে রাখুন। তবে, অফিস থেকে তো সাধারণত অস্কার দেখতে পাঠায় না, তাই অত দূর না গেলেও ক্ষতি নেই।
যে টাই-ই বাঁধুন, সেটার নীচের কোণাটুকু বেল্টের বাক্ল অংশটা ছুঁয়ে থাকবে, এমনটাই রীতি। অফিসের কালো বা বাদামি চামড়ার বেল্টে খুব বেশি ফ্যাশন করা যায় না সত্যি। সেখানে বেল্টটা ঝকঝকে, দর্শনীয় একটি বাক্লযুক্ত (অর্থাৎ আংটা) হলেই যথেষ্ট। এই বেল্টের সঙ্গেই মানিয়ে পরতে হবে দারুণ একটা জুতো। সেটা কিন্তু ড্রেস শু হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
ও দিকে, যদি কাফলিংক পরেন, সেটা কিন্তু মেলাতে হবে বেল্টের বাক্ল ও ঘড়ির সঙ্গে। এই অলঙ্কারটিও ফরাসিদেরই উপহার। সেই চতুর্দশ লুই কোন কালে আদেশ দিয়েছিলেন, প্রত্যেক সভাসদকে জামার মণিবন্ধ অংশে বোতাম আটকাতে হবেই। সেই ছিল শুরু। তার পর ফরমান বদলে গেছে শখে। কাফ লিঙ্কের রং, নকশাতেও প্রচুর পরিবর্তন হয়েছে। রঙিন কাচ, দামী রত্নপাথর, কত কী ব্যবহৃত হয়েছে। তবু উদ্দেশ্য একটুও নাড়া খায়নি। ওই যে, আভিজাত্যে আরও একটু সূক্ষ্ম রুচি ছুঁয়ে দেওয়া।
ব্রিফকেস এখন জাদুঘরে পাওয়া যায়। ওয়ালেট, ব্যাকপ্যাক বা ল্যাপটপ কেস-এর জন্য অগুনতি ভাল ব্র্যান্ড রয়েছে। কেনার সময় নিজের সৌন্দর্যবোধটাকে একটু কাজে লাগান। শুধু, ওয়ালেটটা যেন পকেট থেকে ঠেলে বেরিয়ে না আসে। সে বড় অদ্ভুত দেখায়।
স্যুট পরলে, বুকপকেটের খাঁজে ভাঁজ করে একটি পকেট স্কোয়্যার রেখে দেওয়া বিধি। রুমাল বললে হত। কিন্তু তাতে এই চার চৌকো কাপড়ের টুকরোকে ঠিক ব্যাখ্যা করা হয় না। দৈর্ঘ্য প্রস্থে ৩৩ X ৩৩ই হওয়া চাই। কাপড় হবে লিনেন বা খানদানি রেশম। আঙুল ছোঁয়া মাত্র নরম সমুদ্রে তলিয়ে যাবে, সরিয়ে নিলেই ফের যে কে সেই। দাগ নেই, ভাঁজ নেই, কেউ যে কখনও ছুঁয়েছিল, তার এতটুকু চিহ্নমাত্র নেই! বিশেষ ভঙ্গিতে অল্প গুটিয়ে রাখলে, পকেট থেকে একটু একটু উঁকি দেবে।
অফিসের নিত্য প্রয়োজনীয় ফ্ল্যাশ ড্রাইভ, ব্লু টুথ ইত্যাদিও অ্যাকসেসরি তালিকাতেই পড়বে। একটু নজরকাড়া, অতিরিক্ত কারিকুরি সমৃদ্ধ গ্যাজেট। মানে দেখতে হয়তো ক্রিকেট বা বেসবলের ব্যাট, পুতুলের খুদে জুতো বা হোয়াইট র্যাবিটের পকেটঘড়ি। তার পর লুকিয়ে থাকা বোতামে চাপ দিতেই ভোজবাজির মত বেরিয়ে এল ইউ এস বি কানেক্টর। এ রকম কত রকমই এখন সর্বত্রই পাওয়া যায়। নেকলেস, চশমা, ফারাওয়ের মুখোশ, তায় আবার সুগন্ধি মাখানো। কোনওটা তো টু-ইন-ওয়ান। একাধারে কাফলিংক ও ফ্ল্যাশড্রাইভ! এ সব ‘ইলেকট্রনিক ফ্যাশন’ দেখলে সত্যিই ইলেকট্রিক শক খেতে হয়। তবে বেশি চমকপ্রদ গ্যাজেটের শখ থাকলে, বাড়িতে ব্যবহার করাই ভাল। কাজের জায়গাটাকে জেমস বন্ডের সিনেমা বানিয়ে ফেলা বোধ হয় ঠিক হবে না।
তার থেকে অল্পের ওপর শুরু করাই ভাল। প্রথমে চার পাশের পরিবেশটা একটু বুঝে নিন। তার পর চাবির রিং, মোবাইল কভার, নেট অ্যাকসেসরি, হেডসেট ইত্যাদিতে স্টাইল ছুঁয়ে দিতে থাকবেন। আস্তে, আস্তে, অতি সন্তর্পণে। চোখ ধাঁধাবেন না, স্রেফ নজর কাড়বেন। বরং, অফিসের কাজে বাইরে বেরোতে হলে, জায়গা বুঝে সুযোগ কাজে লাগান। অর্থাৎ ওয়েফেয়ারার সানগ্লাস, ফর্মাল হ্যাট, এই ধরনের দু’একটা তারকা অ্যাকসেসরিকেও সঙ্গে করে নিয়ে যান।
এই যে এত এত অ্যাকসেসরির গুণগান গাইলাম, তা কি শুধুই ছেলেদের ঘুম ভাঙাতে? খানিকটা তাই-ই, কিন্তু ভেতরে আরও একটি গভীর উদ্দেশ্য লুকিয়েছিল যে! সেটা বুঝেছেন কি? টাই, পকেট স্কোয়্যার, টাই পিনের সেট; লেদার ওয়ালেট, বেল্টের সেট; ব্রোচ , ঘড়ি ও মানানসই কাফলিংক, অফিস গ্যাজেটস। এর পরও, উৎসব অনুষ্ঠানে জন্মদিনে ‘ছেলেদের কী উপহার দেব’, তাই নিয়ে হিমশিম? |
|
|
|
|
|