আগুনের গ্রাসে |
দার্জিলিঙের চকবাজার আগুনে পুড়ে ছাই, প্রচুর ক্ষতি |
নমিতেশ ঘোষ ও রবিন রাই • দার্জিলিং |
আগুনে ছাই হয়ে গেল দার্জিলিঙের চকবাজারের একাংশ। বৃহস্পতিবার রাত ২টো নাগাদ চকবাজারের তিনটি রাস্তায় পরপর ওই আগুন লাগে। ঘিঞ্জি এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একটি ছয় তলার হোটেলের চারদিকে আগুন লেগে যায়। আতঙ্কে হোটেলের কর্মী ও আবাসিকেরা বাইরে বেরিয়ে আসেন। পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন দমকল কেন্দ্র থেকে ১০টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমসিম খেতে হয় দমকল কর্মীদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনা বাহিনীর জওয়ানদের নামতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দারাও তাঁদের সঙ্গে হাত মেলান। শুক্রবার সকাল ৭টা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। |
|
দার্জিলিঙের চকবাজারে আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মীরা। |
দার্জিলিং পুরসভার হিসাব অনুযায়ী, ১৪০টি ছোটবড় দোকান এবং ২১টি বাড়ি পুরোপুরি ছাই হয়ে গিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা। তবে হতাহতের কোনও খবর নেই। ঘটনার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সন্ধ্যায় দার্জিলিঙে পৌঁছন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন। মন্ত্রী বলেন, “প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রাজ্য সরকার রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও ভীষণ উদ্বিগ্ন। বাজারটি দ্রুত পুনর্গঠনের বিষয়টি আমরা দেখছি।”
এ দিন সকালেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। সাতসকালেই ঘটনাস্থলে আসেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ-সহ দলের শীর্ষ নেতারা। রোশন বলেন, “দার্জিলিঙের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। বহু মানুষ পথে বসে গেলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। চকবাজার পুনর্গঠনের জন্য আর্থিক সাহায্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি।” ইতিমধ্যে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ যশোবন্ত সিংহ সাংসদ তহবিল থেকে ৫০ লক্ষ টাকা সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন। |
|
দার্জিলিঙের চকবাজারে আগুন। |
তবে ঠিক কীভাবে আগুন লাগাল তা দমকল, পুলিশ-প্রশাসনের কাছে পরিষ্কার নয়। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শর্ট-সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। দমকল জানাচ্ছে, রাতে ছয় তলা একটি হোটেলের নীচে থাকা শাড়ির দোকানে আগুন লাগে। লাগোয়া একটি দোকানে থাকা দু’টি গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে যায়। তাতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পর পর আরও অন্তত ছয়টি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। দার্জিলিংয়ের দু’টি দমকল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। জলের অভাবে কিছুক্ষণের জন্য কাজ থমকে যায়। দার্জিলিং পুরসভার পানীয় জলের ট্যাঙ্কারগুলি থেকে জল ঢেলে আগুন নেভানোর কাজ করা হয়। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দমকলের ইঞ্জিনও জল নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়।
চকবাজারের এইচ ডি লামা রোড, হিলকার্ট রোড এবং এনবি সিংহ রোডের অধিকাংশ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। জিমখানাতে দ্রুত পরিস্থিতি সামলাতে বৈঠকে বসেন প্রশাসনিক কর্তারা। দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। একটি সমীক্ষা করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের কাছে দ্রুত রিপোর্ট পাঠানো হবে। তার পরেই বাজার পুনর্গঠন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।” দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারম্যান অমর সিংহ রাই বলেন, “বিরাট ক্ষতি হয়েছে। তবে বাজার এলাকার জমি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। তাই আপাতত এলাকাটিকে ‘নো-কনস্ট্রাকশন জোন’ হিসাবে ঘোষণা করেছে পুরসভা। প্রশাসনের সাহায্যে পুনর্গঠনের কাজ করা হবে।” |
|
ঘটনাস্থলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। |
দার্জিলিং শহরের সবচেয়ে পুরনো এবং বড় বাজার চকবাজার। প্রতিদিন ভোর থেকে বাজারে বাসিন্দাদের ভিড় উপচে পড়ে। রাত অবধি বাজার খোলা থাকে। সকালে আগুন নিভলেও এ দিন বেলা ১২টার পরেও অনেক দোকান থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গিয়েছে। চকবাজারের পাশে প্রচুর হোটেল রয়েছে। বহু পর্যটক রাতের ঘটনার পর রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী দ্বারকা প্রসাদ বলেন, “দোকানের কাছেও যেতে পারিনি। চোখের সামনে সব পুড়ে গিয়েছে।” ফল ও ব্যাগের দোকানি সুজাতা প্রসাদ বলেন, “সব পুড়ে গিয়েছে। বাড়িতে ১২ জন সদস্য রয়েছে। কী খাব, কী করব জানি না।”
দার্জিলিংয়ের ভারপ্রাপ্ত জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রাজা বলেন, “কীভাবে আগুন লেগেছে তা জানতে ফরেন্সিক দলের সাহায্য নেওয়া হবে।”
|
ছবি তুলেছেন রবিন রাই। |
|