মাওবাদীদের পুনর্বাসন
তাঁদের জন্য কেন ভাববে না সরকার, প্রশ্ন সেই সুলেখার
দু’হাতে বন্দুক চালানোয় পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন সেই কৈশোরেই। মাওবাদী নেতা মদন মাহাতো হাতে বন্দুক তুলে দিয়ে বলেছিলেন, “এটাই আত্মরক্ষার সঙ্গী।” বন্দুকের সঙ্গেই দেওয়া হয়েছিল ২৫ রাউন্ড তাজা কার্তুজ। গাছের গুঁড়ি লক্ষ করে চলত গুলি চালানোর ‘প্র্যাকটিস’। কিষেণজিও বলতেন, “লড়াই করেই বাঁচতে হবে। তৈরি হও।” মাওবাদী স্কোয়াডে খুব তাড়াতাড়িই গুলি চালানো রপ্ত করতে হয়েছিল সুলেখা মাহাতোকে।
২০০৬-এর ৭ ফেব্রুয়ারি সেই সুলেখাই ধরা পড়ে যান। পুলিশের ভয়ে টানা জঙ্গলে লুকিয়ে থাকার ফাঁকে বিমলা সর্দারকে সঙ্গী করে বেলপাহাড়ির উখুলডোবার পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিলেন। পুলিশ যে জাল পেতে রেখেছে, প্রথমে বুঝতেই পারেননি। ধুতি-পাঞ্জাবিতে গ্রামের জামাই সেজে পুকুরধারে হাজির হয়েছিলেন দুই পুলিশকর্মী। অমন প্রত্যন্ত গ্রামে ওই বেশভূষায় সন্দেহ জেগেছিল। গলা জলে দাঁড়িয়ে বিমলাকে সুলেখা বলেওছিলেন, ‘চল্, পিছন দিক দিয়ে পালাই। একটু গেলেই তো জঙ্গল।’ বিমলা যুক্তি দেন, ‘তাতে সন্দেহ বাড়বে। পুকুরে তো প্রচুর লোক। তাদের মাঝখান দিয়েই বরং উঠে যাওয়া ভাল।’ সুলেখা বলেছিলেন, ‘চল্, দেখি তোর কত বুদ্ধি!’
বিমলার বুদ্ধি কাজে আসেনি। আগে কতবার পুলিশকে ফাঁকি দিয়েছেন তাঁরা, সে বার আর রেহাই মেলেনি। অন্য সঙ্গীরা জঙ্গলের মধ্যে থেকে গুলি চালিয়েও উদ্ধার করতে পারেনি বিমলা-সুলেখাকে। বেলপাহাড়ির বিদরি গ্রামের সুলেখার, নাবালিকা বলেই, ঠিকানা হয় লিলুয়ার হোমে। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও পুরুলিয়ার সিপিএম নেতা রবি কর খুনের অভিযোগ আনে পুলিশ। শেষে ২০১০-এর ২৭ নভেম্বর খালাস পান সুলেখা (বিমলা অবশ্য এখনও বন্দিই)। গ্রামের বাড়িতেও ফেরেন। কিন্তু তখন মাওবাদী-যৌথ বাহিনী প্রবল লড়াই চলছে। ‘অভিযানে’ নেমেছে সিপিএমও। প্রাণের ভয়েই গ্রাম ছেড়ে মেদিনীপুরের এক হোমেই ফের আশ্রয় নেন। এখনও সেটাই ঠিকানা।
কিন্তু এ ভাবে হোমেই কি সারাটা জীবন কাটবে? জাগরী বাস্কে, শোভা মান্ডি থেকে সুচিত্রা মাহাতোরা সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার জন্য ‘প্যাকেজ’ পাচ্ছেন। কেন তিনিও পাবেন নাপ্রশ্ন সুলেখার। তাঁর কথায়, “আমিও তো মূলস্রোতে রয়েছি। ওই পথটা আর ভাল লাগে না। সুস্থ, স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে চাই। আমাদের সময়ে প্যাকেজ ছিল না। আমাদের জন্যে কি সরকার কিছুই করবে না?”
মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়া। জঙ্গলের মধ্যে অচেনা কয়েক জনকে দেখে প্রথমে ঘাবড়েই গিয়েছিল সেই কিশোরী। তাদেরই একজন এসে সুলেখার সঙ্গে কথা বলে। সঙ্গে নিয়ে যায়। পরে জানা যায়, সেই লোকটাই মাওবাদী নেতা মদন মাহাতো। একাধারে আগ্নেয়াস্ত্র চালানো। অন্য দিকে খাবার, রসদ, জল নিয়ে পুলিশকে এড়িয়ে পাহাড়, জঙ্গল বেয়ে যাতায়াত করতে হত। সুলেখার কথায়, “অসুবিধা হত না। কাল হয়েছিল ওই চান করতে যাওয়া।” কিষেণজির মৃত্যুর খবর শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “এত বড় নেতা ও ভাবে মরে যাবেন ভাবতে পারিনি। যখন খবরের কাগজে আর টিভিতে দেখলাম, খুব খারাপ লেগেছিল।” তবে এখন আর ‘বনপার্টি’তে মন নেই। সুলেখার কথায়, “আগে শুধু গরিব মানুষের দুঃখ নিয়ে কথা হত। এখন তো শুনি গ্রামে গ্রামে টাকা তোলা হচ্ছে। অত্যাচার করা হচ্ছে। এ সব ঠিক নয়।” পুরনো কথা ভুলতেই চান সুলেখা। সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন চান। তাই সরকারের কাছে তাঁর আবেদন, “আত্মসমর্পণ করা মাওবাদীদের জন্য সরকার যেমন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, আমাদেরও ভাল ভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ দিক।” একই দাবি তাঁর মা ভারতী মাহাতোরও। তাঁর কথায়, “মেয়েটার জন্য যদি সরকার কিছু করে, ও নিজেও বাঁচে, সংসারটাও বেঁচে যায়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.