শিলিগুড়ির স্বপ্ন সফল, অলিম্পিকে অঙ্কিতা দাস
টেবল টেনিসের শহর এত দিনে এক টিটি অলিম্পিয়ান পেতে চলেছে। আর কেউ বলতে পারবে না, “কীসের টেবল টেনিস শহর, একটা অলিম্পিয়ান তৈরি করতে পারে না?”
শিলিগুড়ির সফলতম টিটি তারকা চার বার চেষ্টা করেছিলেন অলিম্পিকের টিকিট পাওয়ার। পারেননি। এত দিনে সেই দুঃখ মিটল মান্তু ঘোষের।
তাঁর কাছে নয় বছর ধরে টিটি শিখে আসছেন রবীন্দ্রনগরের মেয়ে অঙ্কিতা দাস। অঙ্কিতার জন্যই দুঃখ মিটছে মান্তুর।
পৌলমী ঘটক, মৌমা দাসদের পিছনে ফেলে লন্ডন অলিম্পিকের টিকিট জোগাড় করে ফেললেন শিলিগুড়ির টিন এজার অঙ্কিতা। যাঁকে এত দিন হিসেবে ধরাই হয়নি।
শিলিগুড়ির কলেজছাত্রী অঙ্কিতা এখনও একবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। কিন্তু অলিম্পিকের মুখে হঠাৎই চোখ ধাঁধানো খেলে পেয়ে গেলেন ইপ্সিত সাফল্য। ক’দিন আগে অঙ্কিতা প্রি অলিম্পিক দলে ঢুকেছিলেন মৌমাকে হারিয়ে। শুক্রবার হংকংয়ে অঙ্কিতা পিছনে ফেলে দিলেন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন পৌলমী ও রানার্স সামিনীকে।
ফোনে যোগাযোগ করা হলে অঙ্কিতা বলেন, “অলিম্পিকে ছাড়পত্র পেতে মরিয়া ছিলাম। গ্রুপে দ্বিতীয় হয়েও যখন ফের সামিনীর সঙ্গে লড়তে হবে বলে জানানো হয় তখন দুশ্চিন্তায় ছিলাম। শেষ পর্যন্ত জিততে পেরে দারুণ লাগছে।”
অঙ্কিতা দাস
হংকং থেকে ফোন করে মান্তুকে অঙ্কিতা বলেছিলেন, “ফিরে গিয়েই আমি তোমার হাতে রান্না খাব।” কয়েক মাস আগে মা হয়েছেন মান্তুযিনি এখন শিলিগুড়ি টিটি সংস্থার প্রধান কর্তাও। উচ্ছ্বসিত মান্তুর মনে হচ্ছে, নতুন সন্তানই এই সৌভাগ্য বয়ে এনেছে। বলছিলেন, “অঙ্কিতা সব সময় কথা শোনে। যেটা ভাবে, করে দেখাতে মরিয়া হয়। তাই এই সাফল্য পায়।” রাতে তিনি খবর পেলেন, তাঁর আর এক ছাত্র সৌম্যজিৎ ঘোষ পারেননি। হতাশার মধ্যে অঙ্কিতাই আলো।
এত কম বয়সে এত সাফল্যের কারণ কী? যাঁকে হারিয়ে অঙ্কিতা প্রি অলিম্পিকের দলে ঢুকেছিলেন, সেই মৌমা দাস বললেন, “কম বয়স থেকেই বিদেশে ট্রেনিং ও খেলার সুফল পাচ্ছে অঙ্কিতা। আমার আর পৌলমীর পরে বাংলা থেকে কেউ ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছিল না। অঙ্কিতাই পারছে। মান্তুদিকে আমরা অনেক দিন আগে বলেছিলাম, অঙ্কিতা অনেক দূর যাবে।” মৌমাকেও ফোন করে অলিম্পিকে যাওয়ার খবরটা জানান অঙ্কিতা।
হংকং থেকে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মান্তুর কাছে অঙ্কিতার ফোনটা যখন এসেছিল তখন তাঁর গলায় একরাশ হতাশা। আগের দিন রাতে শুনেছিলেন, তিনি টিকিট পেয়ে গিয়েছেন। পৌলমী অনেক আগেই পিছিয়ে গেছিলেন। অঙ্কিতা সকালে শোনেন, আবার সামিনীর সঙ্গে লড়তে হবে। কী হবে বুঝতে পারছিলেন না। পরামর্শ চাইছিলেন। বিকেল ৫ টা ৪০ মিনিটে যখন ফের ফোন এল তখন গলায় আনন্দ, উচ্ছ্বাস। সামিনীকে হারিয়েছেন। স্বপ্ন সফল। কথা বলতে বলতে কোচ ও ছাত্রী দু’জনেই কেঁদে ফেলেন। শিলিগুড়ির রবীন্দ্রনগরের ‘লিটল ওয়ান্ডার’ প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রী ছিলেন অঙ্কিতা। তিনিই এখন শিলিগুড়ির ‘জায়ান্ট ওয়ান্ডার’। মান্তুর স্বামী সুব্রত পাশেই ছিলেন। দু’ জনে মিলেই প্রশিক্ষণ দেন অঙ্কিতাকে। তাঁরও চোখে জল। ফোনে অঙ্কিতাকে মান্তু বলেন, “এটা শুধু তোর আনন্দের বিষয় নয়। আমরা সকলেই দারুণ খুশি।”
অলিম্পিকে অঙ্কিতার সুযোগ পাওয়ার খবরে পরিচিতরা বাড়িতে তাঁর
বাবা-মা’কে ফোন করে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
মেয়ের খবর পাচ্ছেন না দেখে মা সঙ্গীতা দেবী, বাবা অসীমবাবুরাও বৃহস্পতিবার থেকে ছিলেন টেনশনে। তাঁদের বাড়িতেও এখন অভিনন্দনের বন্যা। অসীমবাবু বলেন, “খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। খবরটা পেয়েই অনন্দ লাগছে। মান্তু যে ভাবে ওকে শেখাচ্ছিল তাতে বরাবরই ভরসা পেয়েছি। ওর খেলা নিয়ে আমাদের সব স্বপ্ন।”
সাড়ে তিন বছর বয়সে ‘লিট্ল ওয়ান্ডার’-এ পড়ার সময় থেকেই টেবল টেনিস খেলা শুরু অঙ্কিতা। অসীমবাবুই একদিন পাড়ার অমিত দামের টেবল টেনিস অ্যাকাডেমিতে নিয়ে যান মেয়েকে। সেই শুরু।
এর পর ২০০৩ সাল থেকে ওয়াইএমএ ক্লাবে মান্তুর কাছে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। ক্যাডেট বিভাগে ১ বার। এখনও পর্যন্ত সাবজুনিয়র, জুনিয়র এবং যুব বিভাগে ২ বার করে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
অঙ্কিতার প্রতিভা দেখে জাতীয় টিটি সংস্থা তাদের কোচ পিটার কার্লসনের কাছে তাঁর অনুশীলনের সুযোগ করে দেয়। তবে একমাত্র মেয়ে অঙ্কিতাকে বাইরে যেতে দিতে রাজি হননি বাবা-মা। অনুশীলন চলছিল মান্তুর কাছেই। অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ার পরে তাঁর সামনে বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার রাস্তা খুলে যেতে পারে আবার।

অলিম্পিকে অঙ্কিতা
আজ, শিলিগুড়িবাসী হিসাবে খুবই গর্ব হচ্ছে। আমাদের আশা, অঙ্কিতা অলিম্পিকে বড় সাফল্য পাবে।
সম্প্রতি অঙ্কিতার সঙ্গে কথা হয়েছে। শিলিগুড়ির বাসিন্দা হিসাবে আমরা খুবই আনন্দিত। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের তরফে অঙ্কিতাকে সব রকম সাহায্য করা হবে।
আমরা খুব খুশি। ওঁর হাত ধরে দেশের পদক আসবেই।
অঙ্কিতা দেশের গর্ব। ওকে দেখে অন্য খেলোয়াড়েরা আগামী দিনে উৎসাহিত হবে।
ওঁর জন্য শুভেচ্ছা রইল। সবসময় আমরা অঙ্কিতার পাশে আছি।
শহরের মেয়ে অলিম্পিকে খেলবে, এটা বিরাট ব্যপার। ওর সফলতার জন্য আমরা প্রার্থনা করব।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.