সৌরভের মিশন সেমিফাইনাল মন্ত্র এখন দশে পাঁচ
তীব কেতাদুরস্ত ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এসকালেটর দিয়ে নীচে নামার ফাঁকে দ্রুত হিসেবটা ঝালিয়ে নিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়!
“দশটা এখনও হাতে ...তার মধ্যে ছ’টা হোম ম্যাচ পড়ে রয়েছে। যে কোনও ভাবে পাঁচটা বার করলেই তো হল।” অধিনায়কের পিছন-পিছন সদ্য নয়াদিল্লিতে পা দেওয়া পুণে ওয়ারিয়রসের বাকিরা আসছেন। সেই ঝাঁকটার মুখেও একই চর্চা---দশে পাঁচ। শুনে মনে হল, বেঙ্গালুরু-চেন্নাইতে জোড়া বিপর্যয়ের পর পুণে-র এটাই এখন আশ্বস্ত হওয়ার মন্ত্র যে, আইপিএলে পড়ে থাকা ম্যাচের ফিফটি পার্সেন্ট জিতলেই যথেষ্ট।
সম্পূর্ণ হয়ে যাবে মিশন সেমিফাইনাল।
এমনিতে প্রতিপক্ষের শহরে পা দেওয়া গড়পড়তা বিকেলে হিসেব করা উচিত দিল্লির প্রাসাদোপম ব্যাটিং লাইন আপ।
• সহবাগ
• মাহেলা
• রস টেলর
• পিটারসেন
ভাবলেই ম্যাচের আগের দিন বিপক্ষ টিমের স্লিপিং পিলের দরকার পড়া উচিত! তার ওপর আবার অশোক দিন্দা নেই। যাঁকে পুণে-র টিম ফিজিও এখন সাঁতার কাটাচ্ছেন। ট্রেনিং করাচ্ছেন। হালকা বল করতে বলছেন। দিন্দার হিসেব মতো, দিল্লির পরেরটা খেলতে পারবেন। সৌরভের প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা বলছে, আরও দু’টো ম্যাচ। কোটলায় অগত্যা, আলফানসো টমাস বা পার্নেল খেলবেন। সৌরভকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলি দিতে হবে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজকে। এ দিন নিষ্প্রভ শোনাচ্ছিল তাঁর গলা যে, “এমন অবস্থা টিমের, এক দিক ঢাকতে গেলে আর এক দিক বেরিয়ে যাচ্ছে। বিদেশিদের মধ্যে কত আর পারমুটেশন কম্বিনেশন করব।”
অ্যারাইভাল হল-এ রবিন উথাপ্পাকে এক ঝলক দেখলাম। এক রাত্তিরেই এমন শুকনো দেখাচ্ছে তাঁকে যে, আইপিএলের সীমাহীন প্রভাবটা আরও পরিষ্কার। নামেই কুড়ি ওভারের। নামেই আভিজাত্য না থাকা একটা ফ্যাটফ্যাটে বিনোদন। সারা বিশ্বে এত বেশি লোক সেটা এমন গোগ্রাসে গেলে যে, এক রাত্তিরে যে কোনও ক্রিকেটার হয়ে যেতে পারে রাজা থেকে ফকির। অথবা ফকির থেকে রাজা। উথাপ্পা টুর্নামেন্ট জুড়ে যথেষ্ট ভাল খেলছেন। কাল রাত্তিরে শুধু দু’টো স্টাম্পিং মিস। আর বাজে শটে উইকেট দেন। যা দেখে মুম্বইয়ে উত্তেজিত তাঁর মেন্টর মকরন্দ ওয়েংগাঙ্গকর! সৌরভকে টেক্সট করেন তখনই মকরন্দ: রবিনের এই একটা সমস্যা। বড় তাড়াতাড়ি আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ে। ওকে একটা ম্যাচ বসাতে হবে। এটাই ওকে ডিল করার সেরা রাস্তা।
চেন্নাইয়ের হোটেলে কাল রাত্তির দু’টোর সময় যাঁকে সৌরভের ঘরে একান্তে আলোচনা সারতে দেখলাম তাঁর নাম রবিন উথাপ্পা। পুণে-র দ্বিতীয় কিপার কে তা-ই এ দিন মনে করতে পারলেন না সৌরভ। বোঝা গেল, মকরন্দ মেন্টর হতে পারেন। কিন্তু তাঁর টোটকা মোটেও সৌরভ মানবেন না। বরঞ্চ ঘোর দুর্যোগে যেমন নেহরার পাশে ছিলেন, তেমনই পথপ্রদর্শক হতে চান রবিনের। এখনকার মতো টিপস---“দিল্লির সঙ্গে তাড়াহুড়ো কোরো না। সুযোগ আসবেই।”
পুণে-র মুখ্য দুই কর্তা সুশান্ত রায় ও অভিজিৎ সরকার টিমকে এক মিনিটের জন্যও ফাঁকা রেখে লখনউ ফিরছেন না। সর্বত্র ঘুরছেন প্লেয়ারদের পাশাপাশি। খুব প্রশংসনীয় এঁদের কমিটমেন্ট। যদিও শুক্রবার তাঁদের যেন কিছুটা হতাশ দেখাল। বেঙ্গালুরুটা এত অবিশ্বাস্য হার। আর চেন্নাইতেও স্রেফ বাজে ফিল্ডিং করে হেরে যাওয়ার শোক সপাটে বিঁধছে। কারও কারও অবশ্য মনে হচ্ছে কর্তাদের বুঝতেই হবে, কাগজে-কলমে পুণে অনেক কাঁচা টিম। নিলামে তারা অংশ না নেওয়ায় ভাল ভারতীয় প্লেয়ার পায়নি। প্লেয়ার কিনতে অনেক কম টাকা খরচ করেছে। বিদেশিদের সংখ্যা বোর্ডকে বুঝিয়েও চার থেকে পাঁচে নিতে পারেনি। এই যাদের হাল তারা মাঝেমাঝে যে ঠোক্কর খাবে এটাই তো স্বাভাবিক। দেশি ভাল রিজার্ভ প্লেয়ারই তো নেই তাদের।
অথচ টুর্নামেন্টে পুণে তিন ম্যাচ হেরেও এমন সাড়া ফেলে দিয়েছে যার তুলনা হতে পারে একমাত্র রাজস্থান রয়্যালস। না কি রাজস্থানও নয়? বিশ্বকাপ ফুটবলে যেমন কখনও সেনেগাল। কখনও ক্যামেরুন। কখনও কোরিয়া। অদ্ভুত ভাবে সুপার শক্তিধরদের দুনিয়ায় কনিষ্ঠ হয়েও প্রাথমিক মনোযোগ টেনে নিয়েছিল, পুণেও যেন তাই।
শুক্রবার নয়াদল্লিতে নেমে দেখা গেল গোটা দিন যতই গরমে কড়কড় করুক, বিকেল হতেই স্বস্তি। হালকা কখনও কখনও বৃষ্টি পড়ছে। বসন্তকুঞ্জকে দারুণ দেখাচ্ছে। চাণক্যপুরীর বিদেশি দূতাবাসগুলোর সামনের বুলেভার্ডে যেন ফুল-সভা বসেছে। বা বসন্তের আগুন-উৎসব। হোটেলে হোটেলে বিয়ের রিসেপশন। এরই মাঝে শহরে পুণে-র ম্যাচ পড়া যেন নতুন প্রেক্ষিত। আকর্ষণের আর এক ভোল্টেজ। বিস্মিত সুরে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস সিইও অমৃত মাথুর জানালেন, আগের দু’টো ম্যাচে কোটলা মোটেও ভরেনি। কিন্তু শনিবারের টিকিট দু’দিন আগে সব শেষ। অমৃত বললেন, “যারা যারা টিকিট চেয়েছিল প্রত্যেককে ফোন করে এখন সরি বলছি। ভাবতে পারিনি পুণে ম্যাচে এমন ক্রেজ হবে।” এমনই শেষ হয়েছে একমাত্র ২৭ এপ্রিল মুম্বই ম্যাচের টিকিট।
মর্মার্থ: দিল্লিওয়ালারা এমন সাততারা টিম হাতে থেকেও চুলচেরা হিসেব করে, কোন দিন সচিনের খেলা? কোন দিন সৌরভের? সে দিন যাবে।
সচিনেরটা বোঝা সম্ভব। তাঁর আকর্ষণকেন্দ্র তো প্রথম দিন থেকেই। তা বলে চার বছর আগে খেলা ছেড়ে দেওয়া সৌরভ? চেন্নাই গ্যালারিটা কাল পুরো ভর্তি ছিল না যেহেতু জয়ললিতার নির্দেশে মাঠের প্রায় দশ হাজার সিটে টিকিট বিক্রি করা যায়নি। জয়ললিতা-শ্রীনিবাসনে সম্পর্ক মোটামুটি বুদ্ধ আর ডালমিয়া!
কিন্তু সেই আংশিক ভরে থাকা গ্যালারি থেকেও ‘দাদা-দাদা’ বলে কী আকুলিবিকুলি! এ বারের আইপিএলে সেট হয়েও বারবার আউট হয়ে যাচ্ছেন সৌরভ। সর্বোচ্চ রান এখনও ২৫ পার হয়নি। কিন্তু প্রভাবে পুণে স্টেডিয়াম থেকে চেন্নাই হয়ে চিত্তরঞ্জন পার্কের দিল্লি। তাঁর আবেদন যেন আরও বেড়েছে। গ্রেগ চ্যাপেল-পরবর্তী সময়ে যেমন মনে হয়েছিল ক্যাপ্টেন থাকার সময় এই ক্যারিশমা ছিল না। এখন শাহরুখ খান-পরবর্তী সময়ে মনে হচ্ছে, গ্রেগ চ্যাপেলের আমলে এই জনপ্রিয়তা ছিল না। মাঠের প্ল্যাকার্ড, উচ্ছ্বাস, এয়ারপোর্টে ভক্তদের মন্তব্য, প্লেনের মধ্যে উৎসাহ---দেখলে মনে হবে প্রোলেতারিয়েত থেকে চিরঅভিজাত। সব শ্রেণিভুক্তর কাছে এখন ক্রিকেট ছাপিয়ে সৌরভ উন্নীত অন্য ভাবমূর্তিতে।
এই লোকটা সাহস করে অবিচারের বিরুদ্ধে লড়ে। আর বারবার ফিরে আসে আপাতমৃত্যুর কাছ থেকে। তাই এ আমার মনের লোক।
পুণে-র ভাগ্য কী দাঁড়াবে মে মাস বলবে। পুণে কর্তারা নিশ্চয়ই এটুকু বুঝছেন, গত বারও যুবরাজ-সহ টিম আইপিএলে ছিল। কোটলার টিকিটগুলো কিন্তু দু’দিন আগে শেষ হয়ে যায়নি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.