জমি জট
‘সিটি-সেন্টার’ আপাতত ফাইল-বন্দিই
টাকা নেই। জমি অধিগ্রহণের পথেও যাবে না মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এমকেডিএ)। ফলে, খড়্গপুরের চৌরঙ্গিতে ‘সিটি-সেন্টার’ গড়ার পরিকল্পনা আপাতত ফাইল-বন্দি হয়েই থাকছে! নতুন সরকারের নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পর্ষদ। পরিকল্পনার বিস্তারিত জানানোও হয়েছিল। কত টাকা লাগতে পারে, তারও সম্ভাব্য একটা হিসাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সবুজ-সংকেত মেলেনি। ফলে পর্ষদও এই প্রকল্প নিয়ে আর তেমন উৎসাহী নয়। চৌরঙ্গিতে ‘সিটি-সেন্টার’ গড়ার পরিকল্পনা যে এখনই রূপায়িত করা সম্ভব নয়, তা মেনেই পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতির বক্তব্য, “শুধু পরিকল্পনাই হয়েছিল। প্রয়োজনীয় অর্থ কোথা থেকে আসবে, কী ভাবেই বা জমির সংস্থান হবে, তার কোনও ব্যবস্থা হয়নি। ওই প্রকল্প রূপায়িত করতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, তা একা পর্ষদের পক্ষে খরচ করাও সম্ভব নয়।” অথচ, এই প্রকল্প রূপায়িত হলে খড়্গপুর শিল্পতালুক ও তার আশপাশের চেহারা পাল্টে যেত বলেই মনে করছেন স্থানীয় মানুষ।
খড়্গপুর শিল্পতালুকে বেশ কয়েকটি কারখানা গড়ে উঠেছে। নতুন কারখানা গড়ে ওঠারও সম্ভাবনাও রয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই খড়্গপুরের চৌরঙ্গিতে ‘সিটি-সেন্টার’ গড়ার পরিকল্পনা তৈরি করে পর্ষদ। ২০০৮ সালে এই পরিকল্পনা তৈরি হয়। পর্ষদের এক আধিকারিকের কথায়, “খড়্গপুর শিল্পাঞ্চলে তখন একের পর এক শিল্পসংস্থা কারখানা তৈরিতে উৎসাহ দেখিয়েছিল। পরিস্থিতি দেখেই এখানে সিটি-সেন্টার গড়ার পরিকল্পনা তৈরি হয়।” কিন্তু প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য জমি প্রয়োজন। ওই জমি আসবে কোথা থেকে? পর্ষদ সূত্রে খবর, সেই সময়েই চৌরঙ্গি এলাকা পরিদর্শন করা হয়। ‘সিটি-সেন্টার’ গড়ার জন্য সবদিক থেকেই খড়্গপুরের ওই এলাকা উপযুক্ত বলে মনে করা হয়েছিল। ওই এলাকা হয়েই চলে গিয়েছে ৬ ও ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার মধ্যেই থাকবে উন্নত আবাসন, শপিং কমপ্লেক্স, অত্যাধুনিক হাসপাতাল, অডিটোরিয়াম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই সময়ে চৌরঙ্গি থেকে খড়্গপুর শহরে ঢোকার মুখে রাস্তার বাঁ-দিকে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ১২০ একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়। প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণের জন্য ১৬ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়। সরকারের তরফ থেকে প্রথম পর্যায়ে ৮ কোটি টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল বলে পর্ষদের একটি সূত্রের দাবি। তবে জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকল্পও আর এগোয়নি।
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ধাক্কায় জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে তখন অনেকটাই ‘ব্যাকফুটে’ বামফ্রন্ট সরকার। পর্ষদ সূত্রের খবর, পরিকল্পনা তৈরি হয়ে গেলেও স্রেফ জমির জন্য প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। ৫০ একরের বেশি জমি অধিগ্রহণ করতে হলে তখন রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমতি নিতে হত। তাই প্রকল্পের অনুমতি চেয়ে রাজ্যের কাছে আবেদনও করা হয়েছিল। তবে রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের জন্য তখন জমি অধিগ্রহণের অনুমতি দেয়নি। ফলে প্রকল্প রূপায়ণের সিদ্ধান্ত থেকে সে সময়ে পিছিয়ে আসে পর্ষদ। রাজ্যে পালাবদলের পরে পর্ষদের পক্ষ থেকে ফের পুরনো প্রস্তাবই নতুন করে নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়। কিন্তু এ বারও সবুজ-সংকেত মেলেনি। পরিস্থিতি দেখে পর্ষদের আধিকারিকরাও এখন আর উৎসাহ দেখাতে চাইছেন না।
হতাশ এক আধিকারিকের কথায়, “প্রকল্পটি রূপায়িত হলে খড়্গপুরের পাশাপাশি তার আশপাশের এলাকার গুরুত্ব বাড়াত। সিটি-সেন্টার থেকে বছরে কয়েক কোটি টাকা রাজ্য সরকারের আয়ও হত। কিন্তু জমির জন্যই আর কাজ এগোনো সম্ভব হল না।” পর্ষদ সূত্রে খবর, যে জমিটি চিহ্নিত করা হয়েছিল, তা এখন অনুর্বর। আগে চাষযোগ্য ছিল। কিন্তু, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ধাক্কায় এই অনুর্বর জমি অধিগ্রহণেরও ‘ঝুঁকি’ নিতে চায়নি বামফ্রন্ট সরকার। নতুন সরকারও উৎসাহী হয়নি। পর্ষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বলেন, “এই প্রকল্প করতে হলে জমি প্রয়োজন। কিন্তু পর্ষদের হাতে এক ছটাকও জমি নেই। আর এখন জমি অধিগ্রহণও সম্ভব নয়।”
আপাতত তাই ফাইল-বন্দি হয়েই থাকছে ‘সিটি-সেন্টারে’র স্বপ্ন!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.