হাতে লাঠি নিয়ে ভোরে হাঁটতে বার হন আশ্রমপাড়ার নিতাই দে। চোর বা ছিনতাইবাজের ভয়ে নয়। ভয়ের কারণ বেওয়ারিশ কুকুর। হাকিমপাড়া থেকে আশ্রমপাড়া, কলেজপাড়া থেকে সুভাষপল্লি, কোথাও কুকুরের জ্বালায় শান্তিতে দু’পা হাঁটতে পারেন না তিনি। দলে দলে কুকুর রাস্তায় জুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। খেলাঘর মোড়ের কাছে তো বেশ কয়েকদিন কুকুরের তাড়া খেয়েছেন। হাকিমপাড়ার রমলা ঘোষের সমস্যা অন্য। বয়স বাড়ায় একটু পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে ঝোঁক বেড়েছে। ভোরে হাঁটতে বার হয়ে রাস্তা জুড়ে কুকুরের মলমূত্রে বেশ কয়েকটি রাস্তা পা দিতে পারেন না তিনি। অথচ সকালে হাঁটার সময়ে এদিক ওদিক থেকে ফুল তোলার কাজটাও সেরে নেন তিনি। কেবল নিতাইবাবু কিংবা রমলা দেবীই নন, শিলিগুড়ি শহরের নানা প্রান্তেই এখন শোনা যায় কুকুর নিয়ে বাসিন্দাদের ওই বিরক্তির কথা। পালে পালে কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরের নানা প্রান্তে। রাতে কিংবা ভোরে একাকী রাস্তায় বার হয়ে কুকুরের তাড়া কিংবা কামড়ে দেওয়ার ঘটনাও কম নয়। প্রতিদিন অন্তত ২৫ জন কুকুরের কামড় নিয়ে হাজির হচ্ছে হাসপাতালে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, সমস্যার কথা এলাকার কাউন্সিলর থেকে পুরসভার কর্তাদের কয়েকবার জানানোর পরেও সমস্যা মিটছে না। উল্টে পুরকর্তারা নাগরিকদের কুকুর থেকে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়েই দায়িত্ব সারছেন বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী হত্তের যুক্তি, “আসলে কুকুর ধরে রাখার মতো পরিকাঠামো আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। ফলে তাদের ধরা যাচ্ছে না। পাগলা কুকুরকেও ধরা সম্ভব নয়। এই অবস্থায়, আমাদের করণীয় তেমন কিছু নেই। মানুষকে সাবধান হতে হবে।” প্রায় একই রকমের যুক্তি দিয়েছেন পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, “এটা এমন একটা সমস্যা যে আমার একার দফতরের পক্ষে কিছু সম্ভব নয়। পুরসভার মেয়রের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।” এই অবস্থায় করণী কী সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, বিধান মার্কেট, হাকিমপাড়া, সুভাষপল্লি, বাববুপাড়া, প্রধাননগর থেকে বিস্তীর্ণ এলাকায় কুকুরের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। রাত ৯ টার পরে বিধান মার্কেট, হাকিমপাড়া এলাকায় চলাচল করা ভয়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময়ে কুকুরের সংখ্যা কমাতে পুরসভার তরফে নির্বীজকরণের একটি প্রকল্প চালু শুরু করা হয়েছিল। সেই প্রকল্প কেন বন্ধ সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। এই ব্যাপারে ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মার বক্তব্য, “কুকুর নির্বীজকরণ কেন্দ্রটি চালু করার ব্যপারে উদ্যোগী হয়েছিলাম। সেটা করতে পারিনি। ফলে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সেখান থেকেই সমস্যা হচ্ছে।” মেয়র অবশ্য ওই প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে শহরে যেভাবে কুকুরে কামড়ানোর ঘটনা বাড়ছে তাতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও। শিলিগুড়ি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “প্রতিদিন কুকুড়ে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ভ্যাকসিন দিতে হচ্ছে সকলকে।” দার্জিলিংয়ের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক বলেন, “কুকুরে কামড়ানোর প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন রয়েছে। সকলকেই ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।” |