মৃত্যুর দুই শংসাপত্র, তথ্যের গরমিলে অভিযুক্ত পঞ্চায়েত
মারা যাওয়ার চার বছর পরে ‘খাতায়-কলমে’ দ্বিতীয় বার ‘মৃত্যু’ হল হুগলির জিরাটের অনিল মণ্ডলের।
পুরসভার দেওয়া মৃত্যুকালীন শংসাপত্রে মৃত্যুর তারিখ, জায়গার সঙ্গে পঞ্চায়েত থেকে দেওয়া শংসাপত্রে অমিল রয়েছে। অভিযোগ, পরিবারটিকে ‘অনৈতিক’ ভাবে ‘আর্থিক সুবিধা’ করে দিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এই গরমিল করা হয়েছে পঞ্চায়েতের তরফে। প্রশাসনের নজরে আসার পরে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের তরফে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
প্রশাসনের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালের ১৮ জুন হুগলির জিরাট হাটতলার বাসিন্দা অনিলবাবু আম পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে যান। চার দিন পরে, ২২ জুন চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে মারা যান তিনি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত বা পুরসভার কাছ থেকে মৃত্যুর শংসাপত্র নেওয়ার কথা। সেই মতোই হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভা থেকে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরেরর তরফে অনিলবাবুর বাড়ির লোক ওই শংসাপত্র (রেজিস্ট্রেশনের তারিখ ২২-০২-২০১০। মেমো নং ২২৮৪) নেন। মৃত্যুর স্থান হিসেবে উল্লেখ করা আছে ‘চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল’-এর নাম। শংসাপত্রে অনিলবাবুর বয়স উল্লেখ আছে ‘৪০’ বছর।
কয়েক মাস আগে বলাগড় ব্লকের জিরাট পঞ্চায়েতের কাছে ফের অনিলবাবুর মৃত্যুর শংসাপত্র চেয়ে আবেদন করা হয় তাঁর বাড়ির তরফে। নতুন শংসাপত্রে দেখা যায়, মৃত্যুর তারিখ দেওয়া হয়েছে, ‘২২ জুন, ২০১১’। মৃত্যুর জায়গা হিসেবে লেখা হয়েছে ‘জিরাট হাটতলা’। রেজিস্ট্রেশনের তারিখ ‘৪ নভেম্বর, ২০১১’। শংসাপত্রে বলাগড়ের যুগ্ম বিডিও এবং পঞ্চায়েত প্রধান অশোক পোদ্দারের সইও রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, বিপিএল কার্ডের তালিকাভুক্ত কোনও পরিবারে কারও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সেই পরিবারকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে অনিলবাবুর পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে পঞ্চায়েতের তরফে দেওয়া মৃত্যুর শংসাপত্র অনুযায়ী সেই টাকা দেওয়াও হয়েছে। পরিবারটিকে ‘আর্থিক সুবিধা’ পাইয়ে দিতেই এ ক্ষেত্রে মৃত্যুর দীর্ঘ ৪ বছর পরে ফের ‘ভুল তথ্যভিত্তিক’ শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
জিরাট পঞ্চায়েতটি তৃণমূল পরিচালিত। অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান অশোকবাবু বলেন, “আমাদের দিনে প্রচুর সই করতে হয়। বিপিএল তালিকাভুক্ত ওই পরিবারের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েতে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করা হয়। সমস্ত কাগজপত্র পরীক্ষার পরেই শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। সরকারি সাহায্যের টাকাও দেওয়া হয় সেই মতো। পঞ্চায়েতের তরফে কোনও ভুল বা অনিয়ম করা হয়নি।”
মৃতের স্ত্রী পুষ্প পাল অবশ্য বলেন, “পঞ্চায়েত প্রধান বলেছিলেন, যে হেতু আমরা গরিব, সরকারি টাকার ব্যবস্থা করে দেবেন। সেই কারণেই টাকার আবেদন করি। প্রথম বারের শংসাপত্র বছর তিনেক আগের।”
চুঁচুড়ার মহকুমাশাসক জলি চৌধুরী বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পঞ্চায়েতের তরফে কাগজপত্রে গাফিলতির বিষয়টি নজরে এসেছে। তবে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।” প্রশাসনের অন্য এক কর্তার কথায়, “মৃত্যুর ছ’মাসের মধ্যেই ওই আর্থিক সুবিধা পাওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট পরিবারের। সেই সময় অতিক্রম করে গেলে টাকা আর পাওয়া যায় না। সে বিষয়টি এড়াতেই সম্ভবত দ্বিতীয়বার মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে ওই পরিবারটিকে।” সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমনই, ‘মরেও শান্তি নেই’ অনিলবাবুর!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.