|
|
|
|
চাকরি দিতে কোর্টের রায় |
ষাট পেরোনোরা হতাশ, অন্যেরা বলছেন ‘সত্যের জয়’ |
নুরুল আবসার • শ্যামপুর |
আদালতের রায় পক্ষে গেলেও এক দল ভাবছে, এ বার ক্ষতিপূরণের মামলা করবে। কেন না, বয়স ষাট পেরিয়ে যাওয়ায় আর তো সরকারি চাকরি হবে না।
অন্য দল ভাবছে, হোক দেরি, দু’তিন বছরের জন্য হলেও সরকারি চাকরিটা করা উচিত।
১৯৮৬ সালে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরির জন্য আবেদন করে, পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাননি হাওড়া জেলার ৩১ জন। প্যানেলে দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সুপ্রিম কোর্ট আবেদনকারীদের পক্ষে মত দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টকেই মামলাটির নিষ্পত্তি করতে বলে। ১৯ বছর মামলা চলার পরে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টও আবেদনকারীদের পক্ষেই রায় দেয়।
তবে, ওই ৩১ জনের মধ্যে যে চার জনের বয়স অবসরের সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে, তাঁদের চাকরি হবে না।
সেই দলেই পড়েছেন শ্যামপুরের কাঁটাপুকুরের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন বেরা এবং গোবিন্দপুর গ্রামের মলিনা বাগ প্রামাণিক। চিত্তরঞ্জনবাবুর বয়স এখন ৬০ বছর ৬ মাস। মলিনাদেবীও তাঁর সমবয়সী। তাঁরা বলছেন, “এ বার সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবিতে মামলা করব।” |
|
ষাটোর্ধ্ব চিত্তরঞ্জন বেরা ও মলিনা বাগ প্রামাণিক।
ছবি: হিলটন ঘোষ। |
দীর্ঘ দিন চাকরি পাওয়ার আশায় দিন কেটেছে চিত্তরঞ্জনবাবুর। শেষমেশ সব ছেড়ে মন দেন চাষাবাদে। শুক্রবার মাঠে ধান কাটতে কাটতে হাইকোর্টের রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তাঁর গলা থেকে ঝরে পড়ে হতাশা। “শিক্ষকতার সব যোগ্যতাই আমার ছিল। আশা ছিল, চাকরি পেলে দোতলা বাড়ি করব। সরকারের দোষে চাকরিটা পেলাম না। অথচ, প্রমাণিত হল আমরাই ঠিক ছিলাম। আমার এতগুলো বছর নষ্ট হল। এ বার ক্ষতিপূরণের জন্য ফের মামলা করব।” একই সুরে মলিনাদেবীও বলেন, “শিক্ষকতার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ছিল। কিন্তু চাকরি পেলাম না। জীবন থেকে এতগুলো মূল্যবান বছর কেড়ে নেওয়ার জন্য আমি সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবিতে মামলা করব।”
ওই ৩১ জনের মধ্যেই ছিলেন বাগনানের বেনাপুরের সুমোহন মণ্ডলও। বয়স ৫৭ ছুঁয়েছে। বর্তমানে হাওড়ার একটি ছোট কারখানায় কাজ করেন। এ বার সেই কাজ ছেড়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। হাইকোর্টের বৃহস্পতিবারের রায় তাঁর কাছে ‘সত্যের জয়’। স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার।
সুমোহনবাবুর কথায়, “আমার চেয়ে কম যোগ্যতার প্রার্থীরা চাকরি পেয়েছিলেন সেই সময়ে। মামলার জন্য প্রচুর খরচ করেছি। সুবিচারের জন্য শত কষ্টেও পিছোইনি। দেরিতে হলেও সুবিচার পেলাম। এটা প্রমাণ করতেই যোগ দিতে চাই কাজে।”
সুমোহনবাবুর মতোই হাইকোর্টের রায়ে স্কুল শিক্ষকতার শিকে ছিড়েছে শ্যামপুরের রামনগরের বাসিন্দা, বছর ছাপ্পান্নর সুনীল সামন্তের ভাগ্যেও। বেলপুকুর বাজারে তাঁর ছোট কাপড়ের দোকান রয়েছে। তিনিও বলেন, “বয়স হয়েছে ঠিকই। তবু স্কুলে যোগ দেবই, যত দিনই চাকরি করি না কেন।” এখন কবে, কী ভাবে নিয়োগপত্র মিলবে, সেই চিন্তায় বিভোর সুমোহন, সুনীলবাবুরা। |
|
|
|
|
|