দুই ধীবরকে গুলি করে মারার ঘটনায় বিরোধটা এখন আর শুধু ইতালি ও ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। কেন্দ্রীয় সরকার ও কেরলের উমেন চান্ডির সরকারের মধ্যেও প্রকট হয়ে উঠেছে বিরোধ। সুপ্রিম কোর্টে আজ কেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছে, ইতালির জাহাজ ‘এনরিকা লেক্সি’ থেকে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল গভীর সমুদ্রে। তাই কেরল পুলিশের কোনও থানার এক্তিয়ারই নেই জাহাজটিকে আটক করে রাখার। কেরল সরকার কিন্তু নিজেদের অবস্থানে অনড়। কেন্দ্রের ওই বক্তব্য নিয়ে মুখ খুলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডি। তাঁর বক্তব্য, “এ পর্যন্ত কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করেই যা কিছু করা হয়েছে। তা ছাড়া, ঘটনাটা ঘটেছিল আমাদের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার মধ্যেই।”
ইতালির তরফে আজ ‘এনরিকা লেক্সি’-র দুই রক্ষী লাতোর ম্যাসিমিলিয়ানো ও সালভাদোর গিরোনি-র মুক্তির জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে। ওই দু’জনের বিরুদ্ধে খুনের যে এফআইআর দায়ের করেছে কেরল প্রশাসন, সেটি বাতিল করার আর্জি রেখেছে তারা। ওই আর্জির সূত্রেই কেন্দ্র আজ তার অবস্থান জানিয়েছে শীর্ষ আদালতে।
এ দেশে যাতে তাদের দুই সেনার বিচার না হয় তার জন্য আইনি পথে চেষ্টা চালানোর পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বাড়িয়েও সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে ইতালি। এর আগে তাদের দুই সেনার গুলিতে নিহত দুই ধীবরের পরিবারকে ৭০ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল তারা। কাল তারা পরিবারপিছু ২ লক্ষ ডলার (প্রায় ১ কোটি টাকা) করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি আদালতের বাইরেই সমঝোতায় পৌঁছনোর লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দুই পরিবারের সঙ্গে একটি চুক্তিও করার চেষ্টা চালাচ্ছেন সে দেশের প্রতিনিধিরা। ইতালির প্রতিরক্ষাসচিব নিজে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে এ দেশে দুই ইতালীয়ের বিচার ও তাদের জাহাজটি আটক করে রাখার জট কাটছে না এতেও। নিহত ধীবর তামিলনাড়ুর আজিশ বিঙ্ক-এর স্ত্রীর বক্তব্য, ছোট দুই ননদের বিয়ে দিতে হবে। আমাদের এখানে প্রচুর পণ দিতে হয়। আমরা তাই দু’কোটি টাকা চেয়েছিলাম।” আর এক নিহত কেরলের জেলেস্টাইন। তাঁর ১৮ বছরের ছেলে ডেরেক হতে চান ইঞ্জিনিয়ার। ডেরেকের বক্তব্য, “ছোট ভাইয়ের বয়স ১০ বছর। বাবাই ছিলেন পরিবারে একমাত্র রোজগেরে।” গত কালই কেরলের কোল্লাম আদালত থেকে মামলাটি লোক আদালতে নেওয়ার জন্য কেরল হাইকোর্টে আর্জি রেখেছে দুই পরিবার। কোল্লাম আদালত আজ ওই মামলা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেছে। তত দিন হাজতেই থাকবেন দুই ইতালীয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ দেশে বন্দি রয়েছেন তাঁরা। |