পরেশপন্থী আলফার হুমকি ও বনধ অগ্রাহ্য করেই আজ অসম সফরে এলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাঁর নির্ধারিত কর্মসূচিগুলি সবই পালিত হয়েছে। নিজেকে অসমের ‘দত্তকপুত্র’ দাবি করে তিনি জানিয়ে গেলেন, দ্বাদশ পরিকল্পনার শেষে এই রাজ্য দেশের প্রথম সারির রাজ্যগুলির সঙ্গে পাল্লা দেবে। উন্নয়নের হার ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে অসম রেকর্ড গড়বে বলেও ঘোষণা করলেন তিনি। দেশের শীর্ষ নেতার যাবতীয় প্রতিশ্রুতির মধ্যেও কিন্তু এ দিন ‘কাঁটা’ হয়ে রয়ে গেল পরেশপন্থী আলফার বন্ধ। বড় অঘটন কিছু না ঘটলেও শহর গুয়াহাটি আজ আক্ষরিক অর্থেই ছিল বন্ধস্তব্ধ। পরেশ বরুয়া গোষ্ঠী যে এখনও কাগুজে বাঘ নয়, এ দিন জনমানবশূন্য গুয়াহাটি সেই বার্তাই কিন্তু দিয়ে গেল।
মনমোহন জানালেন, বিকাশের হারে দেশকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে অসম। তাই, দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় রাজ্যের উৎপাদনের হার ৯ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলেন তিনি। আজ অসম সচিবালয়ের প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী উৎসব উদ্যাপনের উদ্বোধন করতে গুয়াহাটি এসে‘দত্তক রাজ্য’ অসমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ মনমোহন বলেন, “নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময় অসমের উন্নয়নের হার ছিল মাত্র ১.৫১ শতাংশ। একাদশ পরিকল্পনায় তা গিয়ে
দাঁড়াচ্ছে ৭.৬৮ শতাংশ। পরবর্তী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, সকলকে হাতে হাত মিলিয়ে, উন্নয়নের হারকে ৯ শতাংশ করতে হবে।” |
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের অসম সফরের প্রতিবাদে আলফার ডাকা
বন্ধে জনশূন্য গুয়াহাটির রাস্তাঘাট। শুক্রবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি। |
সকালে বিমানবন্দর থেকে কপ্টারে, নেহরু স্টেডিয়ামে আসেন প্রধানমন্ত্রী। তার পর সড়কপথে যান বি বরুয়া ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউট। সেখানে, ‘লিনিয়ার অ্যাক্সেলারেটর উইথ ইনটেনসিটি-মডিউলেটেড রেডিয়েসন থেরাপি’ ও ‘ইমেজ-গাইডেড রেডিয়েসন থেরাপি’ পরিষেবার উদ্বোধন করেন। তারপর যান দিসপুর সচিবালয়ে। ১৯৩৭ সালের ৭ এপ্রিল, শিলংয়ে অসম সচিবালয়ের প্রথম অধিবেশন বসে। ১৯৭২ সাল অবধি শিলং ছিল অসমের রাজধানী। এর পর, দিসপুরে সচিবালয় গড়ে ওঠে। সরে আসে ক্ষমতার কেন্দ্র। স্থানীয় সাংসদ মনমোহন জানান, সচিবালয়ের নতুন ভবনের কাজ ২০১৪ সালের মধ্যে শেষ হবে। বিধানসভার পাশাপাশি, দীর্ঘদিনের দাবি মেনে গড়া হবে বিধান পরিষদ। যা, নতুন ভবনে কাজ শুরু করবে।
বক্তৃতায় ২০১৩ সালের মধ্যে গ্যাস ক্র্যাকার প্রকল্প ও বঙ্গাইগাঁও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র শেষ করার আশ্বাস এবং গত ৫ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে আজ মনমোহন বলেন, “আজকের অসম বুঝতে পেরেছে সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোনও সমাধান আসে না। তাই একে একে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলি, আলোচনা প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে। বাকিরাও, আশা করি, দ্রুত রাজ্যে উন্নয়নের শরিক হয়ে উঠবে।” বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কে উন্নতির উপরে বেশি জোর দিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বের সঙ্গে মায়ানমার ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে গোটা ‘আসিয়ান’ অঞ্চলেই ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে শিল্পায়ন, যোগাযোগ ও পরিকাঠামো বৃদ্ধির উপরেও বিশেষ জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অসম আমায়, নিজস্ব ঠিকানা দিয়েছে। সেই অর্থে আমি অসমের দত্তক সন্তান। তাই রাজ্যের উন্নতিতে আমি যথাসাধ্য করব।” কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আবেগকে উড়িয়ে দিয়ে, পরেশপন্থী আলফার দাবি , “নিজেকে ভুয়ো অসমিয়া পরিচয় দিয়ে রাজ্যবাসীকে অপমান করছেন প্রধানমন্ত্রী। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্যই, মনমোহন সিংহকে অসমিয়া পরিচয় ‘বিক্রি’ করেছে রাজ্য কংগ্রেস।” প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রতিবাদে, আজ, রাজ্যজুড়ে ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছিল আলফার পরেশপন্থী গোষ্ঠী। পরেশপন্থীদের ডাকা বন্ধ ও হুমকিকে রাজ্য সরকার উড়িয়ে দিলেও, আজকের বন্ধ কার্যত সর্বাত্মক হয়। গুয়াহাটি-সহ সর্বত্র দোকানপাট, স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। চলেনি কোনও অটো-বাস। |