দলের নেতাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড় আর ছোট বড় নানা প্রসঙ্গে নিজেদের মধ্যে কোন্দলে ক্ষতি হচ্ছে বিজেপির। তাই লোকসভা ভোটের বছর দুই আগেই দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী স্থির করার জন্য আরএসএসের উপর চাপ বাড়ানো শুরু করল বিজেপি নেতৃত্বের একটি বড় অংশ।
সঙ্ঘ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁদের সাম্প্রতিক আলোচনায় এটা স্পষ্ট ভাবে উঠে এসেছে, সরকারের শীর্ষ পদের প্রার্থী হিসেবে কোনও এক জনকে নির্দিষ্ট না করে দিলে দলের মাথাদের কোন্দল চলতেই থাকবে। যার জন্য গোটা দলকেই ভুগতে হচ্ছে। এক জনকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী বেছে নেওয়া হলে নেতায়-নেতায় এই লড়াই বন্ধ হবে। সে কারণে এখনই প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী বাছাইয়ে পক্ষে প্রকাশ্যেই সওয়াল শুরু করেছেন বিজেপি নেতারা।
এই নেতাদের এক-এক জনের পছন্দের নাম আবার আলাদা। কেউ লালকৃষ্ণ আডবাণীর পক্ষে। কেউ বা চান নরেন্দ্র মোদী, সুষমা স্বরাজ বা অরুণ জেটলিকে। কারও সমর্থন নিতিন গডকড়ীর প্রতি। এই অবস্থায় আরএসএস-এর প্রতি বিজেপি নেতাদের বার্তা, যাঁকেই এই পদের জন্য বাছা হোক না কেন, অন্য পক্ষের তা পছন্দ হওয়ার কোনও কারণ নেই। কিন্তু দলের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দৌড় বন্ধ হবে। যাঁকে চিহ্নিত করা হবে, তার জন্য গোটা দল সংগঠিত হয়ে এখন থেকেই লোকসভা নির্বাচনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবে। সভাপতি পদে অভিষেকের পর থেকেই নিতিন গডকড়ী বলে আসছেন, পরের লোকসভা নির্বাচনে কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী করা হবে না। কিন্তু ঠিক উল্টো বক্তব্য দলের প্রাক্তন সভাপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুর। তিনি বলছেন, “প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য দলের প্রার্থী স্থির করা হবে লোকসভা নির্বাচনের আগেই।” শুধু তাই নয়, দার্জিলিঙের সাংসদ যশোবন্ত সিংহ আর এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে লালকৃষ্ণ আডবাণীই একমাত্র সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারেন। তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী করা উচিত।”
বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠকের ফাঁকে দলের মুখপাত্র রাজীব প্রতাপ রুডিও আজ আলাপচারিতায় বলেন, “দলের সব নেতার কাছে আমি ব্যক্তিগত ভাবে আবেদন জানিয়েছি, আগামী ছ’মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী স্থির করে ফেলুন। প্রায় সব দলেরই যেখানে ‘মুখ’ রয়েছে, সেখানে বিজেপির মতো কেন্দ্রের প্রধান বিরোধী দল ‘নেতাহীন’, ‘মুখহীন’ হয়ে থাকতে পারে না।”
প্রশ্ন হল, লোকসভা নির্বাচনের এত আগে, হঠাৎ করে কেন বিজেপি নেতারা প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী স্থির করা নিয়ে এই রকম উঠেপড়ে লাগলেন? বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, ক’দিন আগেই আরএসএস নেতৃত্ব দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিজেপির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সকলের সঙ্গে পৃথক আলোচনা হয়। বিজেপি নেতারা, বিশেষ করে নিচু তলার কর্মীরা মনে করছেন, দলের যদি কোনও নেতা না থাকে, তা হলে মাঠে-ঘাটে কাজ করা সমস্যা হয়। তা ছাড়া নির্দিষ্ট এক জন নেতার কর্তৃত্ব না থাকায় দলের মাথাদের কোন্দল প্রকাশ্যে আসছে নিত্যদিন। তার খেসারত দিচ্ছেন নিচু তলার কর্মী ও নেতারা। জয়ললিতা, নীতীশ কুমার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা যেখানে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরার অবস্থান নিচ্ছেন, সেই সময় বিজেপির মতো এত বড় দলের পিছিয়ে থাকার কোনও অর্থ হয় না।
এই কারণেই প্রায় সমস্বরে বিজেপি নেতারা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী স্থির করার জন্য আরএসএসকে চাপ দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রেও রয়েছে নাম ও সময় নিয়ে দড়ি টানাটানি। কেউ চাইছেন, এ বছরের শেষে গুজরাত নির্বাচনের আগেই মোদীর নাম ঘোষণা করা হোক। কেউ আবার চান, গুজরাত ভোটের আগেই নাম স্থির করা হোক, তবে মোদীর নাম যেন না আসে। দলের মধ্যে এই রকম টানাহেঁচড়ার মধ্যে কাকে বেছে নেবে আরএসএস?
সম্ভবত তাদের কাছেও এ এক কঠিন প্রশ্ন। |