সকালে মহাকরণ, সন্ধ্যায় স্টিফেন কোর্ট। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দু’বার আগুনের আতঙ্ক তাড়া করল শহরকে। এ যাত্রায় অল্পে রক্ষা পেলেও রাতের অন্ধকারে এমন ঘটলে সমস্যা বাড়ত বলেই মনে করেন দমকলকর্তারা। ফলে আমরি বা স্টিফেন কোর্টের বিপর্যয়ের পরেও আগুনের বিপদে এ শহর কতটুকু শিক্ষা নিয়েছে, তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল।
শুক্রবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে মহাকরণের চারতলায় তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের ‘নিউজ ব্যুরো’র অফিসে আগুন লাগে। তখনও কাজ শুরু হয়নি। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন আধ ঘণ্টায় পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। এর পরে সন্ধ্যা সওয়া ছ’টা নাগাদ পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টে ধোঁয়া দেখে কয়েক মুহূর্তের জন্য ফিরে এসেছিল পুরনো আতঙ্ক। ২০১০-এর ২৩ মার্চ যেখানে আগুন লেগেছিল, সেখানেই বহুতলটির দু’নম্বর লিফ্টের পাশে পাঁচতলায় আগুন লাগে এ দিন। ধোঁয়া দেখে প্রথমে একতলায় মিডলটন স্ট্রিটের দিকে রেস্তোরাঁর কর্মীরা চেঁচামেচি শুরু করেন। বহুতলটির নীচের রেস্তোরাঁ ও দোকানের নিরাপত্তারক্ষীরা লোকজনকে বার করে দরজা বন্ধের তোড়জোড় করছিলেন। তখনই দমকল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলে। |
সকালে মহাকরণের আগুনের পরে পুলিশ কমিশনার, দমকলের ডিজি এবং তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের সচিবকে নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন ঘটনার পরে সচরাচর যা ঘটে, এ দিনও তেমনই দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান মহাকরণের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়ার কথা বলেন। বস্তুত, মহাকরণে আগুনের বিপদের বিষয়টি অন্তত এক যুগ আগে বাম জমানার সময় থেকেই বহুচর্চিত। বাম আমলেও একাধিক বড় অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। তখন লাল দিঘির জল দিয়ে ‘পাম্পিং সিস্টেম’ তৈরি বা মন্ত্রীদের ঘরে ‘স্মোক অ্যালার্ম’ বসানোর মতো কিছু কাজ হয়। রক্ষণাবেক্ষণের খামতিতে সেগুলি কার্যকর হয়নি বলে দমকল কর্তারাই মানেন। এ দিন দমকলমন্ত্রী দাবি করেন, নতুন সরকার এসে মহাকরণে ইঞ্জিন রাখাতেই আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু দমকল কর্তাদের বক্তব্য, ওই ইঞ্জিনের হোসপাইপে পাঁচতলার আগুন নেভানো যেত না। অন্য ভাবে সামলাতে হয়েছে। দমকলের ডেপুটি ডিরেক্টর তপন ঘোষ বলেন, “শর্ট সার্কিটেই আগুন লাগে। দিনে কর্মীরা থাকায় সুবিধে হয়েছে। রাতে হলে বড় বিপদ হত।” আগুনে ওই অফিসের তিনটি কম্পিউটার, একটি স্ক্যানার ও দেওয়ালের কাঠের র্যাক পুড়েছে। তবে সেগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ নথি ছিল না বলে জানান দফতরের অফিসারেরা।
স্টিফেন কোর্টের আগুনের জেরেও বহুতলটিতে নজরদারি বাড়ানো দরকার বলে মনে করছে দমকল। বহুতলের এক ও দু’নম্বর ব্লক এখনও ধ্বংসস্তূপ। প্রশাসনের নির্দেশে দু’বছর বাদে সবে ওই অংশটি সংস্কারের কাজ শুরু হচ্ছে। দমকলের কর্তাদের ধারণা, সম্ভবত ওই কাজের সময়েই কোনও শ্রমিকের ফেলে যাওয়া বিড়ি-সিগারেটের টুকরো থেকে আগুন লাগে। |