|
|
|
|
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় |
নাম-বিতর্ক সুরাহায় ‘সূত্র’ মমতার দফতরের |
কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী |
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঘিরে বিতর্কের অবসানের লক্ষ্যে কলকাতা মাদ্রাসা কলেজকে পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব দিল রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর। দফতরের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সম্প্রতি এই মর্মে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের দায়িত্বও মুখ্যমন্ত্রীর হাতে।
এ আর কিদোয়াই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ‘কলকাতা মাদ্রাসা কলেজ’কে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করেছিল পশ্চিমবঙ্গের পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার। সেই প্রতিষ্ঠানের নাম হয় ‘আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়’, সেখানে কলা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানা পাঠ্যক্রম চালু হয়। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একটি ক্যাম্পাস খোলা হয় সল্টলেকে। কিন্তু কলকাতা মাদ্রাসা কলেজের একদল ছাত্র দাবি তোলেন, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে ‘মাদ্রাসা’ শব্দটি রাখতে হবে। দাবি আদায়ের জন্য একটা সময়ে তাঁরা অনশনেও বসেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতার প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে তাঁর সরকার ওই ছাত্রদের দাবি মেনে প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘আলিয়া মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়’ করে দেবে।
তবে রাজ্যে পালাবদলের পরে মমতার নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার এই উদ্যোগ শুরু করলে বেঁকে বসেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরই আর এক দল পড়ুয়া। এমনকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামবদলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁরা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাওয়ার হুমকিও দেন। বিদ্বজ্জনেরা জানান, সাধারণ ভাবে ‘মাদ্রাসা’ শব্দটি ‘বিদ্যালয়’ অর্থে ব্যবহৃত। তাই কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে সেটি জুড়ে দেওয়া যায় না।
দু’তরফের চাপের মধ্যে পড়ে মুখ্যমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত বিতর্কের নিষ্পত্তির জন্য সমবায়মন্ত্রী হায়দার আজিজ সফির নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গড়ে দেন। কমিটির অন্য দু’জন হলেন টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম নূর রহমান বরকতি ও ফুরফুরার পিরজাদা ত্বোহা সিদ্দিকী। কমিটি অবশ্য এখনও তাদের সুপারিশ পেশ করেনি। সমবায়মন্ত্রীর কথায়, “আমাদের কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। নামের ব্যাপারে চূড়ান্ত রিপোর্ট আমরা এখনও মুখ্যমন্ত্রীকে জমা দিইনি।”
তবে কমিটির সুপারিশের আগেই সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে ‘মাদ্রাসা’ শব্দটি যুক্ত করায় সমস্যা রয়েছে। তাই রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের ‘কলকাতা মাদ্রাসা কলেজ’টিকে ধর্মতত্ত্ব পঠনপাঠনের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হোক, এবং তার নাম হোক ‘কলকাতা মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়।’ দফতরের প্রস্তাব, সেখানে শুধু কামিল ও মমতাজুল মহাদ্দিশিন (ইসলামি ধর্মতত্ত্বের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম) পড়ানো হবে।
কিন্তু বিতর্ক এড়ানোর উদ্দেশ্যে দেওয়া এই প্রস্তাবটি নিয়েও নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। প্রশ্ন
উঠেছে, কলকাতা মাদ্রাসা কলেজেরই
উন্নয়ন ঘটিয়ে তো আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
হয়েছে! তা হলে এখন আবার তার পৃথক
অস্তিত্ব থাকবে কেন? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ওসমান গনির মতে, ধর্মকে ভিত্তি করে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না। তা হওয়া উচিত কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে। প্রবীণ ওই শিক্ষকের কথায়, “মাদ্রাসা মানে পাঠশালা। তাই ‘মাদ্রাসা’ নাম দিয়ে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে গেলে সেখানে আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থাই
রাখতে হবে। ধর্মতত্ত্ব সেখানে একটি বিভাগ
হতে পারে।”
পাশাপাশি শহরের এক সাহিত্যিক-চিন্তাবিদের বক্তব্য, “শুধু ধর্মতত্ত্বের দু’টো পাঠ্যক্রমের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় গড়লে আগামী দিনে টোলগুলোকেও তো বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি উঠতে পারে!”
কিছু ছাত্রের দাবি মেটাতে রাজ্যের এই প্রয়াসে আখেরে সমস্যা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওই চিন্তাবিদ। |
|
|
|
|
|