শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেলকে কালীঘাট মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষা এবং ভক্ত সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য কড়া দাওয়াই দিতে হল। নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ। পাণ্ডা, সেবায়েত, ভক্ত, দর্শনার্থী, এমনকী ভিআইপি ও ভিভিআইপি-রাও এখন থেকে গর্ভগৃহে প্রবেশাধিকার পাবেন না। শুধুমাত্র গর্ভগৃহ পরিষ্কার করা ও বিগ্রহের পোশাক পরিবর্তনের জন্য এক জন পূজারি কিছুক্ষণের জন্য ঢুকতে পারবেন। অন্য সকলকে গর্ভগৃহের সামনে থেকেই মাতৃমূর্তি দর্শন করতে ও পুজো দিতে হবে।
সরকারি আইনজীবী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার প্রধান বিচারপতিকে বলেন, বিগ্রহ দর্শনের সময়ে ভিআইপি-দের আলাদা ব্যবস্থা না-থাকলে তাঁদের বিপদ হতে পারে। প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ এই যুক্তি মানেনি। হাইকোর্টের বক্তব্য, ভিআইপি-দের নিরাপত্তার ব্যবস্থা অবশ্যই থাকবে। কিন্তু দর্শন ও পুজোর ক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গে সাধারণ ভক্তদের ফারাক থাকতে পারে না। সেখানে সব ভক্তই সমান। |
এ দিন শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি বুঝিয়ে দেন, ইতিমধ্যেই অনেক সময় ব্যয় করা হয়েছে, আর দেরি করা যাবে না। রাজ্য সরকারের দুই প্রতিনিধি জি পি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ও পি পি দেবাশিস রায় প্রথম থেকেই ডিভিশন বেঞ্চের কাছে কড়া রায় দেওয়ার আবেদন জানান। তাঁদের বক্তব্য, মন্দির কমিটি, পাণ্ডা ও সেবায়েতরা সব সময়েই জল ঘোলা করে ফায়দার কথা ভাবছেন। অশোকবাবু বলেন, “ভক্তদের কথা কেউ ভাবছেন না। মন্দিরের বিপুল আয় হল এই সমস্যার মূলে। ব্রিগেডিয়ারের মতো কাউকে মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে। মন্দির কমিটিই সব অব্যবস্থার মূলে।” দেবাশিসবাবু বলেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি মন্দির কমিটি জানায় হাইকোর্টের সব নির্দেশ পালন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। পাণ্ডা-রাজ যেমন চলত, তেমনই চলছে।
মন্দির কমিটির সম্পাদক গোপাল মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁদের আইনজীবী এ দিন হাজির না হওয়ায় গর্ভগৃহে ভক্তদের প্রবেশ যে মূল সমস্যা নয়, তা হাইকোর্টকে বলা যায়নি। প্রধান বিচারপতি স্বচক্ষে মন্দিরের পরিবেশ দেখে আসার পরে এ দিন শুনানির সময়ে মন্দির কমিটির কোনও বক্তব্যই আর প্রাধান্য পায়নি।
ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, গর্ভগৃহের বাইরে দু’জন পুরোহিত পালা করে বসবেন। তাঁরাই পুজো করাবেন। প্রতি দিন সকাল থেকে ডিসপ্লে বোর্ডে জানাতে হবে, কখন কোন পুরোহিত বসছেন। কলকাতা পুলিশের এক জন ডেপুটি কমিশনার মন্দিরের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। এসি পদমর্যাদার এক জনকে গর্ভগৃহের বাইরে থাকতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে মন্দির, গর্ভগৃহ ও মন্দির সংলগ্ন যে কোনও এলাকায় সিসিটিভি বসানো যাবে। দিনের কিছু সময়ে তা বন্ধ রাখা যাবে। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনারকে প্রতি দিন মন্দির পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ভক্ত বা দর্শনার্থীর কাছ থেকে হাতে হাতে সেবায়েত, পূজারি বা অন্য কেউ অর্থ, গয়না নিতে পারবেন না। বিশেষ ভাবে তৈরি বন্ধ বাক্সে ভক্তদের দান বা প্রণামী দিতে হবে। |