খাতায় -কলমে রাজ্যের হাতে থাকা ফাঁকা জমির পরিমাণ ২ লক্ষ ৮০ হাজার একর। কিন্তু গত দশ মাস ধরে বিভিন্ন জেলা ও দফতর থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে ব্যবহারযোগ্য জমির পরিমাণ কোনও ভাবেই ৬৫ হাজার একরের বেশি হবে না (যা মোট জমির মাত্র ১০ ভাগ )। এর মধ্যেও বড় ও মাঝারি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় এক লপ্তে অনেকটা জমি পাওয়া যাবে কি না, তাই নিয়ে প্রশাসনেরই একাংশের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। ফলে শিল্পের জন্য জমির সমস্যা মেটানোর যে মূল লক্ষ্য সামনে রেখে রাজ্য প্রশাসন ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ তৈরির কাজে নেমেছিল, তা পূরণ হওয়া নিয়েই প্রশাসনের অন্দরে সংশয় তৈরি হয়েছে।
রাজ্যের ১৯টি জেলা ও ৬৫টি দফতরের হাতে ফাঁকা জমির পরিমাণ কত, তা নিয়ে গত দশ মাস ধরে রাজ্য জুড়ে তথ্য সংগ্রহ অভিযানে নেমেছিল রাজ্য। প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা যায়, মোট প্রায় ৬ লক্ষ ৩৬ হাজার একর জমির মধ্যে ফাঁকা জমির পরিমাণ ২ লক্ষ ৮০ হাজার একরের মতো।
কিন্তু ফাঁকা জমির সবটাই কি ব্যবহারযোগ্য? ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে ‘ব্যবহারযোগ্য’ জমির তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে যে ছবি উঠে এসেছে, তা দেখে সরকারি কর্তাদের চোখ কপালে উঠেছে। মহাকরণ সূত্রের খবর, জেলাগুলিতে কালেক্টরেটের হাতে থাকা ফাঁকা জমির মধ্যে মাত্র ৬১ হাজার একর জমি ব্যবহারযোগ্য। অর্থাৎ, এই পরিমাণ জমিতেই শুধু নির্মাণ কাজ করা যাবে। এর বাইরে সরকারের বিভিন্ন দফতরের হাতে যে ফাঁকা জমি রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ হিসেব এখনও না পাওয়া গেলেও পরিমাণটা ৪ হাজার একরের বেশি হবে না বলেই অভিমত অফিসারদের। সব মিলিয়ে, গোটা রাজ্যে ব্যবহারযোগ্য জমির পরিমাণ কোনওমতেই ৬৫ হাজার একর ছাড়াবে না বলেই জমি -বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
কিন্তু ফাঁকা জমির মধ্যে ব্যবহারযোগ্য জমির পরিমাণ এত কম কেন? সরকারের ওই মুখপাত্র জানান, জেলাগুলিতে ফাঁকা জমির বেশিরভাগে রয়েছে চর, খাল, জলাশয়, নদী -নালা। অনেক জমি শুধু সেচের কাজে ব্যবহার করা যায়। ফলে সেই সব জমি অন্য কোনও কাজে লাগানো যাবে না। তবে সঠিক পরিকল্পনা করলে চর বা খালের জমিও ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।
‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ তৈরি করতে গিয়ে প্রথমে চারটি বিষয় জানার উপর গুরুত্ব দেয় রাজ্যের ভূমি সংস্কার দফতর (মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই এই দফতর রয়েছে )। এগুলি হল, রাজ্যে সরকারের হাতে থাকা মোট জমির পরিমাণ কত? এর মধ্যে আইনি জটিলতায় কত জমি আটকে রয়েছে? কত জমি দখল হয়ে রয়েছে? এবং ফাঁকা জমির পরিমাণ কত? |
জমিকাহিনি |
জমি |
পরিমাণ |
শতাংশ |
মোট |
৬,৩৫,৬৫০ |
১০০ |
দখল |
২,৬৮,৬৫০ |
৪২ .২৬ |
মামলা |
৮৭,০০০ |
১৩ .৬৯ |
ফাঁকা |
২,৮০,০০০ |
৪৪ .৫ |
ব্যবহারযোগ্য |
৬৫,০০০ |
১০ .২৩ |
(ফাঁকা জমির অংশ) |
|
বিঃদ্রঃ : জমির পরিমাণ একরে |
|
নতুন সরকারের প্রথম ১০ মাসে বারবার তাগাদা দিয়ে শেষে যে তথ্য হাতে পায় মহাকরণ, তাতে দেখা যায় :
• রাজ্যে মোট জমির পরিমাণ কমবেশি ৬ লক্ষ ৩৫ হাজার একর।
• এর মধ্যে আইনি জটিলতায় আটকে ৮৭ হাজার একর জমি।
• দখল করা জমির পরিমাণ প্রায় ২ লক্ষ ৬৯ একর।
• এবং ১৯টি জেলায় কালেক্টরেটের হাতে ফাঁকা ‘খাস’ জমি আছে আনুমানিক ২ লক্ষ ৬০ হাজার একর ও দফতরগুলির হাতে ২০ হাজার একর। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে ফাঁকা জমির পরিমাণ ২ লক্ষ ৮০ হাজার একর।
এর পরে প্রশ্ন ওঠে, ফাঁকা জমির পুরোটাই কি শিল্পের জন্য ব্যবহার করা যাবে? এর জবাব খুঁজতেই ফেব্রুয়ারি মাসে ‘জমির চরিত্র ও ব্যবহারযোগ্যতা’ জানার জন্য নতুন করে জেলা ও দফতরগুলির কাছে চিঠি পাঠানো হয়।
মহাকরণ সূত্রের খবর, জেলাগুলির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলাগুলিতে ব্যবহারযোগ্য জমি রয়েছে প্রায় ৬১ হাজার একর। যার মধ্যে বেশি জমি রয়েছে দার্জিলিং, বাঁকুড়া, বর্ধমান ও পুরুলিয়ায়। কলকাতার কাছাকাছি জেলা দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া ও হাওড়ায় এ ধরনের জমির পরিমাণ কম। দফতরগুলি এখনও রিপোর্ট দেয়নি। এক মুখপাত্র জানান, দফতরগুলির হাতে ফাঁকা জমি রয়েছে মাত্র ২০ হাজার একর। তার সামান্যই (বড়জোর চার হাজার একর ) ব্যবহারযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্কের’ এই সর্বশেষ তথ্য মুখ্যমন্ত্রীর হাতে দিয়েছে ভূমি দফতর।
এ বার প্রশ্ন, ব্যবহারযোগ্য ৬১ হাজার একর জমিতেই কি তা হলে শিল্প করা যাবে? ওই মুখপাত্রের কথায়, এর মধ্যে এক লপ্তে অনেকটা জমি পেলে তা সম্ভব হতে পারে। তবে সেই সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। |