বিডিও-কে হুমকি দেওয়া ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে প্রাইমারি স্কুলের এক প্রৌঢ় প্রধান শিক্ষককে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ সারা রাত থানার বেঞ্চে বসিয়ে রাখলেন। বড়জোড়ার স্কুলডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই প্রধান শিক্ষকের নাম পরেশনাথ তিওয়ারি। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ২০০ টাকা বন্ডে অন্তর্বর্তী জামিন দেন। স্কুলে মিড-ডে মিলের চাল মজুত থাকায় পরেশবাবু বাড়তি চাল নিতে চাননি। বড়জোড়ার বিডিও-র সঙ্গে বুধবার তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে গণ্ডগোল বাধে বলে অভিযোগ। বিডিও ক্ষমতা দেখিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে বড়জোড়ার কিছু প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক এ দিন বড়জোড়ার বিডিও ও স্থানীয় অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে স্মারকলিপি দেন। এমন কি তাঁরা মিড-ডে মিলের দায়িত্বও আর নেবেন না বলে দাবি জানান। পুলিশ জানিয়েছে, বড়জোড়ার বিডিও দেবারতি সরকারকে তাঁর অফিসে বুধবার পরেশবাবু সরকারি কাজে বাধা দেন ও হুমকি দেন বলে বিডিও পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগেই পরেশবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ঘটনার সূত্রপাত, ওই স্কুলে মিড-ডে মিলের চাল সরবরাহ করা নিয়ে। স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, মিড-ডে মিল রান্নার জন্য প্রায় সাড়ে তিন বস্তা চাল মজুত রয়েছে। মিড-ডে মিল দফতরের আধিকারিকেরা স্কুল পরিদর্শনে এসে মজুত চাল দেখে তাঁদের মার্চ ও এপ্রিল মাসে চাল নিতে নিষেধ করেন। প্রধান শিক্ষক জানান, ওই দু’মাসের চাল না দেওয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী তিনি ফেব্রুয়ারি মাসে বিডিও-কে লিখিত ভাবে জানিয়ে দেন। এরপরেও বুধবার রেশন ডিলার স্কুলে মিড-ডে মিলের জন্য চার বস্তা চাল পাঠান। তাঁর আপত্তি রেশন ডিলার মানেননি। |
পরেশবাবু বলেন, “দুপুরে ব্লক খাদ্য পরির্শকের কাছে চাল পাঠানোর কারণ জানতে গেলে তিনি আমার চিঠি পাননি বলে জানান। তিনিই আমাকে বিডিও-র কাছে যেতে বলেন।” তাঁর অভিযোগ, “বিডিও-কে ঘটনার কথা জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে বেরিয়ে যেতে বলেন। তাঁর দুব্যর্বহারের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব বলায় তিনি কর্মীদের দিয়ে আমাকে ঘণ্টা খানেক অফিসের ভিতরে আটকে রাখেন। পরে পুলিশ এসে থানায় নিয়ে গিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়।” বড়জোড়ার রায় কলোনিতে তাঁর বাড়ি। তাঁর অভিযোগ, “সন্ধ্যায় পুলিশ এসে বাড়ি থেকে আমাকে থানায় তুলে নিয়ে যায়। পুলিশের কাছে জানতে পারি, বিডিও-র অভিযোগে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সারা রাত থানার বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়।”
বিডিও বলেন, “ওই প্রধান শিক্ষকের চাল না পাঠানোর আবেদন আমি ব্লক খাদ্য পরিদর্শককে পাঠিয়েছিলাম। এ ক্ষেত্রে আমাদের কোনও খামতি ছিল না। কিন্তু ওই প্রধান শিক্ষক উল্টে আমার সঙ্গে অশালীন আচরণ করে গালিগালাজ করেন। জেলে পাঠাবেন বলে হুমকিও দেন। অফিসের অন্য আধিকারিকদের সামনেই এসব ঘটেছে।” তিনি জানান, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ায় ও হুমকি দেওয়ায় পুলিশের কাছে তিনি অভিযোগ জানান। বড়জোড়ার খাদ্য পরিদর্শক কৌশিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই প্রধান শিক্ষকের চিঠি আমার দফতরে এলেও আমার কাছে আসেনি। তাই তাঁর স্কুলে চাল চলে গিয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে তিনি আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত দুব্যর্বহার করেছেন।” যদিও প্রধান শিক্ষক দুব্যর্বহার করার অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “স্কুলে বাড়তি চাল এলে পোকা ধরে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই নিতে চাইনি। কিন্তু এ জন্য এত দুর্ভোগ পোহাতে হবে ভাবতে পারিনি।” ঘটনার কথা জেনে বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রিঙ্কু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরেশবাবু কয়েক মাস পরেই অবসর নেবেন বলে শুনেছি। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলা যেত। তা না করে এ ভাবে পুলিশ পাঠিয়ে গ্রেফতার করিয়ে অপদস্থ করার মানে কী?”
বড়জোড়ায় প্রতিবাদ মিছিল করে কিছু প্রাইমারি শিক্ষক বিডিও ও অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে স্মারকলিপি দেন। তাঁদের তরফে পাহাড়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজয় চৌধুরী ও পিংরুই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত মণ্ডলের অভিযোগ, “সরকারি চাল যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য পরেশবাবু বিডিও-র কাছে গিয়েছিলেন। উল্টে বিডিও তাঁকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসালেন। আমরা আর মিড-ডে মিলের দায়িত্ব নিতে চাই না।” |