|
|
|
|
বিডিও ঘেরাও |
নন্দীগ্রামেই প্রকাশ্যে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
দলের দখলে থাকা কিছু পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির তদন্ত দাবি করল তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের অন্য গোষ্ঠী। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম ১-এর বিডিওকে তাঁরা বৃহস্পতিবার ওই দাবি তুলে ঘেরাও করেও রাখেন। ‘পরিবর্তনের আঁতুরঘর’ নন্দীগ্রামেই এই ঘটনার পরে শাসকদলের ‘শৃঙ্খলা’ নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। এ ঘটনায় পঞ্চায়েত ভোটের আগে নন্দীগ্রামে তৃণমূলের কোন্দলও ফের প্রকাশ্য এসে পড়ল। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেনের প্রতিক্রিয়া, “বিষয়টি নজরে এসেছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বেআইনি ভাবে সরকারি জমির গাছ কেটে বিক্রি এবং অনিয়মের অভিযোগে ক’দিন আগেই নন্দীগ্রামের গোকুলনগর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান অশোক মণ্ডলের নামে এফআইআর করেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের বনাধিকারিক। তার জেরে অশোকবাবুরই নেতৃত্বে কয়েকশো তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রাম ১-এর বিডিওকে দুপুর তিনটে থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ঘেরাও করে রেখে বিক্ষোভ দেখান। সেই সময়ে নন্দীগ্রামে তৃণমূলেরই পরিচালিত একাধিক পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে একই ধরনের অনিয়মে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তারও কৈফিয়ত চাইলেন অভিযুক্ত প্রধান ও তাঁর অনুগামীরা। শেষ পর্যন্ত অন্য পঞ্চায়েতগুলি নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়ে ঘেরাও-মুক্ত হলেন বিডিও আরশাদ জামাল হাসমি।
কার্যত বিরোধীহীন নন্দীগ্রামে দলেরই একাংশ অন্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ তোলায় বিড়ম্বনায় পড়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। বস্তুত, গোকুলনগরের প্রধান অশোকবাবুর বিরুদ্ধেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল দলের মধ্যে। ছ’জন তৃণমূল কর্মী এমনকী হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টের নির্দেশে জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি ১৩ এপ্রিল অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীদের শুনানিতে ডাকেন। তার পরেই তিনি বনাধিকারিককে ওই প্রধানের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেন। গত রবিবার সেই এফআইআর করা হয় নন্দীগ্রাম থানায়।
গাছ কাটা ও বিক্রির ক্ষেত্রে বন দফতরের আগাম অনুমতির প্রশ্নে ‘কিছু অনিয়ম’ স্বীকার করেও অশোকবাবুর অভিযোগ, দলের নেতৃস্থানীয় কেউ কেউ তাঁকে ‘ফাঁসানো’র চেষ্টা করছেন। গোকুলনগরের আগের তৃণমূল প্রধান জহরলাল করকেও অনিয়মেরই অভিযোগে সরতে হয়েছিল। সে সময়ে অশোকবাবুদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন জহরলাল। আর এ বার জহরবাবু, পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় কর্মাধ্যক্ষ স্বদেশ দাসের নাম করে চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন অশোকবাবু। তাঁর দাবি, “সামসাবাদ বা অন্য কয়েকটি পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে গাছ কাটা সংক্রান্ত একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তা হলে প্রশাসনের তরফে কেন তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?”
সামসাবাদ-সহ নন্দীগ্রামের সব পঞ্চায়েতই তৃণমূলের দখলে, তিনি কি তা হলে দলীয় সতীর্থদের কাজকর্মের স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন? সরাসরি জবাব না দিয়ে অশোকবাবুর বক্তব্য, “আইন সবার ক্ষেত্রেই সমান হওয়া উচিত। আমিই কেবল চক্রান্তের শিকার।” অন্য পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে, এই দাবিতেই বৃহস্পতিবার বিডিও-র সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ব্লক অফিসের কর্মচারীদেরও আটকে রাখা হয়। ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পালের বক্তব্য, “গোকুলনগরের মাত্র একটি মৌজায় গাছ কাটার আগাম অনুমতি নেওয়া হয়নি। আগে এ নিয়ে বিডিও-র কাছেও অভিযোগ হয়েছিল। সে সময়ে বিডিও কিন্তু কোনও বিরুদ্ধ-রিপোর্ট দেননি। প্রশাসনের একাংশ গোকুলনগরের প্রধানের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা করছে।” কিন্তু, শাসক তো এখন তৃণমূলই। তা হলে? জবাব দেননি মেঘনাদববাবু। অন্য পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে গোকুলনগরের প্রধানের তোলা অভিযোগ নিয়েও মন্তব্য করতে চাননি ব্লক তৃণমূল সভাপতি। জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকির প্রতিক্রিয়া, “সবারই বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার আছে। তবে, ওই পঞ্চায়েতের (গোকুলনগর) ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্দেশে শুনানির পরেই যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়া হয়েছে। এখন পুলিশ তদন্ত করবে।” |
|
|
|
|
|