খাসজঙ্গলে ফের লিজে জমি
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-স্থাপনে উদ্যোগ
মেদিনীপুর শহর-সংলগ্ন খাসজঙ্গল এলাকায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-স্থাপনে ফের উদ্যোগী হল জেলা প্রশাসন। আগে এক দফায় এখানে প্রায় সাড়ে ১৩ একর জমিতে ক্ষুদ্রশিল্প গড়ে উঠেছে। দ্বিতীয় দফায় আরও প্রায় ২৫ একর জমি উৎসাহী উদ্যোক্তাদের লিজে দিতে চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা-প্রশাসন। ইতিমধ্যে ওই পরিমাণ জমি শিল্পে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলাও হয়েছে। ওই ২৫ একর জমিতে ১০০টিরও বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠবে বলে প্রশাসনের আশা। কর্মসংস্থান হতে পারে কয়েক হাজার বেকার যুবক-যুবতীর। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত’র বক্তব্য, “খাসজঙ্গল এলাকায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনে উৎসাহীদের দ্বিতীয় পর্যায়ে জমি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” জানা গিয়েছে, এ জন্য উৎসাহীদেরই প্রথমে জেলা-প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে দিতে হবে প্রকল্প-রিপোর্ট। সবদিক খতিয়ে দেখেই শিল্প-স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে জেলা প্রশাসন।
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
বছর আটেক আগে মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন এই খাসজঙ্গল এলাকায় গড়ে ওঠে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ-সেন্টার। তৎকালীন জেলাশাসক এম ভি রাওয়ের উদ্যোগে এখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-স্থাপনের জন্য জায়গা চিহ্নিত করা হয়। খাসজঙ্গলে বেশ কিছুটা পরিমাণ সরকারি খাসজমি রয়েছে। তার মধ্যে থেকেই প্রথম পর্যায়ে ১৩.৫৯ একর জমি শিল্প-স্থাপনের উপযোগী করে তোলা হয়। রাস্তা, সীমানা-প্রাচীর তৈরি হয়। পরে সেই জমি বিভিন্ন সংস্থাকে লিজে দেওয়া হয়। এখন সেখানে ২৬টি ছোট ও মাঝারি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে মশারি তৈরির কারখানা রয়েছে ৪টি, আটা উৎপাদনের কারখানা রয়েছে একটি, ফাইবারের দরজা-সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরির কারখানা রয়েছে একটি। এ ছাড়া আইসক্রিম, চকোলেট, পাইপ, পেরেক, সাইকেলের বিয়ারিং তৈরিরও কারখানা রয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় দু’হাজার মানুষ এখানে কাজ করেন।
কিন্তু আট বছর আগে শহর-সংলগ্ন এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ-সেন্টার গড়ার ভাবনাই বা এল কী ভাবে ? প্রশাসন সূত্রে খবর, সে সময়ে অনেক বেকার যুবক ছোট শিল্প গড়তে চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন। তার প্রেক্ষিতেই গ্রোথ-সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা তৈরি হয়। শিল্প করতে হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হতে হবে। তাই খাসজঙ্গল এলাকাটিই, শহর লাগায়ো হওয়ায়, চিহ্নিত করা হয়। পাশেই রয়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এক দিকে রয়েছে রেললাইন। এখন এখানে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর উদ্যোগ চলছে। এই পর্যায়ে ২৫.২৯ একর জমি শিল্প-স্থাপনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। রাস্তা, সীমানা-প্রাচীরও তৈরি হয়েছে। ৭ থেকে ২০ ডেসিমেল করে জায়গা ভাগ করে এক-একটি প্লট তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪০টি প্লট রয়েছে। এই সব প্লটে ১০০টিরও বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠবে বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের আশা। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “অনেকেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়তে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। আমরাও নানা ভাবে তাঁদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। এর ফলে এক দিকে যেমন শিল্প গড়ে উঠবে, অন্য দিকে কর্মসংস্থানও হবে। বেকার যুবক-যুবতীরা কাজ পাবেন।” এমনিতেই এখন জেলায় ব্যবহারের উপযোগী খাস-জমির পরিমাণ কম। ল্যান্ড-ব্যাঙ্ক তৈরি করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, জেলায় যেখানে খাতায়-কলমে অব্যবহৃত খাসজমি পড়ে থাকার কথা ৩৯ হাজার ৬১৮ একর, সেখানে বাস্তবে ব্যবহার-উপযোগী খাসজমি পড়ে রয়েছে মাত্রই ১ হাজার ৭৬৩.৫৫ একর! প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে পরিমাণ খাসজমি পড়ে থাকার কথা তার ৭৫ শতাংশই চলে গিয়েছে বেআইনি দখলদারদের হাতে। কিছু জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আর বাকি জমিতে রয়েছে খাল-বিল-ঝিল। ফলে শিল্পের জন্য জেলায় তেমন জমিই নেই। বড় শিল্প করতে হলে উদ্যোগপতিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগেই জমি কিনতে হবে। এ দিকে, ব্যবহার-উপযোগী যে খাসজমি পড়ে রয়েছে, তা-ও রয়েছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। কোথাও ৫ একর, কোথাও ১০ একর, আবার কোথাও এক একর বা তারও কম! কিন্তু, বড় শিল্পের জন্য অন্তত ১০০ একর করে জমি লাগেই। এই পরিস্থিতিতে জেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে উৎসাহীদের উৎসাহ জোগানোয় বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.