সম্পাদকীয় ২...
অসহিষ্ণু
প্রথমত, একটি গ্রামের ঘটনা। বিদ্যালয়ে মোবাইল ফোন লইয়া গিয়াছিল শিক্ষার্থীটি। ধরা পড়িবার পরে বস্তুটি তাহার নিকট হইতে কাড়িয়া লওয়া হয়। অতঃপর সে একটি একনলা বন্দুক এবং গুলি লইয়া বিদ্যালয়ে উপস্থিত। সময়মতো তৎপর হওয়ার ফলে বৃহত্তর কোনও বিপত্তি ঘটে নাই। অতঃপর আসিবে রাজ্য তো বটেই, দেশেরও একটি মান্য শিক্ষায়তন শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি, সংক্ষিপ্ত নামে ‘বেসু’। সেই শিক্ষায়তনের কিছু শিক্ষার্থী গভীর রাত্রে একটি লঞ্চঘাটে বসিয়া মদ্যপান করিতেছিল। স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করিলে তাহাদের সহিত বচসা হয়। সঙ্গে ইঁহাদেরই কিছু সহপাঠী আসিয়া যোগ দেয়। ভাঙচুর চলে। পুলিশ আসিলে পুলিশদেরও মারধর করা হয় বলিয়া অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা লইয়াছেন। রাজ্যের দুই প্রান্তের দুইটি ঘটনা। গভীরে একটি যোগসূত্র বিদ্যমান। বিদ্যায়তনের আবহ বদলাইতেছে। একটি নিতান্তই গ্রামীণ বিদ্যালয়। অভিযুক্ত পড়ুয়া জনৈক দিনমজুরের সন্তান। অন্য দিকে, ধরিয়া লওয়াই যায়, শিবপুরের ‘বেসু’-র অভিযুক্ত পড়ুয়াগণ সেই গ্রামীণ পড়ুয়াটির তুলনায় সমাজের অনেক সচ্ছল, বিত্তবান পরিবার হইতে আগত। অথচ, উভয় ক্ষেত্রেই ক্রোধ এবং স্বেচ্ছাচারের নিদর্শনটি স্পষ্ট। স্পষ্ট ছাত্র-যুবদের সহিষ্ণুতার অভাব। শিক্ষায়তনে অন্যায় করিব। বা, দুরাচারি হইব। অথচ, কেহ প্রতিবাদ করিলে শিক্ষা দিবার ভঙ্গিতে কখনও আগ্নেয়াস্ত্র লইয়া যাইব, বা দল বাঁধিয়া ঝামেলা বাধাইব, ইহা কোনও পথ হইতে পারে না।
অথচ, কার্যক্ষেত্রে বারংবার দেখা যাইতেছে, ইহাই উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীদের পথ। নিজস্ব বক্তব্য পেশ করিবার পথ। ধরা পড়িলে ‘প্রতিবাদ’ জানাইবার পথ। ‘বেসু’ তাহার অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছে। নজিরবিহীন রূপে কঠোর। এই ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতার ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণই বাঞ্ছনীয়। কারণ, বিশৃঙ্খলা বাড়িতে থাকিলে তাহা পচনের ন্যায় সমূহ পরিকাঠামোটিকেই বিপন্ন করিতে পারে। অন্য দিকে, প্রশাসনিক স্তর ছাড়াও সামাজিক স্তরে এই সমস্যার এক ধরনের মোকাবিলা করা প্রয়োজন। সামাজিক স্তর বলিতে প্রথমে পারিবারিক বৃত্ত হইতে অতঃপর পরিবারের বাহিরে সমাজের অন্য নানা স্তর। ‘অন্যায়’ কাহাকে বলে, কোন কাজ কাহার পক্ষে ‘অন্যায়’, কোন কাজটি ‘অন্যায়’ তাহা নির্ধারণই বা কে করিবে, এমন নানাবিধ কূটকচাল উঠিয়া আসিতে পারে পণ্ডিতি সন্দর্ভে। প্রশ্ন হইল, শিক্ষায়তনের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নের উত্তরটি সহজ। শিক্ষায়তনের কিছু নির্ধারিত আচরণবিধি আছে। এমন কোনও জিনিস যাহা সেই বিধি ভঙ্গ করিতে পারে, তাহাই অন্যায়। শিক্ষায়তনে শিক্ষার্থীকে সেই বিধি মান্য করিতে হইবে। সমালোচনা হইলে বা তিরস্কার আসিলে তাহা খোলা মনে গ্রহণ করিতে হইবে। ইহাও এক প্রকার শিক্ষা। জরুরি শিক্ষা। এই সূত্রেই সামাজিক বৃত্তের ভূমিকাটি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এই শিক্ষা সহসা শিক্ষায়তন হইতে আসে না। প্রশাসনিক রজ্জু দিয়াও এই বিশেষ শিক্ষা প্রদান অসম্ভব। ইহার এক এবং অদ্বিতীয় উৎস পরিবার। এই জরুরি বোধটি যদি জীবনের প্রাথমিক পর্ব হইতে নানা স্তরে শিশুর ভিতরে জাগ্রত না করা হয়, তাহা হইলে পরবর্তী কালে সংকট বাড়িতেই থাকিবে। ইতিমধ্যেই, অসহিষ্ণুতার ব্যাধি নানা স্তরে মাথা তুলিয়াছে। নগর পুড়িলে দেবালয় বা শিক্ষায়তন, কিছুই অগ্নিগ্রাসের কবল এড়ায় না। প্রশাসন কঠোর হউক। সমাজও খেয়াল রাখুক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.