ট্যাক্সিহীন মহানগরে পর্যাপ্ত বাসও ছিল না, ছিল দুর্ভোগ |
মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ট্যাক্সি এবং বাস দুটোই থাকবে হাওড়া, শিয়ালদহ ও কলকাতা স্টেশন চত্বরে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ট্যাক্সি-ধর্মঘটের দিন কোনওটারই দেখা মিলল না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, তৃণমূল কংগ্রেস ধর্মঘটে সামিল হবে না। কিন্তু পরিবহণমন্ত্রী নিজে যে ট্যাক্সি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, তৃণমূল-নিয়ন্ত্রিত সেই সংগঠনের অধিকাংশ সদস্যও এ দিন পথে ট্যাক্সি নামাননি।
যদিও মহাকরণে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র দাবি করেন, “প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেন্স ইউনিয়ন ধর্মঘটে সামিল হয়নি।” তা হলে এ দিন তৃণমূল-নিয়ন্ত্রিত ট্যাক্সি ইউনিয়নের সদস্যদের গাড়ি চালাতে দেখা যায়নি কেন? মন্ত্রীর জবাব, “বিভিন্ন কারণে তাঁরা ট্যাক্সি চালাননি।” কলকাতা ও সংলগ্ন চার জেলার পুলিশও জানিয়েছে, এ দিন রাস্তায় ট্যাক্সি প্রায় চোখেই পড়েনি। |
‘পুলিশি জুলুমের’ প্রতিবাদে এবং ভাড়া বৃদ্ধি-সহ একাধিক দাবিতে বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটে সামিল হন ট্যাক্সিচালকেরা। এ দিনের ধর্মঘটে কাজ না হলে লাগাতার ধর্মঘটের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে ট্যাক্সিচালকদের ইউনিয়নগুলি। এ প্রসঙ্গে পরিবহণমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “সরকার জানে, কী করে এ সব হুমকির মোকাবিলা করতে হয়। ওরা ধর্মঘট করুক। আমরাও গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে বেকার যুবকদের মধ্যে বিলি করব।” মন্ত্রী আরও জানান, এই পরিকাঠামোয় গাড়ি চালানো সম্ভব না হলে ট্যাক্সির মালিক ও চালকেরা সরকারকে গাড়ির চাবি দিয়ে দিন। ধর্মঘটী মালিকদের সতর্ক করে মন্ত্রী এ দিন বলেন, “পারমিটে পরিষেবা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ধর্মঘটের কথা বলা হয়নি।”
এ প্রসঙ্গে ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি বিমল গুহ বলেছেন, “মন্ত্রী দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন। আইন বলছে, মন্ত্রী এ ভাবে গাড়ি বাজেয়াপ্ত করতে পারেন না।” সিটু-র পরিবহণ কর্মী ইউনিয়নের সম্পাদক সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পরিবহণমন্ত্রীকে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বসতে বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে। তিনি কথাই শুনছেন না।”
এ দিনের ধর্মঘটে হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশন এবং বিমানবন্দর থেকে গন্তব্যে পৌঁছতে চরম দুর্ভোগ হয় যাত্রীদের। পরিবহণমন্ত্রী দাবি করেছেন, হাওড়া, শিয়ালদহ ও কলকাতা স্টেশন এবং বিমানবন্দর থেকে এ দিন অনেক সরকারি বাস চলেছে। তবে বিমানবন্দরে সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাতে গোনা তিন-চারটি ট্যাক্সি পাওয়া গিয়েছে। বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে প্রি-পেড ট্যাক্সি বুথটি খোলা ছিল। কিন্তু সেখানে ট্যাক্সি পাওয়া যায়নি। এসি বাসগুলিই ছিল একমাত্র ভরসা। বেশি ভাড়ার বিনিময়ে কিছু গাড়ি পাওয়া গিয়েছে। এ দিন দুপুরে বেঙ্গালুরু থেকে বিমানে দুই ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় আসেন রঞ্জন দাশগুপ্ত। বলেন, “দশ বছর পরে কলকাতায় এলাম। ছোট ছেলের বয়স আট। এই প্রথম সে কলকাতায় এল। কিন্তু আজকের অবস্থার পরে ওদের দিকে তাকাতেও লজ্জা করছে।” রঞ্জনবাবুদের যাওয়ার কথা সল্টলেকে। লটবহর নিয়ে বিমানবন্দর থেকে বাস ধরার তোড়জোড় শুরু করেন তাঁরা।
ধর্মঘটের জেরে বৃহস্পতিবার দিনভর হাওড়া স্টেশন চত্বরও ছিল ট্যাক্সি-শূন্য। সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে সার দিয়ে ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে যে সব দূরপাল্লার ট্রেন এসেছিল, সেগুলির যাত্রীদের নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে আর কোনও ট্যাক্সি ফিরে আসেনি। পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দেখে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের জন্য সকাল ১০টা নাগাদ দু’টি সরকারি বাসের ব্যবস্থা করা হয়। অভিযোগ, বেলা ১১টার পর সেগুলিও উধাও হয়ে যায়।
দুপুর দেড়টা নাগাদ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হাওড়া স্টেশনে আসেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তিনি আসার পরই কলকাতা ট্রাম কোম্পানির দু’টি বাস ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে পৌঁছয়। মন্ত্রীর দাবি, হাওড়া ও শিয়ালদহে ট্রেনযাত্রীদের জন্য ১৫টি করে বাস দেওয়া হয়েছে। মাত্র ৪০ টাকা ভাড়ায় ভল্ভো বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, “খবর পেলাম হাওড়ায় হাজার হাজার যাত্রী ট্যাক্সি না পেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাই নিজেই চলে এলাম। দেখলাম, পরিস্থিতি অতটা খারাপ নয়। তবু আরও বেশি বাস ও লঞ্চ যাতে চালানো যায়, তার চেষ্টা করছি।” হাওড়া স্টেশনে দাঁড়িয়েই পরিবহণমন্ত্রী বিভিন্ন সরকারি পরিবহণ সংস্থাকে নির্দেশ দেন, যাতে বিকেল ৩টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক বাসের ব্যবস্থা করা হয়। |