ছেলেরা তৃণমূলে, বহিষ্কৃত দুই ফব নেতা
রাজ্যের মন্ত্রী এবং তৃণমূল নেতা জ্যেতিপ্রিয় মল্লিকের ‘ফরমান’ নিয়ে যাঁরা সমালোচনায় মুখর, তাঁদের শিবিরেও একই ঘটনা! জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেছেন, বিরোধী সিপিএমের সঙ্গে সামাজিক মেলামেশা চলবে না। সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূলের লোকজন সামাজিক সম্পর্ক রাখতে পারবেন না, কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না। জ্যোতিপ্রিয়বাবু ঘোষণা করেছেন মাত্র। আর বামফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক তেমনই মনোভাব হাতে-কলমে প্রয়োগ করে বসে আছে! ছেলেরা তৃণমূলে চলে গিয়েছেন, এই ‘অপরাধে’ হলদিবাড়ির দুই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে ফব।
দলীয় সূত্রের খবর, নেতা-সদস্যদের বাড়ির লোকজনদের একাংশের মধ্যে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ‘ঝোঁক’ দেখতে পাচ্ছেন ফব নেতৃত্ব। ‘বস্তুবাদী’ চিন্তাভাবনা থেকেই ওই প্রবণতা বাড়ছে বলে ফব নেতৃত্বের অভিমত। সেই জন্য তাঁরা কোচবিহার জেলা পর্যায়ে আলোচনায় বসে ঠিক করেছেন, প্রথমে ওই সব নেতা-সদস্যকে চিহ্নিত করে ‘সতর্ক’ করা হবে। তাতে কাজ না-হলে দল থেকে তাঁদের বার করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই হলদিবাড়ি ব্লকের দুই স্থানীয় নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এক জন দলীয় সদস্য তাঁর ছেলেকে তৃণমূল থেকে ‘ফিরিয়ে’ আনায় তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়নি।
ওই দুই বহিষ্কৃত নেতার নাম আব্দুল মজিদ সরকার ও প্রফুল্ল রায়। ফব সূত্রের খবর, মজিদ ১৯৯৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দলের পারমেখলিগঞ্জ শাখা কমিটির সম্পাদক ছিলেন। পাঁচ বছর হলদিবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। প্রফুল্লবাবু দলের দেওয়ানগঞ্জ শাখা কমিটির সদস্য ছিলেন। রাজ্যে ক্ষমতার ‘পরিবর্তনে’র পরে ওই দুই নেতার ছেলেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফব-র আর এক সদস্য দেবব্রত ভট্টাচার্যের ছেলেও তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তবে দেবব্রতবাবু তাঁর ছেলেকে তৃণমূল থেকে নিজের দলে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। দুই নেতাকে শাস্তি দেওয়ার ঘটনায় ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’য় হস্তক্ষেপের প্রশ্নই উঠেছে রাজনৈতিক শিবিরে। ব্যক্তি বা সমাজ জীবনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মানসিকতায় বাম ও অ-বাম, কোনও শিবিরেই কি তফাত নেই?
ফব নেতৃত্ব অবশ্য জ্যোতিপ্রিয়বাবুর ‘ফরমানে’র সঙ্গে তাঁদের দলীয় সিদ্ধান্তকে কোনও ভাবেই এক করে দেখতে রাজি নন। তাঁদের ব্যাখ্যা, ক্ষমতার ‘পরিবর্তনে’র পরে শাস্তিপ্রাপ্ত ওই দুই নেতার ছেলে ফব ছেড়ে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনে গিয়েছেন। এই ‘প্রবণতা’কে আটকাতে না-পারলে মুশকিল।
ফব-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয়ন গুহের ব্যাখ্যায়, “এর সঙ্গে সামাজিক বয়কটের কোনও সম্পর্ক নেই। নীতিগত ভাবে যে কোনও পরিবারের যে কেউ যে কোনও দল করতে পারেন। আমাদের দলেও এমন লোক আছেন। কিন্তু এই দুই নেতার ছেলেরা ফব-র ছাত্র সংগঠন ছেড়ে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনে যোগ দিয়েছেন। এটা তো নীতি বা ভালবাসা থেকে নয়!”
ফব নেতৃত্বের বক্তব্য, অতীতে কংগ্রেসের অজয় মুখোপাধ্যায়ের ভাই বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় সিপিআইয়ে বা বর্তমানে বিজেপি-র তথাগত রায়ের সহোদর সৌগত রায় তৃণমূলে থাকার দৃষ্টান্তের সঙ্গে হলদিবাড়ির ঘটনাকে ‘এক’ করে দেখা যায় না।
ফব-র ওই দুই স্থানীয় নেতার পরিবারের লোকজন গোড়া থেকেই তৃণমূল করতেন না। পরিস্থিতির ‘ফায়দা’ নিতে তাঁরা তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। তা ছাড়া, দলের কোনও সিদ্ধান্তের শরিক হচ্ছেন এক জন নেতা, বাড়িতেই আবার এমন কেউ আছেন যিনি সক্রিয় ভাবে সম্পূর্ণ বিপরীত শিবিরে বাস্তবে সংগঠন চালাতে এমন ঘটনা একেবারেই ‘সহায়ক’ নয় বলেও ফব নেতৃত্বের যুক্তি।
ফব-র হলদিবাড়ি শাখা কমিটির সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ সিংহের বক্তব্য, “এটা একেবারেই দলীয় বিষয়। ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়। যে দু’জন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাঁদের সতর্ক করা হয়। ছেলেদের বুঝিয়ে তৃণমূল থেকে নিয়ে আসতে বলা হয়। কিন্তু ওঁরা সেই নির্দেশ অমান্য করেছেন। তাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে ওঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।” ওই দুই নেতার ছেলেই প্রাপ্তবয়স্ক। তাঁরা কোন দল করবেন, তাঁদের নিজস্ব ব্যাপার। দুই ছেলেই যে রাজনীতির বিষয়ে তাঁদের বাবার সঙ্গে ‘সহমত’ হবেন, তা ভাবা হচ্ছে কেন? ইন্দ্রজিৎবাবুর জবাব, “ওই দু’জন নেতার ছেলে এখনও বাবার উপরে নির্ভরশীল। যে নেতা নিজের ছেলেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না, জনগণকে কেমন করে নিয়ন্ত্রণ করবেন? দলে ওই ধরনের নেতার স্থান নেই!”
ফব সূত্রের খবর, মজিদকে প্রথমে শো-কজ করা হয়। তার জবাবের সঙ্গে দলত্যাগের চিঠি দলীয় দফতরে পাঠিয়ে দেন তিনি। পরে তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। এক মাস আগে একই ভাবে বহিষ্কার করা হয় প্রফুল্লবাবুকে।
ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রফুল্লবাবু বলেন, “ছেলে কোন দল করবে, সেটা তার ব্যাপার। সে কথা না-শুনলে কী করতে পারি?” প্রায় একই সুরে মজিদ বলেন, “আমার ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক। তাকে জোর করে ফব করতে বলা সম্ভব নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.